somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একজন গুন্টার গ্রাস

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৮৬ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন গুন্টার গ্রাস। ছিলেন এক সপ্তাহ। সঙ্গে স্ত্রী উটে গ্রাস। পশ্চিম বাংলা ঘুরে তারপর বাংলাদেশ। শাঁখারিবাজার থেকে জেনেভা ক্যাম্প, পুরান ঢাকার অলিগলি, সদরঘাটের ভাসমান রেস্তোরাঁ সবখানেই ছিল গুন্টার গ্রাসের পদচারণা। সোনারগাঁর পানাম নগরীতেও গেছেন। দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসেন ২০০১ সালে।

‘টিনড্রাম’ উপন্যাসের জন্য ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। জন্মেছেন পোল্যান্ডের বাল্টিকে। জন্মসূত্রে জার্মানি এই লেখক লিখেছেন দশটি উপন্যাস, বেশ ক’টি নাটক ও কয়খানা ভ্রমণকাহিনী।

সাতদিনের এই বর্ণাঢ্য ভ্রমণে সঙ্গী করেছিলেন কখনও কবি বেলাল চৌধুরী, কখনও শিল্পী এসএম সুলতান। ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন আলোকচিত্র সাংবাদিক নাসির আলী মামুন।

১৯৫৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু দুই যুগ পর এই সংসার ভেঙ্গে যায় তার। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আবার বিয়ে করেন তিনি।

তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে_ দ্য টিন ড্রাম (১৯৫৯), ক্যাট অ্যান্ড মাউস (১৯৬১), ডগ ইয়ার্স (১৯৬৩), দ্য ফ্লাউন্ডার (১৯৭৩), ক্র্যাবওয়াক (২০০২), দ্য র‌্যাট (১৯৮৬), দ্য বক্স (২০০৮), শো ইউর টাং (১৯৮৬), টু স্টেটস ওয়ান নেশন (১৯৯০)।

তিন ছেলে ও তিন মেয়ের জনক গুন্টার গ্রাস সাহিত্যে নোবেল ছাড়াও গেওর্গ ব্যুশনার পুরস্কার, অনারারি ফেলো অব দ্য রয়েল সোসাইটি অব লিটারেচার এবং প্রিন্স অব অস্ট্রিয়াস পুরস্কার লাভ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মার্কিন সেনাদের হাতে ধরা পড়ে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছর তিনি বন্দী ছিলেন। পরে মুক্তি পেয়ে তিনি খামার শ্রমিকের কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন ডুসেলডর্ফ ও বার্লিনে।

‘যতই বছর যাচ্ছে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, দিন কে দিন আমাদের স্বয়ং বিনাশের সম্ভাবনা প্রকটরূপ ধারণ করছে, এমন অবস্থা কিন্তু পূর্বে বিরাজমান ছিল না : এটা বলা হচ্ছে যে প্রকৃতি দুর্ভিক্ষ, খরা সৃষ্টিকারী অথচ দায় রয়েছে অন্যত্র, দায়ী মানুষ, এই আমরাই। তিনি বলেন, এখন আর প্রকৃতি নয় প্রথমবারের মতো আমরাই দায়ী, মানুষের অপার সম্ভাবনা এবং ক্ষমতাও রয়েছে এই আমাদের নিজেদের স্বয়ং ধ্বংস বা বিনাশকরণে এবং আমরা এখনো কিছুই করছি না এই বিপদ এড়াতে। এ সবকিছু একসঙ্গে আমাকে উপলব্ধি করিয়েছে যে আমাদের সব কিছু সসীম অথচ আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় নেই।' কথাগুলো যিনি বলেছেন তিনি গুন্টার গ্রাস। শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথাগুলো জানিয়েছেন মিডিয়াকে।

তার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস টিন ড্রামে তিনি কৌতুক, বিস্ময়, প্রতিবাদ ও হিউমারের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন জার্মানির যুদ্ধ অভিজ্ঞতাকে। গ্রাসের প্রায় প্রতিটি উপন্যাসে মাছ কিংবা প্রাণিজগতের সদস্যরা বিশেষ ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। মূলত শিল্পী ও স্থপতি আবার একই সঙ্গে কবি ও নাট্যকার; যার অতীত স্মৃতিময়, নাৎসিদের ব্যাখ্যাতীত নিষ্ঠুরতায় বিপর্যস্ত যে ছেলেবেলা। বাবা ছিলেন ছোট মাপের মানুষ, স্বল্প আয়ের সামান্য এক মুদি দোকানের মালিক; মা ভিন্ন সম্প্রদায়ের এক গৃহবধূ; প্রিয় শহর ডানজিগে জন্ম ও বেড়ে ওঠা; 'টিন ড্রাম' ও 'ক্যাট অ্যান্ড মাউস' উপন্যাসে গভীর বেদনা ও গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ শহরটি।

গুন্টার গ্রাস তার একটি উপন্যাসে সভ্যতার বিবর্তন দেখিয়েছেন যুগ যুগ ধরে মানুষের খাদ্য স্বভাবের মধ্য দিয়ে। মানুষ প্রথমে কাঁচা মাংস খেত, পরে আগুন আবিষ্কারের পর পুড়িয়ে খেতে শিখল, তারপর লবণের স্বাদ পেল। এভাবে স্বভাবের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছে। রোমক সভ্যতার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল তার অহমিকা। খাদ্য স্বভাবের মধ্য দিয়ে তার এই অহমিকা প্রকাশ পেত। গুন্টার গ্রাসের বক্তব্য হচ্ছে সভ্যতাকে ধরে রাখা যায় না, সে সামনের দিকে এগোতে থাকে এবং কখনও কখনও সে পুরানো ধারায় প্রত্যাবর্তন করে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×