রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর হতে ৮০ কিলোমিটার দূরে জেলার সবচেয়ে বড় ও দূর্গম ইউনিয়ন সাজেক। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও ঢাকা থেকে যাবার জন্য খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া সহজ। যারা সময় স্বল্পতায় টাফ জার্নি পছন্দ করেন তারাও এক রাতে গিয়ে পরের রাতে ফিরে আসতে পারবেন এই স্থান থেকে। খাগড়াছড়ি হতে সরাসরি চান্দের গাড়ী নিয়ে সাজেক যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ী যখন পাহাড়ের পথ ধরে দু’পাশে গভীর অরণ্য, মাঝে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ছুটে চলে তখন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবেই। দেখবেন গাড়ি কখনও ওপরের দিকে উঠছে তো কখনও নিচের দিকে। মাঝে মধ্যে মনে হবে এই বুঝি আকাশ ছুঁতে চলেছেন। তারপরক্ষনেই মনে হবে এই বুঝি নেমে যাচ্ছেন গিরিখাঁদে। বেশিভাগ স্থানেই কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই।
এইখানে গিয়ে দিনে দিনেই আপনি আপনি ফিরে আসতে পারবেন রাঙ্গামাটি বা খাখড়াছড়িতে। সাধারণের রাতে থাকার জন্য কোন রেষ্ট হাউজ বা কটেজ গড়ে উঠেনি এখনও। খাবারের জন্য ভালো বা মাঝারি কোন মানের হোটেল এখনো তৈরী না হলেও হওয়ার পথে। একমাত্র থাকার জায়গা গত বছরের শেষে নির্মিত আর্মিদের সাজেক রিজোট এবং ইসিবি ১৯ এর নির্মাণ চমৎকার একটি রেস্ট হাউজ! তবে আর্মি রেফারেন্স ছাড়া এখানে জায়গা হবেনা আপনার। আর্মি রেফারেন্স থাকলেও অন্ততঃ ১৫/২০ দিন আগে বুকিং দিতে হবে এখানে থাকার জন্য।কংলাক পাড়ায় বাঁশ-কাঠের তৈরী জেলা পরিষদের একটা ডাক বাংলো আছে তবে সেটা থাকার অযোগ্য। সেক্ষেত্রে আপনি কংলাক পাড়ার সর্দার এর আতিথেয়তা গ্রহণ করতে পারেন।
রিজোটের পাশে বৃহৎ আকৃতির হেলিপ্যাডের উপর আলো, মেঘ, কুয়াশা আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির লুকোচুরি খেলায় আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য...
এইখানে বসবাসরত স্থানীয়দের কয়েকজনের সাথে আলাপ করে যা জানতে পেরেছি তা হল ৪৩,৭৭৬ একর বা ৬০৩ বর্গমাইল আয়তনের দেশের সবচেয়ে বড় এ ইউনিয়নে চাকমা,ত্রিপুড়া,পাংখুয়া ও লুসাই এই ৪ টি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বসবাস। এদের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় বেশি। এরপর ত্রিপুরা, লুসাই ও পাংখুয়া সম্প্রদায়ের অবস্থান। তাদের সহঅবস্থানে বসবাস হলেও এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ প্রচুর। এ বিরোধের জের ধরে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছিল। তারা স্ব স্ব সংস্কৃতি ও পেশা নিয়ে স্বাধীন ভাবে থাকতে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করে । পাংখুয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনও তীর ধনুক ও বলম দিয়ে পশু শিকার করে। লুসাই সম্প্রদায়ের লোকেরা লেংটি (ধুতি) পড়ে এখনও। তবে চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকেরা অন্য দু সম্প্রদায় থেকে শিক্ষিত হওয়ায় তাদের মধ্যে একটু আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছ। তো আর অপেক্ষা কিসের পরিবার নিয়ে ঘুরে আসুন দেশের সবচেয়ে উঁচু এই দর্শনীয় স্থান থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৭