গতকাল একজন আমাকে এক বোতল জম জম পানি দিলেন।
উনি ওমরা করতে গিয়েছিলেন। জমজম পানি নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা দিল। তাই নেট ঘেটে জম জম নিয়ে একটু পড়াশোনা করলাম। অনেক কিছু জানলাম। ভাবলাম, আপনাদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি।
একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর দিন শেষে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত গোটা জীবনের সব ধরনের কাজের দিক-নির্দেশনা ইসলামে প্রদত্ত হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের সেরা পানি হল জমজমের পানি। আরবি ভাষায় জমজম শব্দের অর্থ হলো অঢেল পানি। বিশ্বনবি সবসময় জমজমের পানি সঙ্গে রাখতেন যার প্রমাণ পাওয়া যায় হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদিসে।
হজ্ব করতে গিয়ে এমন কোনো হাজি সাহেব পাওয়া যাবে না,যিনি হজ শেষে পবিত্র এই কূপের পানি সঙ্গে করে না নিয়ে আসেন। জমজমের পানি পান যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে তাই পূর্ণ হতে পারে। জমজম কূপের পানি রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে পান করেছেন, মর্মে সহিহ হাদিস রয়েছে। জমজমের পানিতে রয়েছে ফ্লোরাইড। ফ্লোরাইডে রয়েছে জীবানুনাশক ক্ষমতা। জমজম পানি কখনো জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় নি।
বর্তমানে কাবা ঘরের ২০ মিটার দূরে অবস্থিত এই কূপটি থেকে পাম্পের সাহায্যে প্রতিদিন ২০ লক্ষাধিক ব্যারেল পানি উত্তলিত হয়। জমজম কূপের পানির কোনও রং বা গন্ধ নেই, তবে এর বিশেষ একটি স্বাদ রয়েছে। জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পানের বিধান রয়েছে। একজন মুসলিম জমজমের পানি পান করার সময় কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহ’র নাম নিয়ে তিন ঢোকে জমজমের পানি পান করবেন। পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য সাধারণভাবে জমজমের পানি পান করা মুস্তাহাব।
জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সকল পানির চেয়ে উত্তম। জমজম কূপ মূলত মহান আল্লাহতায়ালার এক কুদরতের নিদর্শন। জমজম কূপের পানি যতই ব্যবহার করা হোক তা কখনও শেষ হয় না, হবেও না ইনশাআল্লাহ। আজ থেকে চার হাজার বছর পূর্বের কথা, আল্লাহর এক পয়গম্বর ছিলেন যার নাম হজরত ইব্রাহিম (আ.)। আল্লাহর আদেশে দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা (আ.) ও শিশু পুত্র ইসমাইল (আ.) -কে মক্কার মরুভূমিতে রেখে আসেন। রেখে যাওয়া খাদ্য পানীয় শেষ হয়ে গেলে হাজেরা (আ.) পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করেন। এসময় জিবরাইল (আ.) এর পায়ের আঘাতে মাটি থেকে পানির ধারা বেরিয়ে আসে। ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখে হাজেরা (আ.) পাথর দিয়ে পানির ধারা আবদ্ধ করলে তা কূপে রূপ নেয়। এই সময় হাজেরা (আ.) পানির ধারাকে জমজম তথা থামো বললে এর নাম জমজম রাখা হয়।
সারাদিন পানি উত্তোলন শেষে, মাত্র ১১ মিনিটেই আবার পূর্ণ হয়ে যায় কূপটি। এই কূপের পানি কখনও শুকায়নি। সৃষ্টির পর থেকে একই রকম আছে এর পানি প্রবাহ। এমনকি হজ মৌসুমে ব্যবহার কয়েকগুন বেড়ে যাওয়া সত্বেও এই পানির স্তর কখনও নিচে নামে না।
সবাইকে এ পানি পান করে এর বরকত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:৪৩