দেখ তো জিনিসটা কেমন?
- প্রোফাইল পিক প্রাইভেসি দেয়া, বুঝতেছি না!
আরে কভার ফটো দেখ।
- দেখলাম। ৪টার মধ্যে কোনটা মেয়ে?
সবগুলাই তো মেয়ে!
- আরে তুই কাকে দেখাতে চাচ্ছিস সেটা বল গাধা!
ও! বাম থেকে ২ নাম্বার।
- আহা! মেয়ে যা দেখলি তাও ২ নম্বুরি!
মেয়ে কেমন সেটা বল। কবুল বলা যায়?
- হুম, বলা যায়- কবুল!
চুপ ব্যাটা! কবুল তুই কেন বলবি? এইটা তোর ভাবী হবে।
- ওইতো, ভাবী হিসেবে কবুল করে নিলাম। তুইও কবুল বলে ফেল।
আগে মেয়েকে পেয়ে নেই। ক্যাম্পাসে খোঁজ দা সার্চ শুরু করতে হবে!
কী বলিস? এখনো মেয়েই খুঁজে পাইলি না! এটা তো দেখি গাছে মেয়ে মুখে কবুল অবস্থা!
আরে প্রসেস হয়ে যাবে। ফেসবুকে পরিচিত। তাছাড়া ডিজিটাল যুগ, এখন তো এভাবেই শুরু হয়। চিন্তার কিছু নাই!
- ফেসবুকে পরিচয় হইলো কীভাবে?
পোকাপোকি করে মাস পার করে ফেললাম। সেও পোকায়, আমিও পোকাই। শেষকালে ফ্রেন্ডলিস্টে চলে আসলাম। মনের লিস্টে আসতে দেরি নাই। চ্যাটে নক দিলেই মেয়ে বড় করে স্মাইলি দেয়! ঘটনা কোনদিকে আগাচ্ছে তো বুঝছিস।
- মেয়ে তো সুবিধার না। ফ্রেন্ডলিস্টের বাইরের অপরিচিত ছেলের সাথে পোকাপোকি করে! আর চ্যাটে ৩২ দাঁত দেখানো মেয়েদের রেগুলার রুটিনের মধ্যে পড়ে। বাস্তবে ১টা দাঁত দেখতে ছেলেদের ৩২ বার চেষ্টা করা লাগলেও ভার্চুয়াল জগতে মেয়েরা দিল দরিয়া। গণহারে স্মাইলি বিলায় যায়। তাদের ধারণা চ্যাটে নক দিলে ৩২ দাঁত না দেখানোটা অভদ্রতা। সাহিত্যের স্বর্ণালী যুগে সাহিত্যিকেরা নারীর হাসি জয় করতে পারার যেসব নাটকীয় বিবরণ দিয়ে গেছে, এই যুগে এসে ঘটনা দেখলে নিশ্চিত কপাল চাপড়াইতো! যা হোক, নারীর হাসিতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নাই রে। এদের হাসি এখন সার্বজনীন উপহার। প্রেমময় হাসি ফেসবুকে বুঝার উপায় নাই! :-<
রাখ তোর বকবক। যা একটু আশার আলো দাঁতের ফাকে দেখতে পাচ্ছিলাম তাও বন্ধ করে দিচ্ছিস! এই বয়সে পোকাপোকি না করলে আর কখন করবে? আর আমি অপরিচিত না। একই ক্যাম্পাসে পড়ি, মিউচুয়াল ফ্রেন্ডস একশ'র উপর!
- ব্যাপক অবস্থা! তবে তরলমতী নারী হইতে সাবধান আগেই বলে রাখলাম।
তরলমতী নারী মানে?!
