শরীরে জমেছে মেদ, চেষ্টা চলছে প্রাণান্ত, চলছে খাবার সামলে চলা ও শরীর চর্চা কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। ঝরছে না মেদ। এমন ঝামেলায় আছেন অনেকেই, খুঁজছেন কেন এত চেষ্টার পরেও ওজন কমছে না। কেন?
খাবার গ্রহণে পরিকল্পনা না থাকায় অনেকেই ওজন কমাতে গিয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। টানা না খেয়ে থাকার পরে একবারে বেশি খেয়ে ফেলে বিসমিল্লাতেই গলদ করে বসেন। দিনের মূল খাবারের সময় অর্থাৎ সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার বাদ দিলে চলবে না।। নিজের জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী একটা খাবার তালিকা করে নেয়া সব থেকে ভালো।
প্রিয় পানীয় বাদ না দেওয়া একটি অন্যতম সমস্যা। কোল্ড ড্রিংকস, চা, কফি এগুলোতে রয়েছে চিনি যা আপনার ওজন বাড়াতে সহায়ক। ওজন কমাতে পান করুন চিনি ছাড়া চা, কফি বা ডায়েট সফট ড্রিংকস। সব থেকে ভালো হয় কোমল পানীয় একেবারেই বাদ দিতে পারলে।
সামলে সুমলে খাবার খাচ্ছেন, কিন্তু প্রিয় খাবারগুলো বাদ দিতে পারছেন না, মাঝে মাঝে ফাস্ট ফুড খেয়ে ফেলছেন আর ওজন বাড়াচ্ছেন। ফাস্ট ফুড বাদ দিতে হবে পুরোপুরি। সাথে বাদ দিতে হবে বাইরের বাজে তেল বা ডালডা দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার।
রাতের খাবার যারা দেরিতে খান তারা খাবার ঠিকমতো হজম হওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়লে সেটা মেদ হিসেবে জমা হয়। তাই খাবার খেতে হবে ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে।
পরিশ্রম না করলে মেদ কমে না, তাই পরিশ্রম করছেন কিন্তু কতটুকু করছেন? যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কি করতে পারছেন? যে পরিমাণ ব্যায়াম না করলে শরীরের চর্বি গলবে না সে পরিমাণ ব্যায়াম করেন না অনেকেই কিন্তু মনে করেন পরিশ্রম হয়েছে যথেষ্ট। অপর্যাপ্ত পরিশ্রম ওজন না কমার অন্যতম কারণ।
পুরুষদের থেকে নারীদের ওজন কমাতে বেশি কষ্ট হয়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীরে মেদের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। দেহের কাঠামোগত ভিন্নতার কারণে একই পরিমাণ পরিশ্রমে একজন পুরুষ থেকে একজন মহিলা কম ক্যালরি খরচ করতে পারেন; ফলে ওজন কমাতে নারীদের অধিক পরিশ্রম করতে হয়।
অনিয়মিত শরীরচর্চা আরেকটি বড় ব্যাপার। কিছুদিন নিয়মমতো ব্যায়াম করা হল, এরপরে দীর্ঘ বিরতি; এমন হলে ওজন কমানো সম্ভব নয়। তাই ব্যায়াম করতে হবে রুটিন মেনে, সম্ভব হলে কয়েকজন একসাথে। একা ব্যায়ামে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বাড়ে।
বয়স আরেকটি বড় সমস্যা। বয়স যত বাড়তে থাকে শরীরের পরিপাক ক্রিয়ায় ততো পরিবর্তন আসতে থাকে। একবার যে মেদ জমে গিয়েছে সেটা ঝরানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মেদ ঝরাতে যত কম বয়সে কাজ শুরু করবেন ততোই বেশি সফলতা আসবে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যেসব শিশু কিশোর অধিক পরিমাণে ফাস্ট ফুড, তেল চর্বি যুক্ত খাবার, কোমল পানীয় পান করে তাদের অধিকাংশই পূর্ণ বয়সে মেদবহুল দেহের অধিকারী হয়। শৈশবে খাদ্যাভ্যাস ঠিক না করলে তাই কপাল পুড়বে যৌবনে।
আধুনিক বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যারা সবসময় চাপের মাঝে থাকেন তাদের শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে আর দেহে মেদ বৃদ্ধিতে কর্টিসল হরমোনের ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। তাই ওজন কমাতে দুশ্চিন্তা এড়ানোর বিষয়টাও তাই মাথায় রাখুন।
কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম, এড্রেনাল গ্রন্থির সমস্যা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে শরীরের ব্যার্থতা ইত্যাদি কারণেও দেখা যায় দেহের মেদ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এসব ক্ষেত্রে শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামে কাজ হবে না, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে। আবার কিছু ওষুধ রয়েছে দীর্ঘদিন ব্যবহারে যেগুলো আপনার ওজন বৃদ্ধি করে। তাই আপনার চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন এমন কোন ওষুধ আপনার ব্যবস্থাপত্রে আছে কিনা।
আসলে ওজন বাড়ানোর থেকে ওজন কমানো কষ্টসাধ্য কাজ। তবে একাগ্রতা, সঠিক পরিকল্পনা ও খাদ্যাভ্যাস এবং আপনার ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে পারলে ‘মেদ ভুড়ি কি করি’ জাতীয় দুশ্চিন্তার হাত থেকে রেহাই পাবেন বলে আশা করা যায়।
লেখাটি বার্তা২৪.নেট এ প্রকাশিত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০০