১ম পর্ব :
ধোঁয়া উঠা কফির মগটি টিউবলার কলমদানির পাশে রাখা আছে । আংশিক অন্ধকার ঘরটি যেন সময়ের সাথে সাথে আশ্চর্যজনক ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে । ল্যাপটপ এর লেড লাম্প এর আলো আর একটি নীল খামে মোড়া চিঠি ।
সব কিছু খুব সাধারণ ছিল এইতো ঘণ্টা খানেক আগে । কিন্তু চিঠিটির এক একটি লাইন ইফতেখার হাসানের সব কিছু এলোমেলো করে ফেলেছে ।
তার জীবনের সব কিছুই তো খুব স্বাভাবিক, সহজ, সাধারণ । তাহলে এই চিঠির মানে টা কি !
অনেক নামিদামি একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরীটা পায় সে শুধু মাত্র নিজের চেষ্টাতেই ।তবে হাসান কখনো ভাবে নি প্রথম সাক্ষাতে এত ভাল একটা চাকরী পাওয়া সম্ভব । বরাবর এর মত ভাল ছাত্র হিসেবে নিজেকে জাহির করেছে সে । তবে চাকরীটা পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলতে সে দ্বিধা করে না ।
একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার মা-বাবা মারা যাবার পর থেকে মিসেস রেহেনা তার দেখাশুনা করে । সম্পর্কে তিনি হাসানের ফুফু । তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা । দিনাজপুর জেলার একটি থানা শহরে জীবনের বেশিভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন তিনি । হাসান আর তার একমাত্র কন্যা নিলা এই নিয়েই তার জীবন । পড়াশুনার জন্য যখন হাসান রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমায় সেদিন মিসেস রেহেনার চোখে অবেক্ত ভালবাসা দেখেছে হাসান কিন্তু তাও প্রকাশ করেন নি মিসেস রেহেনা । কিভাবে ভালবাসা লুকানো যায় তা তিনি ছাড়া আর কেউ পারে কিনা হাসানের জানা নেই ।
সড়ক দুর্ঘটনা আর একজন ইতিহাসবিদের ছেলে এর বাইরে হাসার আর কিছু জানে না তার বাবা মার সম্পর্কে । কোনদিন জানার প্রয়োজনও পরে নি । মিসেস রেহেনা তার মা-বাবার কমতি কোনদিন তাকে অনুভব করতে দেয় নি । কিন্তু আজ এই চিঠির অর্থ সে কোনভাবেই বুঝতে পারছে না ।
কফি হইতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে আর ধোঁয়া উঠছে না । রেডিয়াম এর হাত ঘড়িটি মধ্যরাত এর সময় জানাচ্ছে । মধ্যরাত হাসানের জীবনে খুব স্বাভাবিক কিন্তু আজ কেন জানি সব অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে । বাবা-মা মারা যাবার সাতাশ বছর পর আজ কেন মিসেস রেহেনা এমন একটি চিঠি তাকে পাঠিয়েছেন তা হাসান কোনভাবেই বুঝতে পারছে না ।
তিনি কি ভুল করে লিখেছেন ?? কিন্তু চিঠির শেষ প্রান্তে স্পষ্ট করেই তো লিখা -
“তোমার বাবা মারা যান নি তাকে ইতিহাস হত্যা করেছে ।“
এই কথার অর্থ সে কোনভাবেই ধরতে পারছে না । চিঠিটি পরার পরপর হাসান বারবার বাসায় কল করেছে কিন্তু কেউ ধরছে না । হইত নিলা আর মিসেস রেহেনা ঘুমিয়ে গেছেন ।
আকস্মিক তার দরজায় কেউ শব্দ করছে । শব্দটা ক্রমশ বাড়ছে কিন্তু এত রাতে কে হতে পারে । হাসান দরজার দিকে এগিয়ে গেল ।
-কে ?
- ভাইয়া আমি তাড়াতাড়ি দরজা খোলো ।
কণ্ঠটি অনেক পরিচিত এইটা নিলার কণ্ঠ কিন্তু এত রাতে নিলা । আবার ঢাকায় কিভাবে ???? তাড়াতাড়ি দরজা খুলেই হাসানের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল । সে এসব কি দেখছে কোন স্বপ্ন নয় তো !
চলবে ………
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৫