- এই যে! যাকে তাকে পোকায়, নক দিলে আজাইরা ভ্যাটকায় এরা হচ্ছে তরলমতী মেয়ে। এরা কোথাও স্থির থাকে না। না জনে, না স্থানে! এরা জন এবং স্থান ঘন ঘন পাল্টায়। শুধু কয়টা পোক আর দাঁতাল স্মাইলি দেখে ভরসা করা যাচ্ছে না।
তুই সবকিছু দুই ডিগ্রি বেশি বুঝিস! এত বুঝেও নিজে তো কিছু করতে পারলি না। যাকে তাকে পোকায় মানে কী? শুধু আমাকে পোকায়। আর ভ্যাটকায় বলবি না। নক দিলে হাসে। স্নিগ্ধ হাসি। আমি মনের চোখে দেখতে পাই!
- তোর মনের চোখে ছানি পড়ছে রে! যা হোক, আমি আর নিরুৎসাহিত করবো না। লেগে থাক। দেখি কী হয়। বাচ্চাকাচ্চার নামের ব্যাপারেও আমার কাছে পরামর্শ নিতে পারিস!
বাচ্চা কাচ্চা আসলো কোত্থেকে আবার?!
- এইতো, পোকাপোকি থেকে শুরু শেষকালে বাচ্চাকাচ্চা আর মাঝে বিয়ে!
হইছে! আর টিটকারি মারতে হবে না। আমি "মিশন পসিবল-১" নেমে পড়তেছি। দোয়া করিস।
রাহাত চ্যাট বক্সে বন্ধু আসিফের পাশে সবুজ বাতি নিভে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। তারপর হাসতে লাগলো। তারপর হবু ভাবীর প্রোফাইলটা একবার দেখে আসলো। নামটা অদ্ভুত- তমালিকা ছারখার! নামের শেষে ছারখার কেন কে জানে! কী ভেবে যেন হঠাত একটা পোক দিয়ে বসলো রাহাত। মুহূর্তের মাঝে পোক ব্যাক! রাহাতের বুকে খচ করে উঠলো। ঘটনা কী! আবার পোক এবং সাথে সাথে পোক ব্যাক। এভাবেই চললো কিছুক্ষণ। তারপর মেসেজ- হ্যালো, পোককন্যা!
রিপ্লাইয়ে সেই দন্তবিকশিত হাসির ইমো।
রাহাতের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বন্ধুর জীবনে আসন্ন হতাশার ঘনঘটা সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
- অপরিচিত মানুষের পোক ব্যাক করলেন!
বা রে! আপনি অপরিচিত মানুষকে পোক করতে পারবেন আর আমি ব্যাক করলেই দোষ?
- না দোষ না। তবে আপনি কিন্তু আমার অপরিচিত না। সম্পর্কে আমার ভাবী হন।
তাই নাকি!? তাহলে তো আপনিও আমার পরিচত। দেবর বলে কথা!
ভাবী সম্বোধন করে মেয়েটাকে চমকে দেয়ার ইচ্ছা ছিলো রাহাতের। উলটা নিজেই চমকে গেলো! সম্বোধনটা কী সহজ স্বাভাবিকভাবে হজম করে ফেললো মেয়েটা!
- ফাজলামো করে বললাম। মাইন্ড করবেন না। আসলে আপনি পরিচিতের পরিচত বলা যায়।
নাহ! মাইন্ড করি নাই। আমি রক্তের গ্রুপ 'মাইন্ড -'।
-বাহ! ভালো তো। মাইন্ড না করলে তো আরেকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাই যায়। আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?
থাকবে না কেন? আছে তো!
- ওহ! কে উনি, পরিচয় পেতে পারি?
এই মুহূর্তে আপনি। হি হি!!!
রাহাত মনিটরে মাথাটা বাড়ি দিলো। রীতিমত টাশকিফাইং ব্যাপার সেপার! মেয়েটা তরলমতী মনে হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে একেবারে বায়বীয় নারী! আরো কিছুক্ষণ চ্যাট চললো। এর মাঝে বেশ কয়েকবার রাহাত মনিটরে মাথা ঠুকতে বাধ্য হলো। রাতে ঘুমাতে গেলো মাথা ব্যথা নিয়ে। সকালে ঘুম ভেঙেই বন্ধুর উদ্দেশ্যে দৌড়...
