somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

হায় তোফাজ্জল!

২৪ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তোফাজ্জল মিয়ার একটাই দুঃখ-
সে তার বাবার চল্লিশা করতে পারলো না। তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই, যে বিরাট ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করবে। হাজার হাজার লোক খাওয়াবে। জাঁকজমক অনুষ্ঠান করবে। কোনো একটা উপলক্ষ্য পেলে তোফাজ্জল মিয়াঁ দেখিয়ে দিতো লোকজনদের তার কত টাকা হয়েছে। কত লোকজন বলাবলি করে, অমুকের বাড়িতে চল্লিশা খেয়েছিলাম। সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। অমুকের মেয়ের বিয়ে খেয়েছিলাম, কত রকমের না খারার ছিলো। আজও লোকের মুখে মুখে সেই সব চল্লিশা আর বিয়ের বাড়ির খাবারের কথা শোনা যায়। কিন্তু তোফাজ্জল মিয়ার ভাগ্য খারাপ। সে কোনো সুযোগ পাচ্ছে না লোকজনদের দেখনোর।

তোফাজ্জল মিয়ার একটা চল্লিশা করার সুযোগ ছিলো।
তার বাবার বয়স প্রায় আশি। এখন মরে, তখন মরে অবস্থা। কানে ঠিক করে শুনে না, চোখেও ভালো দেখে না। দাঁত প্রায় সব গুলোর পড়ে গেছে। ঠিক করে কথা বলতে পারেন না। চলাফেরায় অক্ষম। তোফাজ্জল বাপকে দেখে মোটামোটি খুশি। বুড়া এবার ঠিক মরবে। সে একটা বিরাট চল্লিশার আয়োজন করতে পারবে। কিন্তু বাপ মরে না। প্রানবায়ু বের হয় না। একদিন তোফাজ্জল মিয়াঁ রেগেই গেলো তার বাবার উপর। বলল, শালা বুড়া তুমি মরো না ক্যান? কত শখ আমার, তুমি মরলে বিরাট করে চল্লিশা আয়োজন করবো। রেগেমেগে তোফাজ্জল বাপকে, মারতে গেলো। হারামজাদা বুড়া আজ তোকে আমিই মেরে ফেলব। বাড়ির লোকজন তোফাজ্জলকে থামালো।

তোফাজ্জল ঘোষনা করলো-
আমার বাপ শালার মৃত্যুর সংবাদ প্রথম যে দিবে তাকে আমি দশ হাজার টাকা বকশিস দিবো। দেখা যায় তোফাজ্জল মিয়ার বাপ দিন দিন সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সে এখন একাএকা বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে থাকে। রোদ পোহায়। মাঝে মাঝে মাথা নাড়িয়ে গুনগুন করে গান গায়। অন্যদিকে একদিন দেখা গেলো তোফাজ্জল মিয়াঁ সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায়। খুব ব্যথা পায় মাথায়, কোমরে। ডান পা মচকে যায়। ডাক্তার রোগী দেখে বলল, তোফাজ্জল মিয়ার অবস্থা ভালো না। মনে হয় সে তার বাবার চল্লিশা করতে পারবে না। মনে হয় তার'ই চল্লিশা করতে হবে। বাড়ির সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো ডাক্তারের কথা শুনে। তোফাজ্জলের বয়স মাত্র চল্লিশ। জীবনে তার এখনও অনেক কিছু বাকি আছে।

অতি অল্প বয়সেই তোফাজ্জল পেকে গিয়েছিলো।
বিদ্যাবুদ্ধি নেই। আছে শুধু মদ ও নারীর নেশা। মদ ও নারী করতে করতে সে জীবনে আর ভালো কিছুর ছোঁয়া পায়নি। স্নেহ, মায়া মমতা এসব সম্পর্কে তার কোনো ধারনা নেই। সে জানে শুধু টাকা ছড়াতে পারলে কিছু লোক সব সময় ঘিরে থাকে, নানা রকম খাতির। যত টাকা ছড়াও, তত বেশি খাতির। যাইহোক, সন্ধ্যায় তোফাজ্জলের জ্ঞান ফিরলো। সে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে- তার স্ত্রী তার পাশে বসে আছে। সে তার স্ত্রীকে দেখে রেগে গেলো। বলল, দেখিস মাগী তোর তেজ ভাঙবো। আমি আবার বিয়ে করবো। আমার বাচ্চা চাই। ছেলে বাচ্চা। নইলে আমার এত এত টাকা, ধন সম্পত্তি কে খাবে? স্ত্রী বলল, এসব সম্পত্তি তো তুমি কিছু করোনি। এগুলো সব তোমার বাবা করেছে। তোফাজ্জল মিয়ার ইচ্ছা করছে স্ত্রীকে একটা লাথথি দিবে। কিন্তু পায়ে ব্যান্ডিজ।

সে রাতেই তোফাজ্জল মিয়াঁ মারা গেলো।
তার স্ত্রী হাফ ছেড়ে বাচলো। একটা মদখোর মরছে ভালো হয়েছে। নারীদের সম্মান দিতে জানে না। নিজের শারীরিক সমস্যা অথচ দোষ দেয় স্ত্রীর উপর। ভোরবেলা তোফাজ্জল মিয়াকে কবর দেওয়া হলো। দেখতে দেখতে চল্লিশ দিন প্রায় এসে গেলো। তোফাজ্জল মিয়ার বাপ ঘোষনা করলো- আমার ছেলের চল্লিশা খুব ধুমধাম করে করবো। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষ খাবে। যে যত পারে খাবে। গানবাজনার আয়োজন করো। এবং যারা খেতে আসবে, এদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদের একটা করে লুঙ্গি দেওয়া হবে। মহিলাদের দেওয়া হবে একটা করে শাড়ি। এখানেই শেষ না, আরো আছে। সবাইকে এক হাজার করে নগদ অর্থও দেওয়া হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×