somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা

১৫ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ম্যাস হিস্টিরিয়া শব্দটি সংবাদপত্রের কল্যাণে এখন আমাদের অনেক পরিচিত একটি নাম। প্রায়শই আমরা বিভিন্ন খবরের কাগজে দেখতে পাই দেশের বিভিন্ন স্কুলের একদল ছেলেমেয়ে বিশেষ করে মেয়েরা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায় ক্লাসে বা মাঠে। শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘুরানো,অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে হসপিটালে নেবার পরে এরা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে বাড়ি ফিরে যায়। আপাতদৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর মনে হওয়া এটা প্রকৃত পক্ষে একধরনের মানসিক রোগ যার থেকে মুক্তি আছে আমাদেরই হাতের মুঠোয়।

ম্যাস হিস্টিরিয়া কি জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে হিস্টিরিয়া কি:

তবে চলুন জেনে নেই হিস্টিরিয়া কাকে বলেঃ

গ্রিক শব্দ ‘হিস্টেরা’ বা জরায়ু থেকে উৎপত্তি হয়েছে ‘হিস্টিরিয়া’ শব্দের। একসময় মনে করা হতো নারীর জরায়ুর কোন অস্বাভাবিক অবস্থার কারনেই হিসটিরিয়ার সৃষ্টি। পরবর্তীতে একে মানব মনের একধরণের সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে একে কনভার্সন ডিসঅর্ডার বলা হয়। মানুষের মনের অবদমিত দ্বন্দ্ব থেকেই হিস্টিরিয়ার জন্ম। আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের মানসিক ঝক্কি ঝামেলা, সামাজিক ধকলের মাঝ দিয়ে যাই। এসবের সাথে মানিয়ে নিয়ে, নিজেদের দুঃখ কষ্টের সাথে লড়াই করেই আমরা সমাজে বাস করি। অনেকে এসব দ্বন্দ্ব সংঘাতের সাথে যুদ্ধে পেরে ওঠেন না, প্রতিদিনের ঝামেলা মোকাবেলা করতে করতে ভেঙ্গে পড়েন। একসময় সকল কষ্ট, বেদনা সহ্য করতে না পেরে মন বিদ্রোহ করে বসে, অবদমিত ব্যথা প্রকাশিত হয় শারীরিক লক্ষণের মাধ্যমে।

এদেশে নারীরা এমনিতেই সামাজিক ভাবে নানা সময় লাঞ্ছনা, অবহেলা বা শারীরিক অত্যাচারের স্বীকার হন যার ফলে প্রধানত মহিলাদেরকেই এতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

এখন দেখা যাক ম্যাস হিস্টিরিয়া কি জিনিস:

যখন একদল মানুষ একে অপরের দেখাদেখি হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে ম্যাস হিস্টিরিয়া বলা হয়। আমাদের দেশের স্কুল গুলোতে কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলে ক্লাসের বা সমগ্র স্কুলেই এই ধরনের সমস্যা ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তদের মাঝে যার হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হবার ইতিহাস আছে বা সম্ভাবনা আছে সেই সবার আগে আক্রান্ত হয় এবং তাকে দেখা দেখি বাকি সকলেও আক্রান্ত হতে শুরু করে।

এ সমস্যার লক্ষণগুলোর মাঝে আছে:


#মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব বা বমি করার চেস্টা করা
#বুকে ব্যাথা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসা বা শক্ত হয়ে যাওয়া বা ঝিম ঝিম করা
#খিঁচুনি দেয়া হঠাৎ করে কানে না শোনা বা দেখতে না পারা অথবা কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া
#ঢোক গিলে না পারা
#প্রস্রাব করতে না পারা
#অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি



খেয়াল করলে দেখা যাবে হিস্টিরিয়ায় আক্রান্তদের কারো প্রকৃত খিঁচুনি রোগীদের মতো কাপড়ে প্রস্রাব হয়ে যায় না, ঠোঁট বা জিহ্বা কেটে যায় না। এটা সাধারণত সকলের সামনে শুরু হয়, কেউ একাকী থাকাকালীন বা ঘুমানোর সময়ে হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয় না।

জেনে নেই ম্যাস হিস্টিরিয়াতে কি চিকিৎসা দিতে হবে:


#আক্রান্তদেরকে আশ্বাস দেয়া তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা যে তারা কোন খারাপ রোগে আক্রান্ত হয় নি
#আক্রান্তদেরকে কথা বলতে দেয়া, তাদের সমস্যাগুলো মন দিয়ে শোনা
#রোগীকে হাটা চলা করতে দেয়া বা হাঁটানোর ব্যবস্থা করা
#অসুস্থদেরকে দ্রুত আলাদা করে ফেলা যেন বাকিরা তাদেরকে দেখে আক্রান্ত হতে না পারে
#তাদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করা
# আক্রান্তদের সামনে আতংকিত না হওয়া, এমন কিছু না করা যা তাদেরকে অ্যারও অসুস্থ করে তুলবে
#পর্যাপ্ত আলোবাতাসের ব্যবস্থা করা

এই রোগে ওষুধের ভূমিকা খুবই সীমিত। প্রয়োজনবোধে বিষণ্ণতা বা আতংক কমানোর ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে গ্রুপ ডিসকাশন বা কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা; সর্বোপরি পারিবারিক কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।


ম্যাস হিস্টিরিয়া প্রতিরোধে আমাদের কি করণীয়:


#স্কুল কলেজ গুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা
#সংবাদপত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি মিডিয়ার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া
#অভিভাবক, শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা
#আক্রান্ত স্থানে দ্রুত মেডিকেল টীম পাঠিয়ে ঘটনার সত্য তুলে ধরা ও
#আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা পাঠ্যবইয়ে এ সংক্রান্ত শিক্ষামূলক লেখা অন্তর্ভুক্ত করা
#অতিরঞ্জিত করে এসব খবর প্রকাশ না করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা



পরিশেষে এটা মনে রাখতে হবে হিস্টিরিয়া তথা ম্যাস হিস্টিরিয়া কিন্তু কোন অভিনয় বা ভান নয়। এটা একধরনের মানসিক রোগ যার সমাধান আছে। সচেতনতা ও সমাজের সকলের অংশগ্রহণই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে।

আমার এ লেখাটি সাস্থ্যবাংলাতেও প্রকাশিত হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×