কোরআন শরীফের আমার প্রিয় সূরা 'আল বাকারা'।
আল বাকারা কুরআনের দ্বিতীয় সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ২৮৬ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ৪০ টি। আল বাকারা সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়। বাকারা মানে 'গাভী'। ইসলামের মৌলিক নীতি, বিশ্বাস ও শরিয়তের বিধিবিধানের যতটুকু বিস্তারিত বর্ণনা সূরা বাকারায় করা হয়েছে, ততটুকু আলোচনা অন্য কোনো সূরায় করা হয়নি। এ সূরায় এক হাজার আদেশ, এক হাজার নিষেধ, এক হাজার হেকমত এবং এক হাজার সংবাদ ও কাহিনী আছে। সূরা বাকারার ৬৭ থেকে ৭৩নং পর্যন্ত আয়াতে একটি গাভীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যে গাভীটি জবেহ করার জন্য বনি ইসরাইলকে আদেশ করা হয়েছিল। সে হিসাবেই এ সূরার নাম সূরা বাকারা। এই সূরার বেশীরভাগ অংশই নাজিল হয়েছিল হিজরতের প্রথম দেড় থেকে দুই বছরে। যদিও পুরো সূরাটি নাজিল হতে সময় লেগেছিল ৯ বছর।
এতটুকু সবার জানা জরুরীঃ
কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এক অভিনব পদ্ধতিতে। আল্লাহতায়ালা সম্পূর্ণ কুরআনকে একসাথে নাযিল না করে অল্প অল্প করে নাযিল করেছেন। কখনো এক সূরার কিছু অংশ, তারপর অন্যান্য সূরার কিছু অংশ, অত:পর আবার সেই আগের সূরার কিছু অংশ- এভাবে। আর কুরআনের একটা বিশাল অংশ নাযিল হয়েছে বিভিন্ন অবস্হার পরিপ্রেক্ষিতে। প্রয়োজনে। কখনো অবিশ্বাসীদের প্রশ্নের উত্তরে, কখনো তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের প্রত্যুত্তরে, কখনো উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান বিধানে, কখনো মুসলিমদের সাহস যোগাতে বা সতর্ক করতে, ইত্যাদি কারনে। কোরআন মানুষকে সৌভাগ্য ও সফলতার দিকে পরিচালিত হওয়ার সব উপায় বলে দিয়েছে। কাজেই যে ব্যক্তি সফলকাম হতে চায় তাকে অবশ্যই স্রষ্টার কাছ থেকে প্রেরিত দিক নির্দেশনার শরণাপন্ন হতে হবে। সূরা বাকারা'র বাংলা উচ্চারন ও অর্থ।
কোরআনের শীর্ষচূড়া হলো সূরা বাকারা।
এতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের সব আয়াতের সরদার। তা হলো আয়াতুল কুরসি। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরখানা বানাবে না। নিশ্চয় শয়তান ওই ঘর থেকে পলায়ন করে যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয়। তোমরা কোরআন পড়ো। কেননা তা কেয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হবে। বিশেষ করে তোমরা এই দুটি নূরানী সূরা (বাকারা) ও (ইমরান) পড়ো। কেননা এগুলো কেয়ামতে তার পাঠকারীকে এভাবে ছায়া দেবে এগুলো যেন দুটি মেঘ খণ্ড অথবা শামিয়ানা বা পাখির ঝাঁক। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা জমিন ও আসমান সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন। তার থেকে দুটি আয়াত সূরা বাকারার মাধ্যমে শেষ করেছেন। যে ঘরে তিন দিন এটা পড়া হবে না, শয়তান সেই ঘরের নিকটবর্তী হয়ে যাবে।
সূরা বাকারা দীর্ঘতম সূরা হিসাবে বিবেচিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা সূরা বাকারাকে এমন দুটি আয়াত দ্বারা সমাপ্ত করেছেন যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচে দান করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা তা শিক্ষা করবে এবং তোমাদের নারীদেরকেও তা শিক্ষা দিবে। কেননা তাতে রয়েছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় ও দোয়া। সূরা বাকারাহ নাযিলের সময় বিভিন্ন ধরনের মুনাফিক গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। তাই মহান আল্লাহ এখানে তাদের প্রতি সংক্ষিপ্ত ইংগিত করেছেন। পরবর্তীকালে তাদের চরিত্র ও গতি-প্রকৃতি যতই সুস্পষ্ট হতে থাকলো ততই বিস্তারিতভাবে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন মুনাফিক গোষ্ঠীর প্রকৃতি অনুযায়ী পরবর্তী সূরা গুলোয় তাদের সম্পর্কে আলাদা আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
সেই সময়, মদিনায় ইহুদীদের তিনটি বড় গোত্র বাস করত।
প্রথমবারের মতো মুসলিমরা যেহেতু ইহুদিদের সংস্পর্শে আসছে, কাজেই তাদের সাথে কিভাবে ব্যবহার ও লেনদেন করতে হবে তা-ও বলা হয়েছে সূরা বাকারা'য়। এই সূরায় আদম (আ) ও ইবলিশের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ এতে মুসলিমদের জন্য শিক্ষনীয় অনেক কিছু আছে। আর বলা হয়েছে মুসা (আ) ও বনী ইসরাইলের কাহিনী কারণ তাদের বংশ ধরেরাই হলো ইহুদিরা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সূরা বাকারা ইউটিউবে শুনবেন, দেখবেন অনেক ভালো লাগবে। সারাটা দিন ভালো যাবে। টেনশন কমে যাবে। হতাশা কমে যাবে। পরীক্ষিত। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর আয়াত গুলি আমাদের অন্তরে আনতে এবং তাদেরকে আমাদের হৃদয়, আমাদের জীবন এবং আমাদের কবরকে আলোকিত করার একটি মাধ্যম হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম করুন! আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৩