আল ইমরান কুরআনের তৃতীয় সূরা।
এর আয়াত সংখ্যা ২০০টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ২০টি। সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় 'ইমরানের বংশধরদের' কথা বলা হয়েছে। সূরা আল-ইমরান মাদানি সুরা। হযরত মুসা (আ.) ও হযরত মরিয়ম (আ.) উভয়ের পিতার নাম ইমরান। তাই ইমরানের বংশধর বলতে হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)'র বংশধরকে বোঝানো হয়েছে। এ সূরার ৩৩ ও ৩৪নং আয়াতে তাঁর (ইমরানের) পরিবারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রিয় নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা বাকারা এবং সূরা আল ইমরান জুমআর রাতে তথা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সাত আসমান ও সাত জমিন পর্যন্ত সাওয়াব দান করবেন।’
সূরা আল ইমরান
এই সূরা থেকে আমি শিখেছিঃ ''শুধু আশা আকাঙ্ক্ষা ও প্রার্থনা করেই আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে না। সৎ উদ্দেশ্যে, সৎ কাজ করা জরুরী। এবং কোনো মানুষ পাপ থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বেহেশতে যেতে পারবে না। কারণ, সৎ কর্মশীল ও পবিত্র মানুষের সঙ্গী হবার জন্য পাপ থেকে পবিত্র হতে হবে''। সূরা আল ইমরানে রয়েছে মানুষের চিন্তা ও বিশ্বাসের সীমানা। মরিয়ম (আ.) এর ঘটনায় সকল মানুষের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। তাঁর পরিত্রতা, অবিচলতা, আল্লাহর প্রতি ভরসার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে যে সম্মান দান করেছেন তা আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে এবং নেক কাজে অবিচলতা সৃষ্টিতে আমাদেরকে সাহায্য করে।
উল্লেখ্য, সবচেয়ে বড় ফেতনা বা বিশৃঙ্খলা হল কোরআনের তথা আল্লাহর বাণীকে বিকৃত করা ও ধর্মের বাস্তবতাকে গোপন রাখা। কোরআনের কোনো কোনো আয়াতের অর্থ এত উঁচু ভাবধারার যে, শুধুমাত্র প্রকৃত জ্ঞানী ও সত্য অনুসন্ধানীরাই তা বোঝার ক্ষমতা রাখেন।
ইমরানের বংশধররা আল্লাহর বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত বংশ হিসেবে সুপরিচিত। সুরা বাকারাতেও সুরা আল-ইমরানের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষ এ সূরা পাঠ করে মূল আকিদা ও আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারবে এবং নিজেও এর ওপর অটল থাকতে পারবে, তা ছাড়া কুরআন যে সত্য তা প্রমাণ করা ও ইহুদিদের সন্দেহকেও দূর করা হয়েছে। মূলত সূরা আল ইমরান একটি জ্ঞানগর্ভ সূরা, যার মাঝে ঈমান আমল জিহাদসহ বহুবিধ মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এই সূরা অত্যন্ত বরকতময় ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
হিজরি নবম বর্ষে এক খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল মদিনায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আগমন করে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের জিজ্ঞাসার জবাবে এ সুরার প্রথম থেকে ৮৩ আয়াত পর্যন্ত নাজিল হয়। ইমরান মানুষের নাম। আল শব্দের অর্থ বংশধর। সূরা আল ইমরানের সর্বশেষ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অভ্যন্তরীণ কু-প্রবৃত্তি ও বাইরের শত্রুর মোকাবেলায় ধৈর্যধারণ কর। ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং সীমান্তের শত্রুদের মোকাবেলার জন্য সব সময় প্রন্তুত থাক। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা তোমাদের লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পার।
মরিয়ম (আ.) এর মা আল্লাহর প্রতি তাঁর ভক্তি প্রদর্শন করার আকাঙ্ক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাঁর যে সন্তান হবে তাঁকে আল্লাহর ঘরের খেদমতে নিযুক্ত করবেন। কিন্তু যখন তাঁর মেয়ে জন্ম হলো- তখন তিনি হতবাক হয়েছিলেন। তিনি একটি ছেলের প্রত্যাশা করছিলেন। কারণ, তিনি জানতেন যে, সমাজে মেয়েরা দুর্বল হিসাবে বিবেচিত হয়। সে কিভাবে আল্লাহর ঘরের খেদমত করবে? (কুরআনের নিয়ম হল যখন কোনো গুণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, তখন এর জন্য একটি দৃষ্টান্তও স্থাপন করা হয় যাতে এর অনুসরণ করা সহজ হয়। মরিয়ম(আঃ) এর ঘটনায় সেই শিক্ষাটিই দেয়া হয়েছে।)
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২২