আসসালামু আলাইকুম প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা।
মানুষ যদি আল্লাহর পছন্দনীয় পথে চলতে চায়, তবে তাকে অবশ্যি জানতে হবে, আল্লাহর পছন্দনীয় পথ কোনটি? তাকে অবশ্যি জানতে হবে, তার মুক্তির পথ কোনটি? তার সফলতা অর্জনের উপায় কি? অর্থাৎ তাকে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। শুধু জানলে হবে না। জেনে, মানতে হবে। আমাদের সবার প্রতিদিন কোরআন, হাদীস পড়া উচিত। তাহলে মন শান্ত হবে। অস্থিরতা কমবে, পাপ থেকে দূরে থাকা যাবে।
১। বিজ্ঞজনদের মাঝে গর্ব করার উদ্দেশ্যে, মূর্খদের সাথে তর্ক করার উদ্দেশ্যে, সভায় প্রশংসা কুড়ানোর জন্য, জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, নেতৃত্ব লিপ্সুতার জন্য ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের উদ্দেশ্যে জ্ঞানের সন্ধান করো না। যদি জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে কারো উদ্দেশ্য এমন হয় তবে তার স্থান হবে জাহান্নাম।
২। মহানবী (স.) একদল লোকের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যাদের মধ্যে শক্তিধর এক লোক ছিল। যে বড় বড় পাথর উত্তোলন করছিল এবং উপস্থিত লোকেরা তাকে ভার উত্তোলনের বীর হিসেবে বাহবা দিচ্ছিলো। আর ঐ ক্রীড়াবিদের কর্মকাণ্ডে সকলে অবাক হচ্ছিল। আল্লাহর নবী (স.) জিজ্ঞেস করলেন: এখানে লোক সমাগমের কারণ কি? জনগণ ভার উত্তোলক ঐ ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের কথা সম্পর্কে মহানবী (স.) কে অবগত করলো। রাসূলে আকরাম (স.) বললেন: ‘তোমাদেরকে কি বলবো- এই ব্যক্তির চেয়ে শক্তিশালী কে?
তার চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে সে, যাকে গালী দেওয়া হয় কিন্তু সে ধৈর্য্য ধারণ করে নিজের প্রতিশোধ পরায়ন নফসের উপর নিয়ন্ত্রন রাখে এবং নিজের শয়তান ও তাকে গালি দানকারী শয়তানের উপর বিজয়ী হয়।
৩। একদিন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে সকালে নাস্তা করতেছেন। সেই সুযোগে একজন সাহাবা নবীজীকে প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ আপনি সর্বশ্রেষ্ট এবং সর্বশেষ নবী। আমরা (সাহাবায়ে কেরামরা) আপনার সাথে মসজীদে গিয়ে আপনার পিছনে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করি, আপনার সাথে বসে একসাথে নাস্তা করি, আপনার সাথে যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে একসাথে যুদ্ধ করি এবং সুখে দুঃখে সবসময় আমরা আপনাকে পাশে পাই। এই পৃথিবীর জমীনে আমাদের চেয়ে উত্তম মানবজাতি আর কেউ আছে কি?
নবীজী (সঃ) বললেন হ্যাঁ আছে।
উপস্হিত সব সাহাবায়ে কেরামরা তাজ্জব হয়ে গেলেন। এবং বললেন, ইয়া রাসূল আমাদের চেয়ে উত্তম মানবজাতি পৃথিবীতে আছ? কিন্তু তারা কারা?
নবীজী (সঃ) বললেন, তাহলে শুনো তোমাদের চেয়ে উত্তম উম্মত আছে কিন্তু তারা এখনো পৃথিবীতে আসে নাই। তারা তোমাদের পরে পৃথিবীতে আসবে। তারা আমাকে না দেখে আমার প্রতি ঈমান আনবে, তারা আমাকে অধিক পরিমানে ভালবাসবে এবং তারা আমাকে না দেখে ইয়া নবী, ইয়া নবী বলে বলে আমাকে সালাম দিবে এবং আমাকে না দেখে ইয়া রাসূল বলে বলে আমার কথা স্বরন করে কাঁদবে। হে আমার প্রিয় সাহাবারা, তারাই হলো পৃথিবীর ইতিহাসে পৃথিবীর জমীনে সর্বোত্তম উম্মত।
৪। অনেক মানুষ কেবল এই দুনিয়ার অর্থ সম্পদ এবং মান মর্যাদা লাভ করবার ও ভোগ করবার চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। পরকালের মুক্তির জন্য কি আমল করলো আর মরণের পরে কি অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে, সে বিষয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা করেনা। আসলে দুনিয়ার জীবনটা একটা সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরকালের মুক্তির ব্যবস্থা করা সকলেরই কর্তব্য। পরকালের জন্যে কাজ করাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
৫। একদিন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাযিঃ) কে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! আজকে আমি অনেক খুশি, তুমি আমার কাছে যা চাইবে তাই দেব। বল তুমি কি চাও?
