somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে আসো বাবা

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাক ডাকা একটি সকাল।
রাশেদ সাহেব মর্নিং ওয়াক করতে বের হলেন। ধানমন্ডি লেকের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন অতি ধীর ও মন্হর গতিতে। বয়সের ভার তার জোরে দৌড়ানোর ক্ষমতা হরন করে নিয়েছে। কিন্তু তার মনোবল কমাতে পারেনি। তাই প্রতিদিন তিনি বের হোন মর্নিং ওয়াকে।

সময়টা তার মোটেও ভালো যাচ্ছে না। সরকারি চাকরী থেকে অবসর নেওয়ার পর এখন মোটামুটি তিনি অবসর। সারাদিন তার সময় কাটে ছোট একটি ঘরে। সালেহা বেগম মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। এতগুলো সময় তিনি একা থাকলেও নিজেকে কখনো একা মনে করেননি। কাজের চাপ তাকে অনেক কিছুই ভাবতে দেয়নি। কিন্তু আজ সে নিজেকে অনেক অসহায় ও নিস্ব মনে করেন। যদি আজ সালেহা বেঁচে থাকতো, হয়তো তার দিনগুলো আরো ভালো ভাবেই কাটতো। রফিক তার একমাত্র ছেলে। বিয়ে করেছে অনেক আগেই। তারও একটা ছেলে আছে, রুবেল। তার একমাত্র নাতি। তাকে দেখেই অনেকটা বেঁচে থাকার অবলম্বন মনে করেন তিনি। ইদানিং তার নাতিটাও তাকে খুব একটা সময় দেয় না। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে যায়। এখানে নাকি অনেক পড়ার চাপ। তাই সারাদিন শুধু পড়ালেখা নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। তার ছেলে আর পুত্রবধু সবাই ব্যাস্ত নিজেদের কাজ নিয়ে। তাকে সময় দেওয়ার মতো কেউ নেই।

ইদানিং আরো সমস্যা হচ্ছে তার। পেনশনের টাকাটা নিয়ে অনেক দিন ধরেই ভোগান্তির মধ্যে আছেন। আবার তার ছেলেও টাকাটা চেয়ে রেখেছে অনেক দিন আগে থেকেই। এই টাকাটা দিয়ে সে একটি বিজনেস করবে। কিন্তু এই টাকাটা নিয়ে তার নিজেরও একটা স্বপ্ন আছে। সালেহার ইচ্ছা ছিলো একটা এতিমখানা খোলার। তার জীবদ্দশায় সেটা সে করতে পারেনি। তাই এখন সেটা করার ইচ্ছা আছে তার। কিন্তু ছেলের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেও কোনো সদুত্তর পাননি। ছেলে বলেছে তার চাহিদাটাই আগে।

ছেলের চাহিদা পূরন করতে গিয়ে তিনি আরেকটি বিয়ে করেননি। যদি সৎ মার কাছে তার সন্তান ভালো না থাকে। তাই নিজের ইচ্ছা ও জৈবিক চাহিদাকে অপূর্ন রেখেই তিনি তার ছেলের সব চাহিদা মটনোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আজ সামন্য কিছু টাকার মায়া সেই ছেলে ছাড়তে রাজি না।

আজ সকালেই এটা নিয়ে অনেক তর্কাতর্কি হয়েছে। ছেলে রাগের মাথায় তাকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। আসলে রাগের মাথায় মানুষ অনেক কিছুই বলে। এটা হয়তো তার মনের কথা নয়। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ধানমন্ডি লেকের চারপাশটা ঘুরে আসেন তিনি।

কিন্তু দিন চারেক পরও অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। রফিকের সাথে তার তর্ক যুদ্ধ চলতেই থাকে। আর কিছু হলেই তাকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই ছেলেকেই তিনি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছিলেন।
তার আবদার কখনো প্রত্যাখান করেননি। কিন্তু আজ সে তার সাথে কতো খারাপ আচরনই না করছে।

এক সপ্তাহ পর।
বাসার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও শান্ত। কিন্তু তার মনের ভিতর জটলা বাঁধছে নিয়মিত। ফজরের নামায আদায় করার পর তিনি মর্নিং ওয়াকের জন্য রেডি হচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই বুকের ভিতরটা ব্যাথা করে ওঠে। বুকে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়েন তিনি। ব্যাথায় চোখটি বন্ধ হয়ে আসে অচিরেই। বাবার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভিতরে উকি দেয় রফিক। দেখেন তিনি বসে আছেন। ভিতরে গিয়েই বলেন-
আমার টাকাটার কি হলো? তোমাকে না বলেছি তাড়াতাড়ি করতে। আমার দিকে একটুকুও নজর নেই তোমার। খাওয়া আর শোয়া ছাড়া তো তোমার কোনো কাজ নেই। আর শেষ বয়সে এসে তোমার এতো মনের ইচ্ছা পূরনের কি আছে। আর সকালের হাটাও কি ছেড়ে দিয়েছো নাকি? এভাবে করে আর কতোদিন। তার চেয়ে তুমি চলে যাও। আমার কথা না শুনলে আমার সাথে তোমার থাকা হবে না। -বলেই আলতো করে একটা ধাক্কা দেন তার বাবার গায়ে। বুকের উপর থেকে হাতটা পরে যায় রাশেদ সাহেবের। সব শেষ হয়ে যায় তখন। তিনি চলে গেছেন বহুদুরে, সবার ধরা ছোয়ার বাহিরে।
ডুকরে কেঁদে ওঠে রফিক। তার আর্তচিৎকারে ভরে ওঠে পুরো ঘর। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে। তার ব্যবহার তার বাবার মনকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। কথা বলছো না কেন বাবা? তোমার কি হলো বাবা? আমার টাকা লাগবে না। তুমি কথা বলো বাবা। আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা। আমাকে ক্ষমা করো বাবা।

রাশেদ সাহেব চলে গেলেন সালেহার কাছে। তার শেষ ইচ্ছাটা তিনি পুরন করতে পারেন নি। কিন্তু তাতে কি হবে, ছেলেরটা তো হলো। রফিকের জন্য তিনি রেখে গেছেন তার সমস্ত সম্পত্তি। ভালো থাকুক তার সন্তান।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৪৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×