জীবনের কতশত বাস্তবতা পেরিয়ে সেই বাস্তবতাতেই রয়ে গেছি।কতটা ঘটনাবহুল আমাদের এই জীবন। কত কিছু মিলেমিশে একাকার আমাদের জিবনের প্রতিটি ক্ষণ ।কত পেপারের পাতা উল্টানো সৃতি।
এইতো সেদিনের ঘটনা,রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আপন মনে। চোখের সামনে ঘটে গেল একটি দুর্ঘটনা। বাসটি পিষে দিয়ে গেল মোটরসাইকেল আরোহীটাকে। সে কি কোন সময়ের জন্য ভেবেছিল সেদিনটি তার সর্বশেষ দিন ।
গতকাল কাজের বুয়াটার ছোট বাচ্চাটা মারা গেছে। ভাবতেও অবাক লাগে এত অল্প সময় নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল এই শিশুটি।কিবা পেল এই পৃথিবীতে সে ??? পৃথিবীটাকে চেনার আগেই বিদায় নিতে হল এই গতিময় পৃথিবী থেকে।
মোবাইল এর রিংটোন এ সঙ্গতি ফিরে পেলাম। আসিফ ফোন করেছে।
-কি রে কোথায় তুই?
আমি বাসায়,কেন কি হয়েছে?
-আর বলিস না,চরম এক কাহিনী।তুই তাড়াতাড়ি টিএসসিতে চলে আয়।দেরি করিস না। এখন রাখি সবাইকে খবরটা দিতে হবে।
এই আসিফটাও পারে। ছোটখাটো সব ঘটনায় নাকি চরম ঘটনা।
সেদিন কোথা থেকে নাকি শুনেছে মিষ্টি খাইলে মন ভাল হয়,তারপর সবাইকে ডেকে মিষ্টির উৎসব। আমাদের মন ভাল হয়েছে কিনা জানি না তবে আসিফ এর মন ভাল হয়েছিল এটা নিশ্চিত। মাঝে মাঝে এসব আইডিয়া ও কোথা থেকে যে পায়।
এসব পাগলামি করলে ও ছাত্র হিসেবে ও খুব ভাল।প্রতি বছর নিজের স্থান টিকিয়ে রাখে।
হাতমুখ ধুয়ে এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পরলাম।
রাস্তায় এসে সেই চিরচেনা ঢাকাকে দেখতে পেলাম।
এত মানুষের ভিড়ে প্রত্যেকটি মানুষ ছুটে চলছে তার গন্তব্যের দিকে।মাঝে মাঝে এই শহরটাকে অনেক নিষ্ঠুর মনে হয়।এত মানুষ কিন্তু কথা শুনার মত কোন মানুষ নাই। সবাই ছুটে চলেছে নিজের জীবন পথে।
১১ টা বাজলো টিএসসিতে জাইতে।
তারপর একেবারে আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। কেক,বেলুন,ফুল নিয়ে সবগুলা হাজির।বুঝতে পারলাম আজ আমার জন্মদিন। এসব আমার কখনো মনে থাকে না কারন এগুলো আমার গুরুত্বের বাইরে।
কিন্তু এই আসিফটা সব কিছু মনে রাখে। ওকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ওর সাথে আমার কবে প্রথম কথা হয়েছিল আমি নিশ্চিত ও সময়সহ বলে দিতে পারবে।
জন্মদিন ভুলে যাওয়ার শাস্তি হিসেবে আমাকে রিক্সা সহযোগে পুরাণ ঢাকার স্পেশাল নান্নার বিরিয়ানি খাওয়াইতে হবে।
এখন তো পরলাম মসিব্বতে,বাসা থেকে টাকা নিয়ে বের হইনি।
তাতে অবশ্য সমস্যা হবে না । কারন নিরা আছে,কেন জানি এই মেয়েটা আমাকে অসম্ভব বুঝতে পারে। আমার প্রতিটি মুহূর্তের অবস্থা ও টের পেয়ে যায়।
ও আচ্ছা আমার গ্রুপ এর কথা তো বলায় হল না। আসিফ,নিরা,প্রেমিক জুটি তিশা-রাইয়ান,মস্ত কবি তানিম আর ভাবলেশহীন আমি অভ্র । এই নিয়েই আমাদের সুপার সিক্স ।
আমাদের যেকোনো প্লানিং এ তিশা আর রাইয়ান এর মত হ্যাঁ-সূচক। কিছু একান্ত সময় পাবার আশায় হইত এই হ্যাঁ সূচক কার্যকলাপ। যদিও কবি তানিম বারবার কবিতার লাইনে তাদের একান্ত সময়ে ভাঁটার সৃষ্টি করে।
ওদের প্রেম কাহিনীটা যে কোন বাংলা সিনেমাকে হার মানাবে। বাণিজ্য মেলাতে প্রচণ্ড ভিড়ে ধাক্কা সাথে সাথে I love u ….. কিছু বুঝার আগেই হ্যাঁ সূচক উত্তর । তারপর দেখা গেল ২ জন একই Department এ । ভেবেছিলাম ২,৩ মাস হইত টিকবে কিন্তু এই ২টা সবাইকে ফেল মেরে ৩ বছর পার করে ফেললো ।
রাইয়ান এর ভাষায়--- বুঝলি অভ্র জীবনটা অনেক ছোট যা পাবি লাফায় লাফায় গ্রহন করবি। যদিও ওর লাফানি এখন পুরপুরি বন্ধ । বেচারা !!
ধরিস না হাত রাখিস না চোখে চোখ,
আমি চাহি না চাহি না,
তোর জীবন টা এভাবে ধ্বংস হোক.........।।
মস্ত কবি তানিম সাথে সাথে কবিতার লাইন দিয়ে খোঁচা দেয়। এই তানিমটাও কথায় কথায় মিল রেখে মস্ত কবিতা বানিয়ে ফেলে । মাঝে মাঝে ভাবি এত ছন্দ আসে কোথা থেকে।
আর আমি ছন্দ ছাড়া।
৫ জন চাঞ্চল্যের জীবনে এক অধম বলা যায়। কেন যেন নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করে না।
নিরা মেয়েটাকে যে আমি অসম্ভব রকম ভালবাসি তা হইত কোনদিন বলা হবে না ।
তাতে কি জীবন তো থেমে থাকে না আমার পথ হইত এভাবেই চলবে।
পরের বছর আবার জন্মদিন আসবে হইত আসিফ আবার মনে করে দিবে । কিন্তু একসময় হইত কিছুই থাকবে না । তখন আমি একা পথ চলবো ............।। আমার পথে.........।।
থাকবে সব স্রিতি,ফেলে আসা সব সুন্দর দিন । আর কিছু হতাশা।সব নিয়েই এই জিবনের সমাপ্তি ঘটবে । হইত কোনদিনও বলতে পারব না তোদেরকে কতটা ভালবাসি ।
কারন আমি অনুভূতিকে প্রকাশ করতে জানি না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৬