কয়েকদিন আগের কথা।
ইফতারি শেষ করেছি। ভাবলাম বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে আসি। আমার এলাকার পরের এলাকায় আড্ডা দিতে গেলাম। কয়েকজন বন্ধু মিলে চা খাচ্ছি আর বিশ্বসাহিত্য নিয়ে আলাপ করছি। তখন দেখলাম একদল ছেলে মারামারি করছে। ছেলে গুলোর বয়স বেশি না। ১৫/১৬ হবে। দুই গ্রুপ তুমুল মারামারি করছে। তাদের মুখের ভাষা ভয়ানক খারাপ। একজনের হাতে হকিস্টিক, একজনের হাতে চাপাতি। দেখুন অল্প বয়সী ছেলেদের হাতে অস্ত্র! দেখুন তাদের হিংস্রতা। ব্যস্ত রাস্তায় মারামারি করছে। কত সাহস তাদের! এদের বাপ মা কই?
ঢাকা শহরের প্রতিটা এলাকায় যেমন মাদক পাওয়া যায়,
তেমনি প্রতিটা এলাকায় কিশোর গ্যাং রয়েছে। এবং এরা ছাত্রলীগের মতোই ভয়ঙ্কর। এদের কোনো মায়াদয়া নাই। ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর। এদের প্রত্যেকের হাতে স্মার্ট ফোন। এটা সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি দেখতে পছন্দ করে। মুভির অনুকরণে জীবনযাপন করতে চেষ্টা করে। অল্প বয়সেই এরা প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে। এই কিশোর গ্যাং দুটা কারনে মারামারি করে সবচেয়ে বেশি। এক, প্রেমিকাদের জন্য। দুই, নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য। অন্যের কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য। এদের আছে তথাকথিত বড় ভাই। এই বড় ভাইরা তাদের সাহস দেয়। ভরসা দেয়। রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে কিশোর গ্যাং ভালো ভূমিকা রাখে।
আমাদের পাশের বাসার ছাদের ঘটনা বলি।
সেখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ টাকা অল্প বয়সী ছেলে আসে। সব গুলোই স্কুল পড়ুয়া। তাঁরা ছাদে গিয়ে একের পর সিগারেট খায়। মোবাইলে নোংরা ভিডিও দেখে। তাঁরা এক লাইন কথা বললে সেখানে দুটা নোংরা গালি থাকে। চিৎকার দিয়ে কথা বলে। ভুল সুরে হিন্দি গান গায়। গাঁজা খায়। ঘুমের ট্যাবলেট খায়। আচ্ছা, এদের বাপ মা কই? ছেলে জন্ম দিয়েছে, কিন্তু কেন তাঁরা ছেলের খোজ খবর রাখেন না। এইসব অল্প বয়সী ছেলের ভবিষ্যৎ কি? ওদের বাপ মাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ। এই কিশোর গ্যাং গলির মোড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়। তাদের কিছু বলার সাহস কারো নেই। যে বলবে তার কপালে শনি আছে।
আমাদের এলাকার কিশোর গ্যাং খুব শক্তিশালী।
এদের মধ্যে কয়েকজন ইয়াবার ব্যবসা করে। তাদের অনেকের বাইক আছে। তাদের প্রত্যেকের গার্ল ফ্রেন্ড আছে। এই কিশোর গ্যাংদের লজ্জা শরম কম। তাদের মধ্যে কোনো ভয় নেই। এরা ওপেন সবার সামনে সিগারেট খায়। অন্যায়টাই তাদের কাছে নিয়ম। কয়েকদিন পর পরই আমাদের এলাকার কিশোর গ্যাং মারামারি করে। তাদের গ্রুপের কারো সাথে কোথাও কোনো সমস্যা হলেই তাঁরা হকিস্টিক, চাপারি, স্টাম্প, লাঠি নিয়ে বের হয়ে যায়। অল্প বয়সী পোলাপান অথচ কি বাজে সাহস! কোনো ভয় ডর নেই। কোনো রহম নেই। এদের সাথে ছাত্রলীগের কোনো পার্থক্য নেই।
আমার এক আত্মীয়'র তিন ছেলে আছে।
তিনটাই সন্ত্রাস। ভয়াবহ সন্ত্রাস। থাকে, মিরপুর। কিন্তু তাদের আড্ডা খিলগাতে। এরা সারাদিন মারামারি করে। চুরী করে, ছিনতাই করে। পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আবার ক'দিন পর বের হয়। আবার মারামারি, কাটাকাটি করে। কিশোর গ্যাংদের তৈরি করেছে এই নষ্ট সমাজ। তবে সবচেয়ে বেশি দায় তাদের পিতা মাতার। তাঁরা শুধু জন্ম'ই দিয়েছেন। দেখভাল করেন নি। এদের বাবা মায়েরও শাস্তি হওয়া উচিত। আমি হিংস্রদের ভয় পাই। আমি অমানবিক মানুষদের ভয় পাই। আমি এই প্রজন্মকে ভয় পাই। মানুষ এত অমানুষ হবে কেন? কেন তাদের মধ্যে মানবতা থাকবে না! দুঃখজনক।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:০৫