আগামীকাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পরে খুশির ঈদ। রমজানের সংযমের পরে এই দিনে আমরা কিছুটা বাঁধন হালকা করি, খাবারে আনি বৈচিত্র্য। নানারকম উপাদেয়, গুরুপাক রকমারী খাবারে ডাইনিং টেবিল থাকে পরিপূর্ন। তবে একটু খেয়াল রাখলে ঈদের ছুটিতেও আমরা খাবারের মেনু রাখতে পারি স্বাস্থ্যসম্মত।
রোজা রাখার পরে দেহ থাকে দুর্বল, আর যত ঈদ কাছে আসতে থাকে শরীরের হজম শক্তি কমতে থাকে। সেকারণেই রোজার শেষের দিকে আমাদের খাবারের প্রতি অরুচি চলে আসে, খাবার হজম করতে কস্ট হয়। ঈদের দিন হঠাৎ করে নানাপদের তেল-চর্বি যুক্ত খাবার খেয়ে আমাদের অনেকেরই তাই পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা, পেট খারাপ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ঈদের বেশীরভাগ খাবারেই থাকে তেল চর্বির প্রাচুর্য। কোরমা, পোলাও, রোস্ট, রেজালা ইত্যাদি খাবারে তেল না দিলেই নয়। খাবারে স্বাদ আনতে তেল চর্বি বাড়াতে হয় তবে একটু খেয়াল রাখলে তেলের ক্ষতি কিছুটা কমাতে পারি আমরা। রান্না করতে সয়াবিন, পাম বা সুর্যমুখি তেল ব্যবহার করুন। ঘি, মাখন বা ডালডা দিয়ে স্বাদ বাড়ানোর দরকার নেই। ইদানিং রাইস ব্রান ওয়েল ব্যবহার শুরু হয়েছে যা একটু দামি হলেও স্বাস্থ্যের জন্য বেশী ভালো।
ঈদের খাবারে মশলার আধিক্য থাকবেই তবে খেয়াল রাখবেন বেশী মশলার কারনে অনেকের বুক জ্বালা বা এসিডিটি, বদহজম ইত্যাদি হতে পারে। তাই পরিবারের সদস্যদের কথা খেয়াল রেখেই রাঁধতে হবে।
সারাদিন খানাপিনা ভালই হবে তাই সকাল বেলায় পেটকে একটু রেহাই দিতে পারেন। সেমাই, ফিরনির সাথে একটা ফল, সালাদের এক গ্লাস দুধ বা টক দই খেতে পারেন। খেতে পারেন রুটি বা ভাত। ভুনা খিচুড়ি, নারকেল দুধের খিচুড়ি অনেকেরই প্রিয় মেনু ঈদের দিন সকালে তবে খেলে রয়েসয়ে খাবেন।
দুপুরে বা রাতে ঘরে বা বাইরে দাওয়াতে খাবার দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার নেই। সারাদিনে কতটুকু খাবেন তার একটা হিসাব করে রাখতে পারেন। কয়টা বাড়িতে দাওয়াত রক্ষা করতে যাবেন, অনুরোধের ঢেঁকি গিলে কটুটুক বেশী খেতে পারবেন সেটা মাথায় রাখবেন আগে থেকেই। খাবারের প্লেটে বেশী করে সালাদ নিয়ে নিন আগেই। খাবার শুরুর আগেই এক গ্লাস পানি পান করে ফেলুন। সালাদ ও পানি আপনার পাকস্থলী কিছুটা ভরিয়ে ফেলবে আগেই, চাইলেও তাই বেশী খেতে পারবেন না। খাবারের পরে কোল্ড ড্রিঙ্কস না নিয়ে পাতে নিন মিস্টি বা টক দই। খেতে পারেন বোরহানি, লাবাং বা মাঠা। এগুলো হজমে অনেক সাহায্য করবে।
রোজার পরে ঈদের সময় একটু বেশি পানি পান করবেন। এটা হজমে যেমন সাহায্য করবে তেমনি আপনাকে রাখবে তরতাজা, সতেজ। সালাদ খেলে সবজি ও ফলের সালাদ খাওয়াই ভালো। মাছ বা মাংস মেশানোর প্রয়োজন নেই।
যাদের রয়েছে ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা বা হৃদরোগ তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভাসে খুব একটা পরিবর্তন করা ঠিক হবে না। যেটাই খাবেন সীমিত পরিমাণে খেতে হবে, যারা ইনসুলিন নেন তাদের ভুরিভোজের কারনে ইনসুলিনের মাত্রা কম-বেশি করা লাগতে পারে। কিডনি রোগীদের দৈনিক আমিষ গ্রহনের একটা মাত্রা রয়েছে যা ঈদের সময় ভুললে চলবে না।
পেটের সমস্যা হতেই পারে ঈদের পরের দিন, লাগামহীন খাওয়া দাওয়ার পরে অনেকের আন্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা, বুক জ্বালা করা ইত্যাদি সমস্যার জন্য সাথে রাখতে পারেন ওমিপ্রাজল বা এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ। পেট খারাপের জন্য ঈদের আগেই বাড়িতে কিনে রাখুন ওরস্যালাইন।
ঈদের পরের দিন স্বাভাবিক খাবার খাওয়াই উচিত। সকালে চিড়া, কলা, দই পেট রাখবে ঠাণ্ডা। দুপুরে শাক ভাত ডাল ও রাতে আমিষ খেতে পারেন। পর পর কয়েকদিন টানা ভুরুভোজ করে অনেকের হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য, এর জন্য বেশি করে পানি ও শাক সবজি খেতে হবে, প্রয়োজনে ইসবগুলের ভুসি রাখতে হবে হাতের কাছে।
ডাক্তার যতোই বলুক ঈদের সময় খেয়াল করে খেতে ঈদের সময় কতটুকু সম্ভব রসনা বিলাসের সংযম? যতটুকু পারা যায় চেষ্টা করুন। বয়স সকলের ই বাড়ছে, বাড়ছে বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই চলুন সচেতন হই, নিরাপদ খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে নিশ্চিত করি সুস্থ্য সুন্দর একটি জীবন।
ডা. রায়হান কবীর খান, MBBS (DMC)
মেডিকেল অফিসার, ওজিএসবি
০১৬৭০৭৬৪২২৪
লেখাটি সাপ্তাহিক মঠবাড়িয়ার খবরের ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০০