সামু ব্লগের একজন জনপ্রিয় ব্লগার 'চাঁদগাজী'। ব্লগে দুই একজন ছাড়া সবাই তাকে ভালোবাসে। তিনি সহজ সরল ভাষায় লিখেন। তিনি বেশির ভাগ ব্লগারের লেখা পড়েন এবং খুব সুন্দর মন্তব্য করেন। আমি সামু ব্লগে তার মতো সুন্দর করে মন্তব্য করতে আর কাউকে দেখিনি। অনেকেই তার মন্তব্য বুঝতে না পেরে তার উপর রাগ করেন। কিন্তু এই মানুষটার হৃদয় এক আকাশ মায়া মমতায় ভরপুর। তিনি যতই শক্ত মন্তব্য করুক, মানুষের জন্য তার সীমাহীন ভালোবাসা আছে, আমি টের পাই। তিনি প্রতিটা ব্লগারকে ভালোবাসেন। তিনি তার দেশকে অত্যাধিক ভালোবাসেন। তবে রাজনীতিবিদদের উপর তার অনেক রাগ। রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিবিদরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। দেশের যে কোনো সমস্যায় তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। তার যে কোনো লেখাতে দেশ প্রেম দেখা যায়, যা আমকে মুগ্ধ করে। তার লেখা এবং মন্তব্য দেখলেই বুঝা যায়- তিনি খুব সাহসী একজন মানুষ। সাহসী মানুষেরা সৎ হয়। তিনি আমেরিকা থাকেন। বছরে দুই তিনবার দেশে আসেন। বেশ কিছুদিন থেকে আবার চলে যান। তিনি প্রচন্ড একজন রসিক মানুষ। তার প্রচুর রাগ কিন্তু তিনি রাগ সামলাতে জানেন।
চাঁদগাজী সাহেব একজন হৃদয়বান মানুষ। তিনি হৃদয়বান মানুষ তার জন্য তাকে আমি শ্রদ্ধা করি না, শ্রদ্ধা করি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের সব মুক্তিযোদ্ধা আমার কাছে সম্মানের পাত্র। এই সামু ব্লগ'ই তাকে সাত বার ব্যান করেছে। অবশ্য এজন্য তিনি দায়ী ছিলেন না। তার পেছনে 'ফেউ' লেগেছিল। দুঃখের বিষয় আজ সামু ব্লগে এই সমস্ত 'ফেউ'রাই নেই। আসলে যে যোগ্য সে'ই টিকে থাকে। চাঁদগাজী টিকে আছেন। থাকবেন। ব্লগ জগতে তাঁর অনুসারী ও সমর্থক অনেক। বিনা দ্বিধায় বলা যায়- 'চাঁদগাজী' আজ একটি ব্র্যান্ড। চাঁদগাজী একজন মহৎ ব্লগার। পরিশ্রমী ব্লগার। আমি মনে করি, সামুতে ''চাঁদগাজী''র মতো আরও ব্লগার আসুক। লিখুক। মন্তব্য করুক। সবচেয়ে বড় কথা 'চাঁদগাজী'কে নিয়ে পক্ষে বা বিপক্ষে পোষ্ট দিলেও খুব হিট খায়। 'চাঁদগাজী' ছাড়াও সামু ব্লগে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তার দেখার দৃষ্টি অনেক গভীর। ব্লগারদের লেখা পড়েই তিনি ব্লগারদের মানসিকতা বুঝে ফেলেন। আমি চাই তিনি আরও লিখুক। অনেক লিখুক। ইদানিং বয়স জনিত কারনে তার শরীরটাও বেশী ভালো নেই। ডাক্তার তাকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন। উত্তেজিত হতে মানা করেছেন। এখন তার সময় কাটে বই পড়ে আর ব্লগ লিখে।
'চাঁদগাজী' সাহেবের বর্তমান বয়স ৬৬ বছর। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। দীর্ঘদিন তিনি একটি কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের কাছেও তিনি দারুন জনপ্রিয়। 'চাঁদগাজী' সাহেব এত বছর ধরে আমেরিকা থাকলেও এখনও তার শরীরে মাটির গন্ধ মিশে আছে। সিনেমা হলে ভালো সিনেমা আসলে- তার ছেলে তাকে মুভি'র টিকিট কেটে দেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি খুব অলস হয়ে পরেছেন। একদম ঘরকুনো হয়ে পড়েছেন। ঘর থেকে বের হতেই চান। এমনকি অসুখ বিসুখ বাঁধালেও হাসপাতালে যেতে চান না। পরিবারের সদস্যরা অনেক অনুরোধ করলে, তারপর হয়তো হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যান। ছোটবেলা থেকেই তিনি দারুন সাহসী আর তেজী ছিলেন। খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারেন। কিশোর বয়সে পুকুরে ডুব দিয়ে জাল ছাড়াই হাত দিয়ে মাছ ধরে ফেলতেন। চাষবাস করেছেন দীর্ঘদিন। তিনজন কৃষকের কাজ তিনি একাই করতেন। লেখা পড়ায় তিনি ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি দেখতে কেমন? হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলি দেখতে যে রকম, আমাদের চাঁদগাজী দেখতে সেরকম। বয়স হলেও বেশ শক্তসামর্থ।
