৪১। 'সংশপ্তক' লেখক- শহীদুল্লাহ কায়সার। সংশপ্তক শব্দের অর্থটি চমৎকার- হয় জয় না হয় মৃত্যু। ১৯৬৪ সালে রচিত এই উপন্যাসটি ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। সংশপ্তক উপন্যাসের কাহিনির শুরু ইংরেজ আমলের অন্তিমকালে, শেষ পাকিস্তান আমলের সূচনাপর্বে ।কাহিনির অনেকখানি স্থাপিত পূর্ববঙ্গের গ্রামাঞ্চলে,খানিকটা কলকাতা ও ঢাকায়। এর বৃহত্তর পটভূমিতে আছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ,মন্বন্তর ,পাকিস্তান আন্দোলন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘটনা। এতে প্রধান্য ভাল করেছে শাখা প্রশাখাসমেত এক সৈয়দ পরিবারের কথা। তার এক সৈয়দ প্রাচীন পন্থী নান সংস্কারের সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষা ও ইংরেজের চাকরি সমন্বিত করেছেন। আরেক সৈয়দ স্ত্রী-কন্যা ফেলে নিরুদ্দেশযাত্রা করে দরবেশ হয়েছেন। প্রথমোক্তজনের পুত্র জাহেদ আধুনিক শিক্ষা জীবন বোধ আয়ত্ত করে প্রথমে পাকিস্তান-আন্দোলন এবং বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রাচীনতার সঙ্গে তার ভয়াবহ দ্বন্দ্ব। কাহিনির শেষ হয় বাম রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার কারণে জাহেদের গ্রেফতারে এবং তার প্রতি রাবুর দেহাতীত প্রেমের স্থিতিতে।
৪২। 'জীবন আমার বোন' লেখক- মাহমুদুল হক। জীবন আমার বোন গ্রন্থের পেছনের প্রচ্ছদে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন-‘খুব বেশি নয় তার রচনার পরিমাণ কিন্তু মাহমুদুল হক যখনই লেখেন, লেখেন স্থায়ীভাবে, বারবার পড়তে হয় তার প্রতিটি বই, অসামান্য ভাষা শিল্পী তিনি। উপন্যাসে তিনি একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোর ছবি এঁকেছেন কাব্যের ভাষায়। ভিন্ন চোখে দেখে ঘটনার বর্ণনা করেছেন একান্তই নিজস্ব শৈল্পিক ভাষায়। অশরীরী উপন্যাসেও একাত্তরের কথা, পাক হানাদার ক্যাম্পে অম্বিয়ার করুণ যন্ত্রণা-পরিণতি পাঠকের কাছে দাঁড় করিয়েছেন।
৪৩। 'উপনিবেশ' লেখক- নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়। উপন্যাসটি তিন খন্ড।
৪৪। 'অলীক মানুষ' লেখক- সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ। এই উপন্যাস সম্পর্কে লেখক নিজেই বলেছেন- 'অলীক মানুষ উপন্যাসটা লেখার পেছনে ছিল অগ্রজ গৌরকিশোর ঘোষের প্রণোদনা। মুসলিম জীবন নিয়ে এতকাল যা কিছু লিখেছি তার নির্যাস বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। নিরন্তর সংবাদ লিখতে লিখতে যখন আমার হাত বসে যাওয়ার দশা, ঠিক সে অবস্থায় আর কোনো কিছু না ভেবে আমার মাওলানা দাদা সম্পর্কে লিখতে শুরু করলাম। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবক্তা এই মানুষটি, গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল যাঁর কাজ, 'আংরেজ হঠাও' স্লোগান দেওয়া কট্টর মৌলবাদী এই পিতামহটি যে রসকষহীন ছিলেন তা নয়, নানা বৈপরীত্যে গড়া আশ্চর্য এক আকর্ষণীয় চরিত্র।
