“আমার দ্বারা আর কিছুই হবে না”, “আমি আর পারছি না”, “আমার কি করা উচিৎ” এমন অসংখ্য প্রশ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। মাঝে মাঝে আমি নিজেও অনেকটা বিরক্ত হয়ে যাই এই সব কথা শুনতে শুনতে। তখন আমার নিজেরই মনে হয় আমার কি করা উচিৎ? এত সব সমস্যা কি করে সমাধান করা যাবে? কয়েক দিন আগে আমার পাশের বাড়ির এক ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার তিন দিন আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। সেই দিনই তার বাবার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। বেচারা ভ্যানচালক বাবা আমার সামনে যে দুঃখ প্রকাশ করেছিলো তা হচ্ছে, ছেলেটা যদি পরীক্ষা দিবে না তবে টাকা খরচ করে কেন ফর্ম ফিলাপ করেছিলো? আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম যখন শুনলাম এই টাকা জোগাড় করার জন্য সেই মানুষটিকে রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে ভ্যান চালাতে হয়েছে। আমি আর সেই অসহায় বাবাকে কিছুই বলতে পারি নি। লজ্জা কিংবা অন্য কিছু আমার মাঝে কাজ করেছিলো কি না আমি তা জানি না, তবে একজন বাবার ঘর্মাক্ত মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল, যা দেখার জন্য আমি সেই সময় প্রস্তুত ছিলাম না। শুধু ভেবেছিলাম সেই ছেলে নিজের কথা ভাবতে না পারে, কিন্তু সে কেন তার পরিবারের কথা ভাবল না?
আমি মনে মনে একটি উত্তর তৈরি করেছি। হয়তো আমি ঠিক হতে পারি বা ভুল। হয়তো ছেলেটি পরীক্ষায় খারাপ করত, কিংবা স্বচ্ছ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলা যায় সে ভালো ফলাফলও করতে পারত। ফলাফল যাই হোক না কেন এই যে, কোন প্রকার চিন্তা না করেই লড়াই থেকে চলে যাওয়া, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে আসলেই আমাদের তরুণ সমাজের উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
কোন কাজ শুরু করার আগেই আমাদের মন একটা অঘোষিত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। সেটা হচ্ছে মনে হয় আমি পারব না। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারই ঘটে থাকে। এই কথা যখন মনের মাঝে জোরালো হয়ে আঘাত হানে তখনই সেই কাজ থেকে কেউ একজন আস্তে আস্তে পিছু হটতে থাকে। অবস্থা যদি খুবই খারাপ হয় তবে ক্ষেত্র বিশেষে সেই কাজ একেবারেই হয় না। আমাদের অবচেতন মনের একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য একটি কাজ হল না। প্রতিনিয়িত এমন অনেক ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটে থাকে। সেই সব কাজ আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি সাধন ছাড়াও সামাজিক বৃহত্তর ক্ষতি করে থাকে।
আমরা ঠিক যত তাড়াতাড়ি হতাশ হয়ে পড়ি সেই সময়ে যদি পরিশ্রমের ব্রত গ্রহণ করি তবে আমাদের না হওয়া কাজগুলোর হওয়ার পথে আর কোন বাঁধা থাকবে না। আমরা কবির কবিতা পড়ি কিন্তু সেই কবিতা থেকে শিক্ষা নিতে চাই না। আমরা ছোট বয়সে “এক বার না পারিলে দেখ শতবার” কবিতা সবাই পড়েছি, কিন্তু সেই কবিতার শিক্ষা আমাদের কতজনের মাঝে আছে? অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আমরা হতাশ হতে পারলেই বরং বেশি খুশী হই। আর যাই হোক কাজটা তো করতে হবে না। আমাদের চোখের সামনে সফলতার যে ঝলক কাজ করে সেই ঝলক নিমিষেই শেষ হয়ে যায় পরিশ্রমের কথা চিন্তা করে।
আমি বাক্তিগত ভাবে অনেককেই খুব মজা করে রবার্ট ব্রুস পড়তে দেখেছি। আবার অনেককেই বড় বড় বিপ্লবীর জীবনী কিংবা বিপ্লবী ইতিহাস পড়ে নিজের মাঝে সেই বিপ্লবী ভাব ফুটিয়ে তুলতে দেখেছি, যারা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলো বিপ্লবী বেশ। কিন্তু আফসোস সেই সব তরুণকেই আবার হতাশায় ডুবতেও দেখেছি। একটু খানি পরিশ্রমের ভয়ে তারা অনেক মূল্যবান কিছু হারিয়েছে। সেই তাদেরকেই আবার বলতে শুনেছি, যা হবার নয় তা হয় হয় নি। কিন্তু পরিশ্রমের মাধ্যমে যে সবকিছু অর্জন করা যায়, সেই কথা তারা অন্তরে লালন করতে পারে নি।
সব কিছুর চিন্তা না করে আমরা যদি শুধু মাত্র আমাদের নিজেদের সামগ্রিক উন্নতি করার জন্য কোন রকম অন্যায় কাজ না করে ক্লান্ত কিংবা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাই তবে আমরা নিজেরা যেমন উপকৃত হবো সেই সাথে উপকৃত হবে আমাদের সামাজিক কাঠামো। আমাদের সামাজিক কাঠামোর উন্নয়ন হলেই আমাদের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত হবে, যা সব মানুষের একান্ত কাম্য।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২০