উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলাম।
আমি শাহেদ জামাল সমান রাস্তায় উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলাম। অথচ আজকের দিনটা কত সুন্দর। সুন্দর ঝলমলে রোদ। রোদে তেজ নেই। বাতাস আছে। রাস্তায় জ্যাম নেই। অবশ্য কলাবাগানের এই রাস্তাটা সচারচর খুব একটা জ্যাম হয় না। সময় এখন ১১ টা ৪৫ মিনিট। উষ্টা খেয়ে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল টা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নখে রক্ত জমে গেছে। আমি ফুটপাতে বসে আছি। আমার পেছনে কলাবাগান মাঠ। এই দুপুর রোদেও কিছু ছেলে ক্রিকেট খেলছে। পায়ের আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে মনটা কিছুটা খারাপ হয়েছে। যেহেতু একটা গাছের পাতাও আল্লাহর আদেশ ছাড়া নড়ে না। আমি ব্যথাও কি তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় পেলাম? আমাকে ব্যথা দিয়ে আল্লাহর লাভ কি? মনে মনে বললাম, হে প্রভু আমার দিকে সুনজর দাও গো।
আমার মাথার উপর একটা জারুল গাছ।
আমার গায়ে রোদ লাগছে না। ফুটপাতে বসে থাকতে ভালো লাগছে। চারপাশ মন দিয়ে দেখছি। কেউ আমার দিকে লক্ষ্য করছে না। রাস্তার ঐ পাড়ে একলোক আইসক্রীম বিক্রি করছে। এক মেয়ে আইসক্রীম কিনছে। মেয়েটা দেখতে সহজ সরল সুন্দর। আসলে সব মেয়েরাই সুন্দর। সমস্যা হলো মেয়ে গুলো সাজতে গিয়ে নিজেকে উগ্র করে ফেলে। মেয়েটা আইসক্রীম বিক্রেতাকে একশ' টাকা নোট দিলো। একটা মাচো আইসক্রীম নিলো। বিক্রেতা বলল, আফা ভাংতি নাই। আরেকটা আইসক্রীম দিয়ে দেই? মেয়েটা বলল দিন। আমি মনে মনে ভাবছি মেয়েটার সাথে কেউ নেই। মেয়েটা একা। এই মেয়ে কি এখন একা একাই দুটা আইসক্রীম খাবে? নাকি সে বাসায় চলে যাবে? তার বাসা কি আসে পাশেই?
মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
বলল, নিন আইসক্রীম খান। মেয়েটার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। আমি আইসক্রীম নিলাম। মেয়েটা বলল, অনেকক্ষন ধরে আপনি আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। আপনার তাকানোর মধ্যে কুৎসিত ভাব ছিলো না। ছিলো সহজ সরলতা। আমি আর মেয়েটা আইসক্রীম খাচ্ছি। মেয়েটা অনেক সুন্দর। অথচ সাজেনি। সাজ বলতে শুধু চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। আর কপালে একটা ছোট্র টিপ। আমার ইচ্ছা করলো মেয়েটাকে বলি, তুমি আমার পাশে কিছুক্ষন বসে থাকো। আমি গল্প করবো, তুমি শুনবে। দেখো আমি ব্যথা পেয়েছি। নখে রক্ত জমে গেছে। তুমিই বলো ফাস্ট এইড দরকার কিনা? মেয়েটা বলল, বিড় বিড় করে কি বলছেন? যাইহোক, আমার আইসক্রীম খাওয়া শেষ। আমি যাচ্ছি। ভালো থাকবেন।
মেয়েটা হেটে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
কি সুন্দর করে হাঁটছে। এত সুন্দর করে এর আগে আমি কাউকে হাঁটতে দেখিনি। আমি মেয়েটার পেছন পেছন হাঁটতে থাকলাম। আশেপাশে কি হচ্ছে, না হচ্ছে সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই। মেয়েটা যেন হেমিলনের বাঁশিওলা। তীব্র নেশার মতো তার পেছনে পেছনে যাচ্ছি। টানা পনের মিনিটের মতো হাঁটলাম হয়তো। মেয়েটা একটা তিন তলা বাড়ির সামনে থামলো। আমাকে বলল, এটা আমাদের বাসা। আমরা তিন তলায় থাকি। আপনি আমাকে এগিয়ে দিলেন, এজন্য ধন্যবাদ। আমি বললাম, আমার নাম শাহেদ। শাহেদ জামাল। আপনার নাম কি? মেয়েটা সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল, আমার নাম নীলা। আমি চলে যাচ্ছিলাম। মেয়েটা বলল, দুপুর হয়ে গেছে। আপনি বাসায় আসুন। লাঞ্চ করে যাবেন। আল্লাহ হয়তো আজ আমার রিজিক এই বাসাতে রেখেছেন।
নীলাদের বসার ঘরে বসলাম।
মোটামোটি সাজানো গোছানো। নীলার বাবা এলেন। ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ষাট হবে। মাথায় অল্প কিছু চুল আছে। সেগুলো সবই সাদা। আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, এযুগের ছেলেমেয়েরা তো আদবলেহাজ ভুলেই গেছে। তুমি ভুলনি দেখে ভালো লাগছে। নীলা রান্না ঘরে রান্না করছে। ভদ্রলোক তার মেয়েকে ডাক দিলেন। বললেন, তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করো। শাহেদের নিশ্চয়ই ক্ষুধা লেগেছে। আমি বললাম, না চাচাজ্বী আমার ক্ষুধা লাগেনি। ভদ্রলোক বললেন, আজ যদি নীলার মা বেঁচে থাকতো তাহলে দেখতে, অনেক কিছু রান্না করতো। আমি বললাম, তার হাতের রান্না কেমন ছিলো? ভদ্রলোক বললেন, দারুন। আমি বললাম, উনি গরুর মাংসটা কেমন রান্না করতেন? নীলার বাবা বললেন, দিলে তো মনটা খারাপ করে। তার মতো করে গরুর মাংস এই শহরে আর কেউ রান্না করতে পারতো না। তিনি আবার নীলাকে ডাক দিলেন। বললেন, মাছ নয় তুমি মাংস রান্না করো। সাথে পোলাউ। ফ্রিজে ইলিশ মাছ থাকলে সেটা ভাজো।