৪৫। 'আমরা হেঁটেছি যারা' লেখক- ইমতিয়ার শামীম। ইমতিয়ার শামীম স্পষ্টতই একই সঙ্গে গল্প ও উপন্যাস-লেখক, তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ডানকাটা হিমের ভেতর ও গল্পগ্রন্থ শীতঘুমে একজীবন একই বৎসর প্রকাশিত হয়েছিল। এই শীতঘুমে…-র গদ্যে যে-কাব্যময়তা ছিল তার থেকেও তিনি সরে এসেছেন অনেক। তার লেখায় আগের মতোই রাজনীতি উপস্থিত কিন্তু তা কোনওভাবেই কাহিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং অনেক বেশি অন্তঃস্রোতে এই আবহ ধরা পড়ে। তাঁর উপন্যাস আমার হেঁটেছি যারা এবং গল্পগ্রন্থ গ্রামায়নের ইতিকথা তার পূর্বেকার রচনা থেকে আলাদা করে তুলেছে। বিষয় ও আঙ্গিকের দিক দিয়ে এটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগ্রন্থ।
৪৬। 'আমি তপু', 'আকাশ বাড়িয়ে দাও' এবং 'আমার বন্ধু রাশেদ' লেখক- মুহম্মদ গাফর ইকবাল। “আমি তপু” মুহাম্মদ জাফর ইকবালের এক অনন্য কিশোর উপন্যাস। এই উপন্যাসে লেখক মানুষের এমন বয়সের এমন এক পরিস্থিতির করেছেন যেই বয়সে যেই পরিস্থিতিতে আমরা কেউ পড়লে কি ঘটবে আমাদের জীবনে তা এই বই পড়লে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। জাফর ইকবালের সেরা কিশোর উপন্যাসের মধ্যে এই উপন্যাস নিঃসন্দেহে অন্যতম। একজন মানুষ সে বড় হোক কিংবা ছোট, তার জন্য একটা পরিবার যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা এই গল্প পড়লে অনুধাবন করা যায়। সেই সাথে বোঝা যায়, প্রতিভার বীজ লুকিয়ে থাকে সবার মাঝে, প্রয়োজন অঙ্কুরোদ্গমের পরিবেশ।আর প্রত্যেক খারাপ মানুষের জীবনে থাকে এক ভয়ংকর খারাপ ইতিহাস। কেউ খারাপ হয়ে জন্মায় না।
'আকাশ বাড়িয়ে দাও' শুধু বলব, বইটা পড়ুন। তারপর আপনি বলুন।
'আমার বন্ধু রাশেদ' সম্পর্কে লেখক বলেছেন- ‘আসলে আমার বন্ধু রাশেদের ঘটনাগুলো ১৯৭১-এ দেশের সবখানেই ঘটেছে। আমাদের দেশের কিশোরেরাও কিন্তু অসম্ভব সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। সেদিক থেকে বলতে গেলে ঘটনাগুলো সবই সত্যি। কিন্তু যে চরিত্রগুলোর কথা আমি বইয়ে লিখেছি, তারা সবাই কাল্পনিক।’
৪৭। 'ক্রাচের কর্নেল' লেখক- শাহাদুত জামান। লেখক শাহাদুজ্জামান'র টান টান উত্তেজনায় ভরা 'ক্র্যাচের কর্নেল' বইটিকে শুধুমাত্র একটি উপন্যাস বললে কম বলা হবে। কারন, এই অসাধারণ বইটি পড়লেই বুঝা যায় লেখক অনেক সময় নিয়ে, অনেক গবেষণার পর এই বইটি লিখেছেন। তার লেখনি ক্ষমতার গুণে এই বইটি একটি সাধারণ উপন্যাস থেকে কর্নেল তাহের-এর অসাধারণ জীবনী হয়ে উঠে। যারাই এই বইটি পড়বেন, তাদের কেউই যে বইটি শেষ না করে উঠতে পারবেন না এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়।
৪৮। 'ফুল বউ' লেখক- আবুল বাশার। সম্পর্ক, সমাজ এবং ধর্ম নিয়ে চমৎকার উপন্যাস।
৪৯। 'কৃতদাসের হাসি' লেখক- শওকত ওসমান। সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন এবং রাজনীতির অন্ধকার দিক লেখক সহজ সরল সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
৫০। 'নিশি কুটুম্ব' লেখক মনোজ বসু। মনোজ বসুর বই গুলর মধ্যে একটা আলাদা বন, জঙ্গলএর গান্ধ পাওয়া যায়।
(৬ষ্ঠ পর্ব আগামীকাল দেয়া হবে।)
বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (পাঁচ)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সত্যি বলছি, চাইবো না
সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্থান.....
শেখস্থান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন