আমাশয় মূলত দুই ধরণের, অ্যামিবিক এবং ব্যাসিলারি। অ্যামিবিক আমাশয়ের মূলে রয়েছে এককোষী অ্যামিবা এবং ব্যাসিলারি আমাশয়ের মূলে রয়েছে একটি ব্যাক্টেরিয়া যার নাম সিগেলা/ shigella. এই দুই ধরণের আমাশয়ই মূলত আমাদের দেহে প্রবেশ করে দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সাথে বেরিয়ে আসা জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি দিয়ে ধোয়া খাবার যেমন ফল, সালাদ খাওয়া, অবিশুদ্ধ পানি পান এগুলো আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ার বড় কারণ। আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিকভাবে হাত পরিস্কার না করে থাকলে তার কাছ থেকেও ছড়াতে পারে আমাশয়। মাছির মাধ্যমেও জীবাণু খোলা খাবারে সংক্রমিত হতে পারে।
আমাদের দেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পরে আমাশয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আমাশয়ের উপসর্গের মাঝে রয়েছে মোচড় দিয়ে পেটে ব্যাথা, বার বার মল ত্যাগ করা, মলের সাথে আম অথবা রক্ত যাওয়া, সাথে জ্বর থাকা, অ্যামিবিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে মলে হাল্কা দুর্গন্ধ হতে পারে। ডায়রিয়ার সাথে আমাশয়ের একটা পার্থক্য হচ্ছে ডায়রিয়ায় মলে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে আর আমাশয়ে মলে পানির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে।
মলের সাথে রক্ত গেলে তাকে বলা হয় রক্ত আমাশয়। আক্রান্ত ব্যক্তির অন্ত্রের দেয়াল যখন জীবাণু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন ক্ষত সৃষ্টি হয়ে রোগী আম এবং রক্ত মিশ্রিত মল ত্যাগ করেন। সাধারনত জীবাণু দেহের ভেতরে প্রবেশ করার ১ থেকে ৩ দিনের মাঝেই রোগের উপসর্গ প্রকাশ পেতে শুরু করে। একসপ্তাহের মাঝেই এটি অধিকাংশ সময়ে নিরাময় হয়ে যায়।
আমাশয়ের হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায় আমাদের সকলেরই জানা, তার পরেও আবার মনে করিয়ে দিতে চাইঃ
১। প্রতিবার মল ত্যাগের পরে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করা
২। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা
৩। না ধুয়ে কোন ফল বা অন্যান্য খাবার না খাওয়া
৪। খাবার খোলা না রাখা
৫। বাসি, পচা কোন খাবার না খাওয়া
৬। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাবার প্রস্তুত করতে না দেওয়া
আমাশয়ের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য দুইটিঃ বার বার পাতলা পায়খানার ফলে পানি শূন্যতার হাত থেকে রোগীকে রক্ষা করা এবং জীবাণু নাশে ঔষধের ব্যবহার করা।
পাতলা পায়খানার জন্য ওরস্যালাইন ব্যবহার করতে হবে, এটা আমরা সবাই জানি। ব্যাকটেরিয়া জনিত আমাশয়ে ৫-৭ দিনের এন্টিবায়োটিকেই কাজ হয়, বর্তমানে সিপ্রোফ্লকসাসিন বা এজিথ্রোমাইসিন খুব ভালো কাজ করে। অ্যামিবিক আমাশয়ে মেট্রনিডাজল ৫ দিনের কোর্সই যথেষ্ট।
আমাশয় এমন একটি অসুখ যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ নিয়ম পালন করলেই চলে। তাই ব্যক্তিগত এবং সামাজিক পরিচ্ছন্নতার প্রতি সকলের নজর রাখা অতীব জরুরী এ ব্যাপারে।
লেখাটি স্বাস্থ্যবাংলাতেও প্রকাশিত হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০১