তিনি প্রায়ই চরম সত্য মন্তব্য করেন। আর সত্য সব সময়ই বড় কঠিন। তাই অনেক ব্লগার তার দিকে কঠিন চোখে তাকায়। 'চাঁদগাজী' সাহেব প্রতিটা ব্লগারকে অত্যাধিক পছন্দ করেন। পছন্দ করেন বলেই কঠিন মন্তব্য করেন তাকে কিছু শিখানোর জন্য অথবা অন্যভাবে বলা যায় তার ভুল গুলো শুধরানোর জন্য। অনেকে উনার কমেন্টের অর্থ বুঝে না তাই মাইন্ড করে। কিন্তু উনার কমেন্ট গুলো চমৎকার। আসলে আমি দেখেছি বেশ কিছু ব্লগার 'চাঁদগাজী' সাহেবকে হিংসা করে। কিন্তু তাকে ভালোবাসার কথা। আমি মনে করি, চাঁদগাজীর সকল পোষ্ট ও মন্তব্য সরকারের লোকেরা পড়লে এবং সে অনুযায়ী উপদেশ গ্রহণ করলে সেটা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতো। 'চাঁদগাজী' সাহেবের ফেসবুক আইডি নেই। কিন্তু কে বা কারা তার নামে একটা ফেসবুক আইডি খুলেছে। এই লিংক তার দেশ এবং রাজনীতি নিয়ে লেখা গুলো বই আকারে প্রকাশিত হওয়া দরকার। আমার প্রকাশনি থাকলে এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে তার লেখা গুলো বই আকারে প্রকাশ করতাম।
সামুর একজন ব্লগার গর্ব করে বলেন, ''চাঁদগাজি সাহেবের পোস্ট পড়ার জন্যই ব্লগে আছি। উনার মত সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সমস্যা সমাধান খুব কম লোকেই দিতে পারে। বলতেই হয় চাদগাজি মানেই জ্ঞানের ভান্ডার।'' আরেকজন ব্লগার বলেন, ''তিনি (চাঁদগাজী) নতুন ব্লগারদের পোষ্টগুলোও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পড়েন এবং নির্ভিক মন্তব্য করেন। ভুল থাকলে ধরিয়ে দেন। এজন্য আমিও তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।''
'চাঁদগাজী' সাহেব স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ''আমি সাধারণ ব্লগারদের একজন, ব্লগিং ভালোবাসি। বিশ্বাস করি যে, ব্লগারেরা একটি নতুন শক্তিশালী জেনারেশন। এরা নিজেদের ভাবনা-চিন্তা, মননকে রিফাইন করার সুযোগ পাচ্ছেন ব্লগে লিখে। ফলাফল, এঁদের থেকে শক্তিশালী মননের, ভাবনার মানুষ তৈরি হচ্ছে, লেখক তৈরি হচ্ছে, আরো হবেন। ব্লগারেরা প্রানবন্ত মানুষ, কথাবার্তা হচ্ছে, আলাপ আলোচনা হচ্ছে, লজিক্যালী তর্কও হচ্ছে। এগুলো ব্লগারদের একদিন ইস্পাত-কঠিন বাঙ্গালীতে পরিণত করবে। এঁরা'ই শক্তিশালী জাতী গঠনে অবদান রাখবেন।
আমি ব্লগিং পছন্দ করি।''
দ্বিধা সংশয় ছাড়া বলতে পারি- সামু ব্লগে চাঁদগাজী'ই এক নম্বর ব্লগার, এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাকে ভাল রাখুক, সুস্থ রাখুক। নেক হায়াত দান করুক। তিনি একজন সর্বগুণে গুণান্বিত ব্লগার এতে কোন ভুল নেই। আমাকে যদি বলা হয়, তোমার চোখে সেরা ব্লগার কে? চোখ বন্ধ করে বলব, 'চাঁদগাজী'। ও আচ্ছা, বলতে ভুলে গেছি, তিনি পেঁচা খুব পছন্দ করেন। আর একটা কথা, তিনি নিজে দীর্ঘদিন কৃষি কাজ করেছেন বলে, কৃষকদের জন্য তার রয়েছে এক আকাশ ভালোবাসা। সম্ভবত এজন্যই ট্রাক্টরের ছবি দিয়ে রেখেছেন ব্লগে। ট্রাক্টর দিয়েই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২১