মহাজোট সরকারের আমলে বিরোধীদলের দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা দ্বিতীয় বারের মতো হরতাল চলছে আজ রোববার। সরকারবিরোধী তেমন কোনও ইস্যু বিএনপিসহ তাদের জোটভুক্ত দলগুলো কাজে লাগাতে পারছে না।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতাদের কারাগারে থাকা আর নানা কোন্দলের কারণে বিএনপি’র সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি তেমন কাজে দিচ্ছে না। বর্তমান মহাজোট মতা গ্রহণের ১৮ মাসের মাথায় একটি আর ২২ মাসের মাথায় মাত্র দ্বিতীয় হরতালই এর প্রমাণ। অথচ বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের প্রথম ১৮ মাসেই আওয়ামী লীগ ২৫টি হরতাল ডেকে রাজনীতির মাঠ গরম করে তুলেছিল।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগের এ বছরেরই ১৯ মে বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ২৭ জুন পালিত হওয়া ওই হরতালটিই ছিল মহাজোট সরকারের আমলে বিরোধীদলের প্রথম পূর্ণদিবস ও দেশব্যাপী হরতাল।
তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ-খনিজসম্পদ ও বন্দর রা জাতীয় কমিটি সরকারের মতা গ্রহণের ৮ মাসের মাথায় অর্ধদিবস হরতাল পালন করে।
অন্যদিকে পেছনের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, বিগত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দিনই আওয়ামী লীগ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। মতা গ্রহণের ৩৫ দিনের মাথায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট হরতাল দেয়, যাতে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল। এর ঠিক ১৭ দিন পর মাথায় আওয়ামী লীগ নিজেই হরতাল দেয়।
জোট সরকারের প্রথম ১৮ মাসে আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলো অন্তত ২৫টি হরতালের কর্মসূচি পালন করে। আর জোট সরকারের পুরো পাঁচ বছরে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছিল।
অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। এতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ১০ অক্টোবর বঙ্গভবনে খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। ওইদিনই আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবরোধের ডাক দেয়।
ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৩৫ দিনের মাথায় ১৫ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। আওয়ামী লীগ তাতে সমর্থন দেয়। জোট সরকারের মতা গ্রহণের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ রাজধানীতে ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করে আর পরের বছর ৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করে। ১৪ জানুয়ারি ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীর চর এলাকায় আওয়ামী লীগ হরতাল পালন করে। ২ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ব্যানারে ৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করা হয়। ৬ এপ্রিল আওয়ামী লীগের ডাকে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। এরপর ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে, ৪ মে লালমনিরহাট ও রাজশাহীতে ফের হরতাল পালন করে আওয়ামী লীগ।
জোট সরকার ঘোষিত প্রথম বাজেটের প্রতিবাদে ১৬ জুন দেশব্যাপী হরতাল পালন করে আওয়ামী লীগ। ২২ জুলাই বগুড়ায় ও ২৯ জুলাই ঢাকায় অর্ধদিবসের পর ৩০ জুলাই আবার সারাদেশে পূর্ণদিবস হরতাল পালন করে আওয়ামী লীগ।
২০০২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীও অর্ধদিবস হরতালের মধ্যদিয়ে পালন করে আওয়ামী লীগ। ২৫ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর ও কাফরুলে হয় হরতাল। ১ সেপ্টেম্বর সরকাল-সন্ধ্যা হরতাল হয় সারাদেশে। ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ ও ছাত্রঐক্য ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল করে। ১৭ সেপ্টেম্বর যশোরেও পালিত হয় অর্ধদিবস হরতাল। ৬ অক্টোবর খুলনায় সকাল-সন্ধ্যা, ২৪ অক্টোবর ঢাকায় অর্ধদিবস, ৩ নভেম্বর খুলনায় আবারও অর্ধদিবস হরতালের পর ১২ ডিসেম্বর ছিল বছরের সর্বশেষ দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।
২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ৬টা থেকে ২টা এবং ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে অর্ধদিবস হরতাল পালন করে আওয়ামী লীগ। ১০ মার্চ সারাদেশে হরতাল ডাকে ১১ দল। তাতে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। এর আগে ৬ মার্চ খুলনায় হরতাল পালন করে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মহাজোট সরকারের এ আমলে বিএনপি সরকারিবিরোধী অন্দোলনের বিভিন্ন ইস্যু পেলেও কোনওভাবেই রাজনৈতিক ময়দান গরম করতে পারছে না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির শীর্ষনেতা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতির অভিযোগ এবং কোন্দলের কারণে সাংগঠনিকভাবে দলের প্রভাব বিস্তার না হওয়াই এর কারণ বলে মনে করেন তারা।
বিগত জোট সরকারের ১৮ মাসে জঙ্গি উত্থান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মন্ত্রী পর্যায়ে চরম দুর্নীতি, সরকারের সমান্তরাল নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় হাওয়া ভবনের ব্যক্তিদের বিভিন্ন অপকর্ম ছিল আওয়ামী লীগ তথা তৎকালীণ বিরোধীদলের উল্লেখযোগ্য ইস্যু।
বর্তমান মহাজোট সরকারের সস্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি, বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করতে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি সময়মতো বিনামূল্যে সার ও কীটনাশক কৃষকের ঘরে ঘরে পৌঁছানোসহ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গণ চাঙ্গা করতে পারছে না বিএনপি।
সাংগঠনিকভাবে রাজনীতির মাঠ এখনও আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিরোধীদল তেমন সুবিধা করতে পারছে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Click This Link