somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক তিনটি ঘটনা -৩

২৭ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আশা আমার ছোট বোনের বান্ধবী। তাকে যখন প্রথম দেখি তখন তার বয়স ১৩-১৪ বছর হবে। মফস্বলের আলো-হাওয়া-জলে বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত পরিবারের শ্যামলা গড়নের কৃশকায় একটি মেয়ে। চেহারায় এমন কোন বৈশিষ্ট্য ছিলনা যে তাকে আলাদা করে মনে থাকে। আর সব মেয়ের মতই সে বেণি দুলিয়ে স্কুলে যায়, বই-খাতা হাতে নিয়ে দল বেধে পায়ে হেটে ব্যাচে স্যারের কাছে ইংরেজি এবং গণিত প্রাইভেট পড়তে যায়, কারণে অকারণে খিলখিল করে হেসে বান্ধবীদের গায়ে ঢলে পড়ে। ঢাকা থেকে বাড়ি গেলে ঈদ বা অন্য কোন আনুষ্ঠানে কখনো কখনো বোনের বান্ধবীদের দেখেছি, কিন্তু এই ফাজিল পুঁচকে দলকে গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন কখনো অনুভব করিনি।

আমার বোন তখন বোধহয় নবম শ্রেণি। তার বই পড়ার খুব নেশা। প্রবল উৎসাহে কখনো মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বই পড়ছে, আবার কখনোবা সেবা প্রকাশনীর তিন-গোয়েন্দার সিরিজ পড়ে শেষ করে ফেলছে। পা ঠক হিসেবে সে সর্বভুক, অবশ্য শুধু পাঠ্য পুস্তকগুলো ছাড়া। সেবার বাড়ি এসে দেখি আমার দু'খন্ডের শার্লক হোমস অমনিবাসের অবস্থা শোচনীয়, মলাট গেছে ছিড়ে, বইয়ের পাতাগুলো খুলে খুলে পড়ে এমন অবস্থা। ছোট বোনকে বকুনি দিতেই সে জানালো এটা তার একার দোষ নয়, তার এক বান্ধবী- নাম যার আশা, সে নাকি বইটা ধার নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে এই অবস্থা করে। বললাম তার বান্ধবী উইপোকা নাকি যে বই না পড়ে বই খেয়ে ফেলেছে। বান্ধবীকে উইপোকা বলায় সে বড় মনক্ষুণ্ন হলো। বললো সে আর কখনই আমার বই ছুঁয়েও দেখবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

বোনের মনক্ষুণ্ন হওয়া দেখে কথা ঘুরিয়ে বললাম যে উইপোকার কথাটা উদাহরণ মাত্র। ভেবে দেখ, উইপোকার কাছে বইয়ের পাতার লেখাগুলোর কোন মূল্য নেই, তার কাছে বই হলো শুধু একটা খাদ্য। এমন কী হতে পারে যে আমরা যেভাবে এই বিশ্ব দেখি, সে দেখাটাও অন্য কোন জগতে বা অন্য কোন গ্রহের উন্নত প্রাণীর চোখে উইপোকার বইয়ের পাতা খাওয়ার মতো একটা বিষয়। যখন তাকে "বাস্তবতা কি" এই প্রশ্ন যে কত জটিল হতে পারে, এ বিষয়ে জ্ঞান দিচ্ছি তখন সে ইতস্তত করে একটা অদ্ভুত কথা বললো। সেটা হলো তার বান্ধবী আশা নাকি ভবিষ্যৎ দেখতে পায়!