কী রে! চোখ মুখ কপাল সব ফুলা ফুলা কেন?
কপাল ডলতে ডলতে রাহাত বললো, রাতে মাথা ব্যথায় ভালো ঘুম হয় নাই আর হবু ভাবী কিংবা "কিছু একটার" সাথে চ্যাট করে মাথার সাথে মনিটরের বার কয়েক জোরালো সংঘর্ষ হওয়াতে এই দশা!
বলতে বলতে মোবাইলে চ্যাট ইতিহাস মেলে ধরলো আসিফের সামনে। ইতিহাসের পাতা ভর্তি তমালিকা নামধারী মেয়েটির দাঁতাল হাসি এবং তরল বাক্যবিনিময় অভূতপূর্ব সংরক্ষণ দেখে আসিফ নির্বাক হয়ে গেলো। অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়, সে হয়ে গেলো লোহা, চোখ হয়ে গেলো ব্ল্যাকহোলের মতো অন্ধকার।
মৌনতা ভেঙে একসময় আসিফ বললো, দোস্ত! আমি তো শেষ। কবুল বলতে চেয়ে এভাবে আবুল হয়ে যাবো বুঝি নাই।
- কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই বন্ধু। তরলমতী কন্যাদের চেনা হয়ে গেছে, এবার তোর জন্য চৌম্বকধর্মী কঠিন পদার্থ জোগাড় করবো। তোর জীবনে এঁটে থাকবে সবসময়।
আমার আর এসবে আগ্রহ নাই। ফেসবুকে এভাবে টোকা, মানে পোকের রিপ্লাই দিতে কে বলছিলো, ভ্যাক ভ্যাক করে ছাগলের মতো হাসতেও কে বলছিলো? বাস্তবে তো মেয়েদের টোকা দিলেই ইভটিজার হয়ে যাই। মেয়েরা টিজ বুঝে, প্রেম বোঝে না। আফসোস!
- স্নিগ্ধ সেই হাসি এখন ছাগলের হাসি মনে হচ্ছে? বাহ!
হ্যাঁ, মনে হচ্ছে। মেয়েদেরকে আর পোকই দিবো না, নকও দিবো না। ছেলেদেরকেই পোক দিবো, নক দিবো...
- থাক বন্ধু, আর আগাইস না। এভাবে চলতে থাকলে পরে ফুলও দিবি ছেলেদের। চল হাঁটি। মেয়েদের মতো হাত জড়ায় ধরিস না আবার। কাঁধে হাত রেখে হাঁটা দিবি।
আসিফ কী শুনলো কে জানে। রাহাতের হাত জড়ায় ধরেই হাঁটা ধরলো সামনের দিকে। সাথে গান ধরলো- এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?
গানের নিয়ম মতো রাহাতের বলা উচিত- তুমিই বলো! (টিং!)
রাহাত কিছু বললো না। তবে সামনে একটা মনিটরের অভাব বোধ করছে। মনিটর থাকলে জোরসে মাথায় একটা বাড়ি দেয়া যেত।
দুই বন্ধু হেঁটে যাচ্ছে। দুজনই এক নারীর টোকার শিকার। একজনের হৃদয় আহত, অন্যজনের কপাল। বাস্তবে নারীরা বাঁকা চোখের চাহনিতে ছেলেদের হৃদয়ে টোকা দিয়ে মজা পায়। ফেসবুকে বাঁকা চোখে তাকানোর সিস্টেম নাই। তাই "তমালিকা ছারখার"রা পোক দেয়।
ছেলেদের পোকের বাংলা অর্থ টোকা। মেয়েদের পোকের অর্থ শুধু টোকা করলে চলে না। তাদের একেকটা পোক একেকটা ইতিহাস!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১০