মিসরের বাদশাহ একবার এক অদ্ভূত স্বপ্ন দেখেন।
তিনি দেখতে পান, সাতটি মোটাতাজা গাভীকে সাতটি শীর্ণকায় গাভী খেয়ে ফেলছে। আরও দেখতে পান সাতটি সবুজ শস্য ও সাতটি শুষ্ক শীষ। বাদশার খেয়েদেয়ে কোনো কামকাজ নেই। বাদশাহ এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দরবারের আমীর-ওমরা, জ্ঞানী-গুণী কেউই দিতে পারলেন না। অবশেষে তিনি হযরত ইউসুফ (আ.) এর শরণাপন্ন হলেন। তিনি এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বললেন, সাত বছর রাজ্যে প্রচুর ফসল ফলবে, সচ্ছলতা থাকবে, আর সাত বছর দেশে একটানা ভীষণ দুর্ভিক্ষ চলবে। হযরত ইউসুফ দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিলেন।
হযরত ইউসুফ ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত একজন পয়গম্বর।
তিনি নবী ইয়াকুব এর বারো ছেলের ১১তম ছেলে। তার মাতা রাহেলা। নবী ইউসুব ছোটবেলা থেকেই অন্য রকম ছিলেন। শান্ত নম্র। পরোপকারী। দেখতে ছিলেন দারুন সুন্দর। কোরআনের সূরা ইউসুফে তার ঘটনা সম্পূর্ণ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ইউসুফ (আঃ) হলেন একমাত্র নবী, যাঁর পুরা কাহিনী একটি মাত্র সূরায় ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। (সুবাহান্নাহ) নবিদের কাছ থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে।
ইউসুফ (আঃ) যে কোনো স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে জানতেন।
যদি আধুনিক বিজ্ঞান বলছে স্বপ্ন হলো অবচেতন মনের কারসাজি। আল্লাহ্র নবী হযরত ইউসুফ স্বপ্নে যে সত্যকে প্রত্যক্ষ করেন, তা তার সৎ ভাইদের কাছে অরুচিকর মনে হয়। তারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং নামমাত্র মূল্যে তাঁকে বণিকদের কাছে ক্রীতদাসরূপে বিক্রী করে দেয়। আল্লাহ যার সহায়, কিসের তার ভয়।
বনীকেরা হযরত ইউসুফকে মিশরে নিয়ে আসে এবং মিশরের প্রধানমন্ত্রীর (আজিজ) সম্মুখে আনায়ন করে, পরবর্তীতে আজিজ হযরত ইউসুফকে দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। আজিজের স্ত্রী হযরত ইউসুফকে প্রেমিকরূপে পেতে চান- কিন্তু কামজ প্রেমে হযরত ইউসুফকে আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। তাঁর প্রত্যাখান তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করে। কিন্তু হযরত ইউসুফ কারাগারে থেকেও সত্যকে খুঁজে ফেরেন এবং সেখানে তিনি তার দয়ালু স্বভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন।
ইউসুফ নবী কি সত্যিই প্রেম করেছিলেন?
ইউসুফ জুলেখার প্রেম কাহিনী সমাজে খুব প্রচলিত। তারা প্রেম করেন নি। এইটা পরিষ্কার একটি কুফুরী কথা এবং আল্লাহর সম্মানিত একজন নবী (আঃ) এর চরিত্র সম্পর্কে চরম মানহানি ও মিথ্যা অপবাদ। লোকজন তিনকে তাল বানাতে পছন্দ করে।
ইউসুফ ১১০ বছর জীবিত ছিলেন।
মৃত্যুর পূর্বে তিনি ইসরাইলীদের শপথ করিয়ে বলেন, যখন তারা মিশর ত্যাগ করবে তখন তার হাড় তাদের সাথে নিয়ে যেতে পারে।ইউসুফের জীবনের অন্য সব ঘটনা নিয়ে বিরাট ভলিউম রচনা করা সম্ভব। আমাদের সকলের উচিত নবি রাসূলের দেখানো পথে চলা। তবেই আমাদের জীবন হবে আণন্দময় ইহকাল এবং পরকাল দুইজাহানে।
আল্লাহ তায়লা কুরআন নাযিল করেছেন মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য। হেদায়েতের আলো অন্তরে দেয়ার জন্য। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য উপদেশ, আদেশ, বিধি-বিধান ইত্যাদি প্রদান করেছেন। এসব অনুসরণের দ্বারা দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর হয় তেমনি সুন্দর হয় আখিরাতের জীবন। কুরআনে ১১৪ টি সূরা রয়েছে। প্রতিটি সূরার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা। সেই শিক্ষা আল্লাহ তায়ালা হয়তো কোন ঘটনার মাধ্যমে দিয়েছেন অথবা কোন উদাহরণের মাধ্যমে দিয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৪০