somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"পরীক্ষা দেয়ার দায়িত্ব তোর, পাস করানোর দায়িত্ব স্যারের"

১০ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ২০০৩ এর ডিসেম্বর।সবে মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে।আমরা কতিপয় ব্যাক বেঞ্চার যথারীতি পরীক্ষায় GPA 3.5 এর নীচে গ্রেড লাভ করলাম।আমাদের অবশ্য বোর্ড এক্সাম নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা ছিল না কারন পরীক্ষার তখনো প্রায় ৬ মাসের মত বাকি ছিল।কিন্তু কিছুদিন পূর্বে বদলি হয়ে আসা নতুন ভাইস প্রিন্সিপাল স্যারের তো আমাদের রেজাল্ট দেখে চক্ষু চরকগাছ ।স্যার কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না ক্যাডেট কলেজের ছেলেদের রেজাল্ট কিভাবে এত খারাপ হতে পারে।পরদিন স্যারের রুমে আমাদের ৯ বন্ধুর ডাক পড়ল।ভি পি স্যারের রুমে ঢোকার পর এবার আমাদের বিষ্মিত হবার পালা...ভিপি স্যারের রুমের বোর্ডে আমাদের ৯ বন্ধুর ছবি টাঙ্গানো উপরে বড় অক্ষরে লিখা "ইনসেনটিভ কেয়ার" স্যার আমাদের বললেন "এখন থেকে তোমরা একসাথে একাডেমি ব্লকের একটি আলাদা রুমে স্টাডি করবে।টীচারদের বলে দেয়া হবে যে কোন সমস্যায় তারা তোমাদের সাহায্য করবেন।" (ক্যাডেট কলেজে রাতে পড়ার জন্যও ক্লাসরুমেই যেতে হয় ) আমরা তো মহাখুশি কারন এখন ব্যাচের সবচে আড্ডাবাজদের জন্য বিশেষ রুমের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।প্রথম রাতে পড়তে যাবার পরই বিপত্তি।বন্ধু ওয়াসিম ব্ল্যাকবোর্ডে বড় অক্ষরে লিখেছিল "সেন্ট হেলেনা" আর একাডেমী ব্লকে পর্যবেক্ষনে আসা প্রিন্সিপালের নজরে আসে সেটা।বিশেষ সুনজর প্রাপ্ত আমাদের জন্য এর পরের অভিঞ্জতা মোটেও সুখকর ছিল না।যাহোক এরপর আমরা আমাদের দিনগুলোর আরও যথাযথ ব্যাবহারের দিকে মনযোগ দেই।বাইরে গার্ড রেখে রুমের ভেতর পাক_ভারত ক্রিকেট ম্যাচ,কনসার্ট(বই-খাতা,কলম আর ডেস্ক হচ্ছে বাদ্যযন্ত্র), আড্ডা সব মিলে কয়েক সপ্তাহ ঝড়ের বেগে শেষ হয়ে গেল।আমরা যখন প্রায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে GPA 3.5 এর নীচে পাওয়া ছিল আমাদের জন্য শাপে বর ঠিক তার কয়েকদিনের মধ্যে স্যাররা আরও একটি পূনাঙ্গ মডেল টেস্ট নেয়ার ঘোষনা দিল।টেস্ট পরীক্ষার পর আমাদের কারুর ই নূন্যতম পড়ালেখাও হয় নি ।সবারই তো মাথায় হাত।পরীক্ষা শুরু হবার পর সব বিষয় কোন রকম উতরে গেলেও পদার্থবিঞ্জান পরীক্ষা হল সবচে বাজে।বন্ধু রাশেদের তো খুব মন খারাপ।ওকে সান্তনা দেবার জন্য মুশফিক নানা রকম চেষ্টার এক পর্যায়ে বলল "আরে দোস্ত কোন চিন্তা করিস না।আমরা যদি ফেল করি তাহলে প্রিন্সিপাল স্যারদের জিঞ্জেস করবে ক্যান তার বিষয়টাতে খারাপ করলাম তাই আমাদের পাস করানোর জন্য স্যারদের গরজ ও কম না।আর নাজমুল স্যার(পদার্থবিঞ্জান শিক্ষক) খুব ভাল মানুষ,পরীক্ষা দেয়ার দায়িত্ব তোর পাস করানোর দায়িত্ব নাজমুল স্যারের।" কখন যে পেছনের দরজা দিয়ে নাজমুল স্যার রুমে ঢুকেছেন আমরা খেয়ালই করি নি।আমাদের সম্বিত ফিরল নাজমুল স্যারের ডাকে"মুশফিক পড়ালেখা বাদ দিয়ে স্যারদের দায়িত্ব বন্টন তো ভালই চলছে।" স্যারকে কোন রকমে সেদিনের মত ম্যানেজ করলাম সবাই।

ঠিক দুদিন পর পদার্থবিঞ্জানের খাতা দেয়া হল।আমাদের নবরত্নদের(ভি পি স্যারের দেয়া উপাধি) অধিকাংশ খুব সামান্য ব্যাবধানে কৃতিত্বের সহিত ফেল করলাম।পরবর্তীতে স্যার কিছু নম্বর বাড়িয়ে দেয়ায় আমি আর রাশেদ পাশ মার্ক অতিক্রম করি কিন্তু মুশফিক যখন স্যারের কাছে নাম্বার বাড়ানোর জন্য যায় সেটা ছিল কলেজ জীবনের সবচে মজার স্মৃতি।ইতিমধ্যেই মুশফিকের দেয়া স্যারের পাশ করানো বিষয়ক কার্য কারন থিওরী সব বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটা দারুন জনপ্রিয়তা লাভ করে।ফলে ও যখন মার্ক বাড়ানোর জন্য স্যারের দিকে যাচ্ছিল সারা ক্লাসরুম হো হো হাসির শব্দে ফেটে পড়ল।স্যার নিজেও হেসেছিলেন অবশ্য।স্যার তো প্রথমে কোন ভাবেই নাম্বার বাড়াবেন না ...অবশেষে মুশফিক কে নাম্বার বাড়িয়ে দেয়া হল।

ক্যাডেট কলেজের সেই সোনালী কৈশর খুব মিস করি আজও।বন্ধুদের অনেকেই আজ দূরদেশে, অনেকেই পেশাগত কাজে দেশের দূরপ্রান্তে।জীবনের নানা ব্যস্ততা কিংবা কাজের চাপের মাঝেও সেই মধুর অতীত যেন মরুভূমির মাঝে এক টুকরো মরুদ্যান।বন্ধুরা ভাল থাকিস সবাই...
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×