"হাসিখুশি থাকা মানুষটি যখন গম্ভীর হয়ে থাকে তখন তার ঘনিষ্ঠরা দূরে সরে যায়"
রাফি আজ ক্লাসে যায়নি,বাইরেও না। সারাদিন রুমে ছিলো সন্ধ্যায় ছাদে। এখন রাত দেড়টা, এখনো সে ছাদে। সারাদিন না খাওয়া কাঠফাটা ওষ্ঠদ্বয় সিগারেটের ধোঁয়ার কথা স্মরণে আনে; তবে সে ঐসবে অভ্যস্ত না। নাহ্ স্মরণে অনেক কিছু খেলে তবে সে কথা কেউ জানে না, জানানোর মতোও না;বুঝবেও না কেউ। তবে মূল ভাবনার জিনিস এইটা ছিলো না, মাথায় কিছু খেলছে না.. সবাই সবার নিজের কাজে ব্যাস্ত হালকা অভিমান খেলে মনে। পরে নিজের উপরেই অভিমান করে এইসবের জন্য।
"ভালো মনের মানুষগুলা নিজের ভুলটাই আগে দেখে"
রাফি এই কথাটা নিজের উপর প্রয়োগ করে না, কথাটাই তার মতো মানুষের জীবন থেকে তৈরি। কিছুক্ষণ পর সে নিজেকে মনে মনে দু-চারটা থাপ্পড় মারে সবার এন্টারটেইনার ভেবে এরপরই সবার হাসিটা তার চোখের সম্মুখের স্পষ্ট অংশে ভাসতে থাকে। কাউকে হাসাতে পারাটা খুব বেশি খারাপ কিছু না।
"সবসময় লবন দেয়া খাবার খেয়ে অভ্যস্ত মানুষগুলা হুট করে লবন ছাড়া খাবার যেমন গিলতে পারে না তেমনি হয়তো হাসিখুশি মানুষগুলোকে হুট করে মনখুন্ন দেখতে পারে না। হয়তো ভালোবেসে অথবা বিনোদনের জন্য।"
নাহ্! সবকিছু ভালোই চলছে কিন্তু নিজের কাছে ঠিক লাগছে না। সেল্ফিশ টাইপ হয়ে যায় হয়তো। নিজের ভালো থাকার উপর নির্ভর করে কারো ভালো থাকা আবার কারও খারাপ থাকা। হয়তো আপনার প্রেমিকা আপনার শত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও হাসি মুখটা দেখার জন্য অধীর দৃষ্টিতে তার দেখা সুন্দরতম চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে অথবা ক্ষতি কামনা করছে আপনার ক্লাসের সেই ছেলেটি যে আপনার প্রেমিকাকে আপনার চেয়েও বেশি ভালোবাসে একপাক্ষিক ভাবে।
ভালোবাসাটা রাফির কাছে এতটা সস্তা না। কিন্তু সে বুকে হাত রেখে বলতে ভয় পায় সে কাউকে ভালোবাসে। নিচে আম্মা খাবারের জন্য ডাকছে। আম্মার জন্য সে সবকিছু উজার করে দিতে পারবে কিন্তু তার জন্য তার কখনো পরীক্ষা দিতে হয়নি অথচ জীবনটা তৈরি করতে সহস্রাধিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হয়। কিন্তু জীবন বিপন্নকালে পূত্রের জীবনবিকাশে বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত ঘটিয়ে মা কখনো বাঁচতে চাইবে না রাফি এটাও জানে। তবে জীবন উজার করার কথাটা কি মিথ্যা? মা তো তাকে তার থেকে বেশি ভালোবাসে; এজন্য সে তার ভালোবাসাকে মিথ্যা প্রমান করে দিবে?
রাফির আজকে মন খারাপ। ছেলেদের কাঁদতে হয়না নাকি! অন্ধকারে কাঁদলে তাকে কেউ দেখবে না ভেবে নিজেকে দুইজন কল্পনা করে শরীর মন আলাদা করে কান্না থামিতে বসে থাকে। সত্যিকারের মন খারাপগুলি দূর করার জন্য কখনো কোনো গান কিছু করতে পারে না। সেগুলা বয়সকেন্দ্রিক মন খারাপ। সত্যিকারের মন খারাপগুলি নিজেকে স্তরে স্তরে পঁচিয়ে দেয়।
পেছন দিক থেকে সাদা লাইটটা জ্বলেছে।আম্মা এসে তার পাশে বসেছে। অনেক অজানা গুলো আম্মার কাছে অজানা রেখেই আম্মা' কে সে মনের সুখগুলো বলেছে। দুপুরে ভাত খায়নি বলে ছেলের জন্য মা আলুভর্তা করে ভাত মেখে রেখেছে খাইয়ে দিবে বলে। হয়তো মন ভালো করার জন্য মা,মাখা ভাত,আলুভর্তা আর ভালোবাসাগুলোই দায়ী ছিলো।
"হয়তো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিষই হতে পারে মন ভালো করার মূল মন্ত্র"
সে যা করে তাতেই তার পরিচয়, নিজেকে পরিবর্তন করে পরিচয় হারানো উচিৎ না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০৬