হযরত আয়েশা (রাযিঃ) চিন্তায় পড়ে গেলেন, হঠাৎ করে তিনি এমন কি চাইবেন? আর যা মন চায় তা তো চাইতে পারেন না! যদি কোন ভুল কিছু চেয়ে বসেন, নবীজী (সঃ) যদি কষ্ট পেয়ে যান?
আয়েশা (রাযিঃ) নবীজী (সঃ) কে বললেন, আমি কি আব্বুর কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিতে পারি?
নবীজী (সঃ) বললেন, ঠিক আছে তুমি পরামর্শ নিয়েই আমার কাছে চাও।
আয়েশা (রাযিঃ) উনার আব্বু হযরত আবুবকর (রাযিঃ) এর কাছে পরামর্শ চাইলেন।
আবুবকর (রাযিঃ) বললেন, যখন কিছু চাইবেই, তাহলে তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে, মিরাজের রাতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আ'লামীন এর সাথে হইছে এমন কোন সিক্রেট (বা গোপন ) কথা জানতে চাও।
আর কথা দাও নবীজী (সঃ) যা বলবেন তা সর্বপ্রথম আমাকে জানাবে।
আয়েশা (রাযিঃ) নবীজী (সাঃ) এর কাছে গিয়ে মিরাজের রাতের কোন এক গোপন কথা জানতে চাইলেন, যা এখনও কাউকে বলেন নি। মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হেসে দিলেন, বললেনঃ বলে দিলে আর গোপন থাকে কি করে? একমাত্র আবুবকর (রাযিঃ) ই পারেন এমন বিচক্ষণ প্রশ্ন করতে। হে আয়েশা (রাযিঃ) আল্লাহ আমাকে মিরাজের রাতে বলেছেনঃ "হে মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ, কারো ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়ে দেয় তাহলে আমি তাহাকে বিনা হিসাবে জান্নাতে পৌঁছে দেব।
প্রতিশ্রুতি মত, আয়েশা (রাঃ) উনার আব্বু হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর কাছে এসে নবীজী (সঃ) এর বলে দেওয়া এই কথাগুলো বললেন। শুনে আবুবকর (রাঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। আয়েশা (রাঃ) আশ্চার্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আব্বু আপনি তো কত ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়েছেন, আপনার তো সোজা জান্নাতে যাওয়ার কথা, তবে কাঁদছেন কেন?
আবুবকর (রাঃ) বললেন, আয়েশা এই কথাটার উল্টা চিন্তা করে দেখো, কারো ভাঙা মন জোড়া লাগালে যেমন আল্লাহ সোজা জান্নাতে দিবেন, কারো মন ভাঙলেও তো আল্লাহ যদি সোজা জাহান্নামে দিয়ে দেন, আমি না জানি নিজের অজান্তে কতজনের মন ভেঙেছি।
আল্লাহ যদি আমাকে জাহান্নামে দিয়ে দেন, সেই চিন্তায় আমি কাঁদতেছি।
এই হলো আমাদের ইসলাম!
এভাবেই যুগে যুগে ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, কাউকে কষ্ট না দিতে, মানুষের কষ্টে পাশে দাড়াতে।
মুহাম্মাদ (সাঃ) আরো বলেছেন, যদি তুমি গোসত রান্না করতে চাও, তাহলে এক গ্লাস পানি বেশি দিয়ে দাও, যাতে তোমার গরীব প্রতিবেশীকে একটু শেয়ার দিতে পারো। আর যদি না দিতে চাও, তাহলে এমন সময় রান্না করবে, যখন প্রতিবেশীর বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকে, গোসতের ঘ্রান পেয়ে বাবা-মাকে গোসত খাওয়ার কথা না বলে, গরীব বাবা মা, গোসত কিনে খাওয়াতে পারবে না, তখন মনে অনেক কষ্ট পাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৫০