somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর

১০ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাইফয়েড জ্বর এখন আমাদের জন্য আর তেমন ভয় জাগানিয়া কিছু নয় আগের মতো। উন্নত চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে টাইফয়েডকে একসময় অনেকটাই বশ মানিয়ে আনা হয়েছিলো যদিও আবার সেটি ফিরে আসছে মারাত্নক রুপে। চলুন আজ জেনে নেই টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারন কিছু কথা।

টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয় যার নাম 'সালমোনেলা টাইফি'। এটি একটি পানি বাহিত রোগ। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও খাদ্যনালীতে এই জীবাণু অবস্থান করে এবং প্রস্রাব ও মলের মাধ্যমে পরিবেশে উন্মুক্ত হয় যা পরবর্তীতে পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টাইফয়েড জীবাণু সংক্রমিত পানি পান করার মাধ্যমে পুনরায় অন্য আরেকজন আক্রান্ত হন। পানি ছাড়াও জীবাণু দ্বারা দূষিত দুধ কিংবা দুগ্ধজাত সামগ্রী, নারিকেল, চিংড়ি, মাছ, ডিম, কাচা সবজি, সালাদ, লেটুস প্রভৃতি থেকেও জীবানুটি মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে। মাছি মানুষের মলমুত্র খেয়ে জীবনধারণ করে। মানুষ যখন মাছিতে বসা খাবার খায় তখন সেটি মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া, মল ত্যাগের পরে হাত না ধোয়া ইত্যাদি কারনেও এটা ছড়াতে পারে।



একবার শরীরে প্রবেশ করার পরে জীবাণু অন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করার মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।


যেকোনো বয়সেই টাইফয়েড হতে পারে তবে আমাদের দেশে সাধারণত শিশু থেকে তরুণদের মাঝেই এটা বেশি হতে দেখা যায়।


টাইফয়েড জীবাণু দেহে প্রবেশের ১০-১৪ দিন পরে রোগের উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে।



প্রধানত থাকে জ্বর যা সাধারণত ১০৩ থেকে ১০৪ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়, জ্বর ক্রমেই বাড়তে থাকে, সারাক্ষণই জ্বর থাকে।
জ্বরের সাথে মাথাব্যথা, গায়ের মাংশপেশিতে ব্যাথা থাকে, থাকে দুর্বলতা।
প্রাপ্ত বয়স্কদের অনেক সময়ই কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। শিশুদের ডায়রিয়া এবং বমি হতে পারে।
খাওয়ায় থাকে না রুচি, সব লাগে বিস্বাদ, সাথে পেটে ব্যাথা।
লিভার ও প্লিহা আকারে বড় হয়ে যেতে পারে।
সপ্তাহখানেক পরে পেট এবং পিঠে গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি হতে পারে। এই ফুসকুড়িগুলোর একটি বৈশিষ্ঠ্য হল হাতের আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওরা অদৃশ্য হয়ে যায়।




দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীকে যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তৃতীয় সপ্তাহের মাথায় রোগী মারাত্মক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।



যেসব জটিলতা হতে পারে তাদের মাঝে অন্ত্রের দেয়াল থেকে রক্তক্ষরণ এবং দুর্ভাগ্য বাড়লে অন্ত্রের দেয়ালে ছিদ্র হয়ে মারাত্নক রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেক্ষেত্রে রোগী মারাত্নক জটিল শকে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।



অনেকে একবার আক্রান্ত হবার পড়ে সারা জীবনের জন্য টাইফয়েডের বাহক হয়ে পড়েন যারা জীবন্ত রোগবাহক হিসেবে আজীবন এই রোগ ছড়িয়ে দিতে থাকেন নিজের অজান্তে। এমন একজন ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন ' টাইফয়েড মেরী' যাকে নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে।



এছাড়াও লিভারের ছিদ্র হওয়া, অগ্নাশয়ে বা মস্তিস্কে প্রদাহ, মায়াকার্ডাইটিস(হৃদ পেশীতে সংক্রমন), নেফ্রাইটিস(কিডনিতে সংক্রমন), হাড়ের ইনফেকশন, সেপটিসেমিয়া(রক্তে সংক্রমন) ইত্যাদি জটিলতা টাইফয়েড থেকে হতে পারে।



টাইফয়েড নির্ণয়ের জন্য রোগের উপসর্গ-লক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্ট রয়েছে

রোগের প্রথম সপ্তাহে রক্তের কালচারের মাধ্যমে,
দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিডাল টেস্টের মাধ্যমে( যদিও এটা শতভাগ নির্ভরযপগ্য নয়)
পরবর্তী সপ্তাহে যথাক্রমে মল ও প্রস্রাবের পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নির্ণয় করা যায়
ক্ষেত্রবিশেষে অস্থিমজ্জা থেকেও পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়



টাইফয়েডের চিকিৎসার ব্যাপারে বলতে হয় কার্যকরি এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পরে টাইফয়েড অনেক সহজেই বশ মানানো সম্ভব হয়েছে।




সাধারণত ১০-১৪ দিনের চিকিৎসাতেই মানুষ আরোগ্য লাভ করে যদিও একসময় এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পূর্বে টাইফয়েড ছিলো মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। তবে বর্তমানে ইচ্ছামত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অযথাই এন্টিবায়োটিকের ব্যাবহারের ফলে টাইফয়েডের জীবাণু নতুন ওষুধগুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে যার ফলে সাধারন কোন এন্টিবায়োটিকে সহজে টাইফয়েড সারানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেরকে বলা হচ্ছে MDR Typhoid বা একাধিক ড্রাগ প্রতিরোধী টাইফয়েড।



এন্টিবায়োটিকের সাথে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে কাজে লাগে।




টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য বাজারে এখন ভ্যাকসিন বের হয়েছে যার একটা প্রতি ৩ বছর পর পর মাংশপেশীতে নিতে হয় এবং একটি মুখে

খেতে হয় যদিও এদের কার্যকারিতা সবক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় না।



টাইফয়েড জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল বিষয় হলো সামস্টিক পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা। অর্থাৎ,



নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান
স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার
খাবার তৈরি এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং পায়খানা ব্যবহারের পর সাবান/ছাই দিয়ে হাত ধোয়া
কাঁচা বা অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
খাবার গরম করে খাওয়া
ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা
টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের জন্য খাবার তৈরি থেকে বিরত থাকা
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদি আলাদা করে রাখা ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে টাইফয়েডের থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো।


লেখাটি স্বাস্থ্যবাংলাতেও প্রকাশিত হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×