কষ্ট আর কষ্ট। অনেক সময় মাথা ধরে যায়, মাথায় হাত চেপে বসে থাকি। মগজের বহুল ব্যাবহারে মনে হয় মগজটার খুব ক্ষুদ্র কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে গেল। মানুষের অনেক সীমাবদ্ধতা। সে তার মগজের বাইরে যেতে পারে না।
তুষার পড়ছে। মনে হচ্ছে আকাশে অনেক শিমুল তুলা। সেই তুলা কেউ একটা চিকন বেত দিয়ে অবিরাম পেটাচ্ছে। খন্ড বিখন্ড তুলার মত তুষার মাটিতে পড়ে জমা হচ্ছে। মনে হচ্ছে অবিরাম এইভাবেই তুষার পড়তে থাকবে, শেষ হবে না।
মনসুর নামের একজনের সাথে কথা হয়েছিল বছরখানেক আগে। মনসুর শহরের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত। এমনিতে এই শহরটা অনেক পরিচ্ছন্ন। তবুও মাঝে মাঝে রাস্তায় কিছু ছোট ছোট কাগজের টুকরা পড়ে থাকে, পড়ে থাকে সিগারেটের টুকরা। মনসুর সেসব কুড়ায়। ওর কাজের যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে একটা বড়সড় কালো পলিথিনের ব্যাগ, একটা বেলচা যেটার হাতলটা কাঠের আর অনেক লম্বা, একটা লম্বা হাতলের ঝাড়ু। মনসুর সকাল হতেই এসব নিয়ে বের হয়ে পড়ে। মনসুরের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় আমার হোষ্টেলের সামনে, একদিন রাত দশটার দিকে। আমি আমার হোষ্টেলের সামনে সামান্য হাটাহাটি করতে করতে সিগারেট টানতে ছিলাম। সে আমাকে হঠাৎ করে থামিয়ে কথা বলতে শুরু করে। আমি প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না তার উদ্দেশ্য কি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো সে একটা সিগারেট চাইবে আমার কাছে। এই শহরটায় একটা সিগারেট সংস্কৃতি আছে। আপনি চাইলে পথের মধ্যে যে কাউকে থামিয়ে সৌজন্য সম্ভাষন করে একটা সিগারেট চাইতে পারেন যদিও সে আপনার পরিচিত নয়। কিন্তু মনসুর আমার কাছে সিগারেট চায় নি। সে নিছক আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে চেয়েছিল। আমি তাকে কথা বলার এক পর্যায়ে নিজ থেকেই একটা সিগারেট প্রস্তাব করলাম। সে আমার প্রস্তাব নাকচ করে নিজের পকেত থেকেই একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করল এবং বলল সে এই ব্র্যান্ডের সিগারেট ছাড়া অন্য কোন সিগারেট খায় না। যেহেতু আমার সিগারেট অন্য ব্র্যান্ডের ছিল তাই সে আমার সিগারেট নিল না। সে তার নিজের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট ধরাল। আমার নিজের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে, আমি আরেকটা ধরালাম। আমরা উদ্দেশ্যহীনভাবে কথা বলতে লাগলাম নানা বিষয়ে। মনসুর আমার সম্পর্কে জানতে চাইল, বিভিন্ন প্রশ্ন করল। আমিও মনসুর সম্পর্কে জানতে চাইলাম। মনসুর আজারবাইজান থেকে এসেছে বহু বছর আগে এই শহরে। তার জীবনের বড় এক অংশ কেটেছে এই শহরে। সে তার অতীত জীবনের কথা বলা শুরু করল।
চলবে.........