চুপচাপ বিষণ্ণ আকাশ, নিস্তব্ধ পরিবেশ এবং অন্ধকার রাত। হয়তবা অন্যান্য স্বাভাবিক রাতের মতোই রাত একটা সবার কাছে। কিন্তু আমার কাছে? যেখানে জীবন নিজেই প্রতারণা করে সেখানে রাত স্বাভাবিক হয় কিভাবে?
জীবনের শেষ ১১ দিন গুনছি। রাতগুলো অনেক তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে কেমন যেন! ডাক্তার ৪মাস সময় দিয়েছিলো মিনিট গুনতে গুনতে এখন ১১দিন বাকী। পৃথিবীতে হয়তো জীবনের সবাই সমান ভাগ পায়না। অংশীদারীত্বের প্রভাবে অনেকে অনেক বেশি পায় আবার অনেকে অনেক কম।
বাঁচার শেষ কয়েকমাস হাঁড়ে হাঁড়ে টেড় পেয়েছি মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। স্বাভাবিক ছিলো না একটুও, সত্যি.. বাসা থেকে বের হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মায়ের নাপা এক্সট্রা আর খাবার দিয়ে শক্তি বাড়ানোর চিকিৎসাটাই সবচেয়ে ভালো ছিলো। আমি চাইনা হাসপাতালে বসে রোগীদের মাঝে বসে রোগকে উপভোগ করতে। চাই আকাশটাকে, বাতাশটাকে আপন করে নিতে।
ছোটবেলায় জীবনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। বড় হয়ে আর্কিটেক্ট, তখন আর্কিটেক্ট নামটা ভাল্লাগতো বলে হতে চেয়েছিলাম এখন হতে পারবো না বলে হতে চাই। আশাটা ছিনিয়ে নিয়েছে জীবন.. চুলগুলোও!
বাকী ১১দিন ভালো থাকতে চাই, সবকিছু ভুলে থেকে। শেষ ৪মাস যাবৎ একই পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু হচ্ছে না... আত্মীয় স্বজনের হাসপাতালে আসা যাওয়া চলতেই থাকে এবং জীবিত কে মৃত বানিয়ে নানাবিধ কান্নার রোল পরতে থাকে। আম্মাকে কতবার বুঝালাম "আউট পারসন নট এলাউড" সে বুঝলোই না। তাকে কিছু বললেই কান্নাকাটি শুরু। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও চোখের পানি বের হয়ে যায় তখন। কি যে হয়!
বাবা-মার একমাত্র ছেলে আমি.. মাঝেমধ্যে বসে হিসেব করি বোনদের বিয়ে তে কি করবো। পুরো লিস্ট বানিয়ে কাগজটা বারবার ডাস্টবিন এ ফেলি, আবার বানাই। শেষ বয়সে হালধরার কথা এখনি রাস্তায় নামিয়েছি এই জিনিসটা অদ্ভুত। আমি চাইনা এসব.. শুধু চাই নিজের বাসায় কয়েকদিন স্বাভাবিকভাবে থাকতে, কিন্তু সেখানেও সমস্যা! মানুষের এমন ঢল পড়ে বাসায় মনে হয় আমি এলিয়েন।
সেদিনই বোঝালাম সবাইকে.. "মরেই তো যাবো.. চলো একটা ফ্যামিলি ট্রিপ দেই দূরে কোথাও" কিন্তু ডাক্তার যেতে দিতে রাজি না।
আগে বছর হিসাব করতাম। রোগ ধরা পরার পর ঘন্টা, সময় কমতে থাকার পর মিনিট, এখন সেকেন্ডও হিসাব করি। জীবনের শেষ সেকেন্ডগুলা। আকাশটা দেখার খুব ইচ্ছা, সবাইকে হাসিখুশি দেখার খুব ইচ্ছা, বলবো করে না বলা কথা গুলো বলার খুব ইচ্ছা..
জীবনের শেষ ইচ্ছাগুলো অদ্ভুত হয়। হয়তো খুবই সিম্পল ইচ্ছাগুলো, কিন্তু পূরণ করা অসম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৩৩