ঘটনার ব্যাখ্যায় সে যেটা বললো তা হলো আশার ছোটবেলা থেকেই সমস্যাটা ছিল। হয়ত সে রিকশায় করে কোথাও যাচ্ছে, হঠাৎ তার মনে হলো সামনের রিকশা থেকে এই মুহূর্তে একজন মহিলা আর তার ছোট্ট বাচ্চা পড়ে যাবে। হতোও তাই। হয়ত কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট যেতে না যেতেই একজন মহিলা আর ছোট্ট বাচ্চা পড়ে যেত রিকশা থেকে। আবার হয়ত তার মনে হলো তাদের প্রতিবেশী বুড়ো দাদু আজ রাতে মারা যাবেন। পরদিন সকালে উঠে দেখা গেল মা তাকে ডেকে তুলে বলছেন, পাশের বাসার বৃদ্ধ মানুষটি কাল রাতে মারা গেছেন। এই ভবিষ্যৎ দেখা বিষয়টা আশার জন্য অতি কষ্টকর হয়ে উঠেছিলো। এটা ছোট্ট মেয়েটিকে এত বেশি আতঙ্কগ্রস্ত করতো যে সে প্রায়শই অসুস্থ থাকতো। অভিভাবকেরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কাজের কাজ কিছু হয়নি। দিনের পর দিন আশা হতাশ হয়ে অনুভব করেছে যে, সে আর সবার মত সুস্থ নয়।

হঠাৎ একদিন খুব আশ্চর্যভাবে তার এই অসুখটা ছেড়ে গিয়েছিলো। সেদিন আশা আর তার ছোট ভাই বাসায় একা। বাবা সাত সকালে গিয়েছেন কাজে। মাও কোন একটা কারণে পাড়ার কোন প্রতিবেশীর বাড়িতে গেছেন বেড়াতে। এমন সময় একটা ফকির এসে ভিক্ষা চাইলো। আশা একটা টাকা নিয়ে সেই ফকিরের কাছে যেতেই ফকির তাকে একটু দাঁড়াতে বললেন। আশা কে তিনি বললেন যে তার একটা ক্ষমতা আছে, এটা কী সে রাখতে চায়, নাকি সে রাখতে চায় না। আশা তার সবটুকু শক্তি দিয়ে বললো যে সে এটা থেকে মুক্তি চায়। ফকির তাকে বললেন, ঠিক আছে তবে তাই হবে। এরপর ফকির তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে আশার ভবিষ্যৎ দেখবার ঘটনাটা কমে আসতে থাকলো।

আমার বোনের সাথে সেই কথোপকথনের প্রায় দু-তিন বছর পরে আাশার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। সেদিন সে একাই এসেছিল আমাদের বাসায়। তখন আশা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী। সে যে কবে ফাজিল-পুচঁকে দল থেকে বেড়িয়ে বেশ একটুখানি বড় হয়ে গেছে, সেটা আমার জানা ছিল না। আমার সাথে তার খুব যে বেশি কথা হলো তাও নয়। তার আচরণে মনে হলো, সে যেন আমাকে বেশ চেনে। অতএব খুব বেশি কথার আর প্রয়োজন নেই। মনে আছে সে বলেছিলো "এসব ক্ষমতা থাকা কী ভালো, ভাইয়া?"। আমার মফস্বলী পড়ার ঘরে সে চুপচাপ বসেছিলো। তখন শরৎকাল, কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেছে। শীতল একটা হাওয়া বইছে। আশার সামনের টেবিলে কিছু নাস্তা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোন খাবার সে ছুঁয়ে দেখলো না। আমাদের এক আত্মীয়া তার ছোট মেয়েকে নিয়ে কদিন আগে গ্রাম থেকে এসেছেন। সেই ছোট মেয়েটির কিছুকিছু কথা আমাদের কানে আসছিলো। আশা আমার কাছে আগ্রহ নিয়ে মেয়েটি সম্পর্কে জানতে চাইলো - তারা কবে এসেছে, কোথায় থাকে, এই সব।

আশা চলে যাবার পরে বেশ খানিকটা বাদে আমি ঘর থেকে বের হয়েছি। হঠাৎ দেখি সেই ছোট মেয়েটি আশাকে দেওয়া নাস্তার প্লেট থেকে বিস্কুট উঠিয়ে আগ্রহ ভরে খাচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো আশা কী এই ঘটনাটি আগেই দেখতে পেয়েছিলো?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৩৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×