এক-----
ঘরটা আবছা অন্ধকার, ড্রয়িং রুমের এনার্জি বাল্পের আলো সেরেয়ারস কাপড়ের হাল্কা নীল পর্দা ভেদ করে ঘড়টিতে হাল্কা নীল আভার সৃষ্টি করেছে । আমার খাটটি উত্তর-দক্ষিণ করে বসানো । উত্তর দিকে মাথা রেখে আনমনে কি যেন সব ভাবতেছিলাম । পাশের বাসার ফুল ভলিউমে তেরি মেরি -মেরি তেরি টাইপ গানের কারণে ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো। আমাদের চারপাশটা ডিজিটাল অবজেক্টে ভরে গেছে । একটি মুহূর্ত আমরা এসব অবজেক্ট ছাড়া চলতে পারি না ।আম্মা হরহামেশা একটা কথা বলে অলস মস্তিষ্ক নাকি শয়তানের কারখানা। শয়তান নাকি অলস মস্তিষ্কে বাসা বাঁধে তারপর ধীরে ধীরে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।আমি লজিক খোঁজার চেষ্টা, করি এতদিন ধরে নিজ পৃথিবীর চারপাশ থেকে দেখে বুঝে নিজ গুণে যে মস্তিষ্ককে তৈরি করছি কিছুদিন রেস্ট নিলেই তা শয়তানের হয়ে যাবে ??
তাহলে কেন অতীতগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয় না ? কেন হারিয়ে যায় না সেই সব স্কুলের সাইকেল ভ্রমণগুলি, কলেজের গিটার শিখার সেই অসাধারণ সময়গুলি , ভার্সিটি জীবনের চারটি বছরের জানা বা অজানা কথাগুলি । কেন হারিয়ে যায় না রাগে অথবা অনুভবে তিনি ফিরে আসবেন হইত আজকেই আসবেন ভেবে কাটানো সময়গুলি, জেল কালির লিখা সিরে কুটিকুটি করা সেই জীবনের ডায়রির মুহূর্তটি । খারাপ ভালোর মাঝে কাটানো সময়গুলো বারবার সামনে এসে চলার পথকে করে জটিল আরো কঠিন আরও দ্বিধাগ্রস্ত ।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতে কখন যে নিজের সব কিছু ভুলতে শুরু করেছি। কি হতে চেয়েছিলাম বা কি হতে চাই এর মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি । ভয় গ্রাস করেছে আসলে করেই চলেছে ।
লাইটার বেটা যে কোথায় পরে আছে , ডার্বি সিগারেটটি হাতে মধ্যে প্রায় সিদ্ধ হতে চলেছে । তাকে মুক্ত করার জন্য লাইটার মহাশয়কে খুঁজে চলেছি আর তার কোন হদিস নেই ।
দুই-----
ভ্রমণটা খুব একটা ভালো হল না, অনেক কষ্টে মেয়েটিকে রাজি করিয়ে একটু সমুদ্রস্নান করতে বেরিয়েছিলাম সেটাও ঠিক মত হল না । কল চলে এলো ।তাতে অবশ্য মেয়েটি খুব একটা রাগ করেছে বলে মনে হয় না । একটু জোর করেই এনেছিলাম তো তাই। মেয়েটির সাথে বিয়ে হয়েছে প্রায় এক বছর হতে চলল ।এই প্রথম তাকে নিয়ে একটু ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম । তাতেও গুরেবালি ।
লাশটি বিছানায় পরে আছে । গুলিটি ঠিক কপালে লেগেছে । লাশটিকে ঘরটির দক্ষিণ দিকে মুখ করে রাখা হয়েছে । তার ঠিক সামনে একটি লোহার তৈরি ফুলদানী, ফুলদানিটি রক্তে মাখা । আর দেয়ালে বিখ্যাত ইতালীয় রেনেসাঁসের কালজয়ী চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা । ঘরের দেয়ালে অল্প টাকায় শিল্পের ছোঁয়া ।
খুব একটা বড় না হলেও দুইজনের প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র ঠিকঠাক ভাবে এঁটে গেছে ঘরটিতে । দুই শয্যার বিছানা ,আলমারি , ডানদিকে রাখা ড্রেসিং টেবিল
সবকিছুই পরিপাটি করে সাজানো । দেখে মনে হবে এই মাত্র সব কিছু সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ।
এনার্জি লাইটে আলোকিত ঘরটির মাঝে এক চিলতে সুখের ছোঁয়া স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায় । কিন্তু এখন অন্ধকার । অনেক বেশি অন্ধকার ।
ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে কাজ করছি চার বছর হতে চলল । সখের বসেই এই পেশাকে নিজের করে নিয়েছি । ব্যোমকেশ, ফেলুদা বা শার্লক হোমসের কাহিনী যতটা উপভোগ্য তার থেকে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর কাজটিকে নিজের করে নিয়েছি । পরিণতি বা ফল নিয়ে ভাবা হয় না শুধু পরিণতির পূর্বের সময়কে নিয়ে ভাবতে হয় অনুভব করতে হয় । সবটা যেন এক কাল্পনিক গল্পের মত । একটু পর পর যার চিত্র পরিবর্তন হয় ।
(চলবে......)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫২