ছবিঃ গুগল।
ইসলামে সব কিছুর জন্য দোয়া আছে।
নতুন জামা পড়ার আগে দোয়া আছে। সহবাস শুরু করার দোয়া আছে। অসুস্থ রোগী দেখতে যাওয়ারও দোয়া আছে। হুজুররা বলেন, আল্লাহর করুনা পেতে হলে দোয়ার কোনো বিকল্প নাই। নিজের শরীরের পোশাক খুলে রাখার সময় বদ জিন বা দুষ্ট শয়তানের আক্রমণ হতে পারে। এ কারণে নবিজি বলেছেন, পোশাক খুলে রাখা বা পরিবর্তন করার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে তা করা। যাতে শয়তান বা বদ জিনের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এক হাদীসে বলা হয়েছে- রাতে ঘুম না এলে 'আল্লাহ আল্লাহ' বলে জিকির করলে ঘুম এসে যাবে। আল্লাহতায়ালা কোনে কোনো সময় দোয়া বিলম্বে কবুল করেন। এ জন্য দোয়াকারীর নিরাশ হওয়া চলবে না।
দোয়া একটি ইবাদত বিশেষ।
কোরআনে আছে, ‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। নবিজি বলেছেন, যে আল্লাহর নিকট কিছু চায় না আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার ওপর রাগ করেন। নবিজি বিপদের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন- ''লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল হাকীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি- ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম''। এই দোয়াটা খুব পাওয়ার ফুল। যে দোয়া করে না সে সবচেয়ে অলস। আর যে সালাম দেয় না সে কৃপণ। আপনার যদি চোখে সমস্যা থাকে নিয়মিত কোরআন পড়ুন। চোখের সমস্যা চলে যাবে। ডাক্তার দেখাতে হবে না।
বহু অসুস্থ রোগীকে নবিজি দোয়া পড়ে ফু দিতেন।
নবী সোলায়মান দোয়া করতেন- ‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ যেন না হয়। আপনি তো পরম দাতা।’ আমাদের শেষ নবিজি দোয়া করতেন, ‘হে আমাদের রব! আমাদের পৃথিবীতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদের রক্ষা করুন জাহান্নামের শাস্তি থেকে। মাছের পেটে ইউনুস নবী দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। সুবাহানাল্লাহ। আমার এক ধার্মিক বন্ধুকে দেখেছি, স্ত্রীর বাচ্চা হবে। সে স্ত্রীকে হাসপাতালে নেয় নি। কারন হাসপাতালে নিলেই ডাক্তাররা সিজার করবে। কিন্তু বন্ধুটি চায় বাচ্চা হোক আল্লাহর নিয়মে। বন্ধুটি সাথে সাথে ওজু করে দোয়া পড়তে শুরু করলো। অবশ্য বন্ধুর দোয়ায় কাজ হয়নি। শেষে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। এবং অপারেশন করেই বাচ্চা হয়েছে। সব আল্লাহর ইচ্ছা। মানুষের হাতে কোনো কিছু নেই।
বাজার করতে গেলেও দোয়া আছে।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই-ইন কাদির। অর্থঃ আল্লাহতায়ালা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, সব ক্ষমতা তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনিই প্রাণ দান করেন। তিনি চিরজীবী, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। তাঁর হাতেই মঙ্গল এবং তিনিই সব সময় প্রত্যেক বস্তুর ওপর ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন- যে লোক বাজারে প্রবেশ করে উপরোক্ত দোয়াটি বলে- তার জন্য আল্লাহতায়ালা ১০ লাখ নেকি বরাদ্দ করেন। তার ১০ লাখ গুনাহ মাফ করেন। তার ১০ লাখ গুণ সম্মান বৃদ্ধি করেন। আজ যে আমার এই অবস্থা তার কারন আমি দোয়াটোয়া পড়ি না। এই জন্য দিন দিন অধঃপতনে যাচ্ছি। অথচ আমার উচিত আল্লাহর দরবারে দুই হাত তোলা। করুনা চাওয়া। দয়া চাওয়া। আল্লাহ মহান এবং দয়ালু। চাইলেই দিবেন। আমি শালা অলস। কিচ্ছু চাই না।
এখন আসি আসল কথায়।
দোয়ায় মূলত কোনো কাজ হয় না। আমার মা আমার জন্য সারা জীবন অনেক দোয়া করেছেন। আমি ডাক্তার হবো, পাইলট হবো, হেন হবো, তেন হবো। আমি কিছুই হতে পারি নি। সব বাবা মা'ই তাদের সন্তানদের জন্য দোয়া করেন। ভালো দোয়া করেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দোয়ার জোরে মানুষের কিচ্ছু হয় না। হবেও না। শুধু মাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ সাফল্য পেতে পারে। দোয়ায় কাজ হয় না। কাজেই দোয়ার উপর ভরসা রাখা ঠিক না। প্রচুর পরিশ্রম করুণ সাফল্য আসবেই। দোয়ায় কাজ হলে সব ছেলেমেয়েরা তাদের বাপ মায়ের দোয়ায় হাতি ঘোড়া হয়ে যেত।
যাই হোক, এক কালো টাকার মালিক এমপি নমিনেশন পাওয়ার জন্য ত্রিশটা মসজিদে এবং ৪৭ টা মাদরাসায় একসাথে মিলাদ ও কোরআন খতম দিলো। অনেক হুজুর ও গ্রামের মানুষ আল্লাহর দরবারে হাত তুললো। কান্নাকাটি করলো। অনেকে তার জন্য রোজা রাখলো। ভদ্রলোক নমিনেশন পান নি। ফলাফল ৭০ লাখ টাকা খরচ। কাজেই নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। পরিশ্রম করুণ। সহজ সরল জীবনযাপন করুণ। কেউ আপনাকে পিছিয়ে রাখতে পারবে না। দোয়া আসলে ধোঁয়া। কোনো উপকার নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৭