somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মুখোমুখি রাজ X((X((X((

০১ লা জুন, ২০১২ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সামাজিক জনপ্রিয় যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ইলিয়াস আলী ‘গুম’ রহস্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সোহেল রানা রাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হচ্ছে।

ত্রিশাল থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছে।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

এদিকে, রাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রক্রিয়ার কথা জেনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তার বাবা-মা। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তার সহপাঠীরাও।

তবে বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ হওয়ায় কোনো সহপাঠী প্রকাশ্যে মুখও খুলছেন না। ১৬ মে পুলিশের হাতে আটক হয়ে সোহেল রানা রাজ বর্তমানে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে, ত্রিশাল থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ১৫ মে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সোহেল রানা রাজ তার ফেসবুকের ওয়ালে ইলিয়াস গুম রহস্য নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি ‘প্রধানমন্ত্রীকে জঙ্গলের বাঘের চেয়ে হিংস্র এবং ক্ষুধার্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী তাকে ‘খেয়ে হজম করতে পারবেন না এবং জনগণ প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করবেন’ বলেও মন্তব্য করেন সোহেল রানা রাজ।

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে বমি করে বের করে দেওয়ার কথাও ফেসবুকের ওয়ালে লেখেন তিনি।


এ ঘটনার জের ধরে গত ১৬ মে সকালে সোহেল রানা রাজকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডেকে এনে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মী।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে রাজকে ধরে ত্রিশাল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

ত্রিশাল থানা পুলিশ সূত্র আরও জানায়, রাজকে আটকের একদিন পর ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২০(খ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পরে রাজকে ময়মনসিংহের আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীনুর আলম বাংলানিউজকে জানান, ২৮ মে আটক রাজকে আবার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে রাজ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

তবে কী ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে কথা বলতে আপত্তি জানান এ তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এদিকে, ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, ‘ফেসবুকে এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করে রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করতে চেয়েছিল। এ কারণে তাকে আটক করা হয়। কিন্তু, এখন মামলায় ১২০(ক) ধারা সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ কারণে এ ধারা সংযোজন করতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এখন অনুমতি মিললেই রাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হবে।’

ত্রিশাল থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই অনুমতি মিলতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে ত্রিশাল থানা পুলিশ উল্লেখ করে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে আসামি সোহেল মোল্লা রাজের আপত্তিকর উক্তি ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে দাঙ্গা, জন শান্তিভঙ্গ, সরকার ও দেশ বিরোধী আন্দোলনে উত্তেজনা সৃষ্টি, জন অনুভূতিতে আঘাত এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নু করার শামিল। এ কারণে মামলায় ১২০ (ক) ধারা সংযোজন প্রয়োজন।’

সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. লোকমান হোসেন মিয়াও গত ২২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়েছেন। জেলা প্রশাসক এ চিঠির সত্যতা স্বীকারও করেছেন।

রাজের পরিচিতি

সোহেল রানা রাজ কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী।

তার বাড়ি ফরিদপুর উপজেলার রাজবাড়ি উপজেলায়। বাবা নওশের আলী মোল্লা পেশায় একজন দিনমজুর। মা সখিনা বেগম গৃহিণী। দু’জনেরই বয়স ষাটোর্ধ্ব।

দারিদ্র্যের অন্ধকার ঘরে এক টুকরো আশার আলো হয়ে উঠেছিলেন রাজ। কিন্তু নিজ সন্তানের এমন কাণ্ডে হতবাক বাবা-মা। রাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রক্রিয়াধীন হওয়ার ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা। পাশাপাশি সন্তানের অনিশ্চিত জীবন নিয়েও তারা উৎকণ্ঠা আর অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে প্রতিটি ক্ষণ পার করছেন।

শুক্রবার রাজের বাবা নওশের আলী মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলে না বুঝে এ কাজটি করেছে।’

তিনি নিজের ছেলের নিঃশর্ত ক্ষমার অনুরোধ করেন।

বার বার আলোচনায় রাজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সোহেল রানা রাজ এর আগে ২০১১ সালের ৬ মে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। আটক হওয়ার আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি কমানোর সফল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে তার আন্দোলনের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেমিস্টার ফি ৪ হাজার ৫শ থেকে কমিয়ে ২ হাজার ১শ টাকা করে। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচনায় আসেন রাজ।

তবে তাকে আটকের কারণ হিসেবে ত্রিশাল থানা পুলিশ ওই সময় দাবি করে, গত ৪ মে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখি একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-কর্মচারীসহ ২৫ জন আহত হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় শতাধিক বাস ভাঙচুর করেন এবং ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক সাড়ে ৩ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।

সংক্ষুব্ধ সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজও সেই সময় বিক্ষোভ করেন। পরে ৫ মে গভীর রাতে ভাঙচুরের অভিযোগে ৮শ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। সেই মামলায় গ্রেফতার করা হয় রাজকে।

সোহেল রানা রাজকে নিয়ে ২০১১ সালের ৮ মে ‘কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি কমানোর সফল আন্দোলন: নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় বাংলানিউজে।

পরবর্তীতে তাকে নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠেও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

উপাচার্যের বক্তব্য

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ এসব বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগের ইয়ত্তা নেই। ক্যাম্পাসে সে সব সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাখতো। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে সে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কোনো উপায় ছিল না।’

সুত্র- বাংলানিউজ২৪
১৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×