সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যাপারটাই খারাপ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানেই হলো সংখ্যালঘুদের ওপর কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাওয়া। আর মানুষ একবার অন্যের উপর কতৃত্ব প্রকাশের সুযোগ পেলে সেটা সহজে ছাড়ে না। রামুতে ঘটে যাওয়া ঘটনা, ঘটনার প্রেক্ষাপট মোটামুটি সবারই জানা। ঘটনার উৎস অবশ্যই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতজনিত প্রতিক্রিয়া। কিন্তু শুধু অনুভূতিতে আঘাত এমন ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে ?
- মনে হয় না। ব্যাপারটার সাথে আর যা যোগ হয়েছে, তা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তির অপব্যবহার। সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে ইন্ধন দিয়ে সমাজের "বুদ্ধিপরজীবী" অংশ সহজেই নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিতে পারে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এমনিতেই মুখিয়ে থাকে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্র পাওয়ার জন্য। ক্ষমতা মাত্রই মানুষকে নষ্ট করে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় একজনের ক্ষমতা প্রদর্শনীর ভারে, আর সেখানে সহস্র লোকের ক্ষমতার অহমিকায় তো মন্দির ভাঙবেই...
হাত, পা, সব ঠিকঠাক থাকলেই মানুষ হয় না, আবার বিকলাঙ্গ হয়েও মানুষ হওয়া যায়। কিন্তু এই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চরিত্রে ধ্বংস-ধ্বংস খেলার যে প্রবণতা, তাতে তারা শারীরিক বৈশিষ্ট্যে মানুষ হলেও এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য "মানুষ" শব্দের এর আগে 'অ' বর্ণের মতো যুক্ত হয়; 'অ' টা বিশাল ফন্টে, আর 'মানুষ' থাকবে আণুবীক্ষণিক ফন্টে- "অমানুষ"
এখানে সমাজের আরেকটা অংশের প্রতিক্রিয়াও সমস্যা সৃষ্টি করছে। তারা এই অমানুষদের কৃতকর্ম ধর্মের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, অনেকটা জোর করে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও বিশেষ কোন ধর্মের ত্রুটি হিসেবে দেখে সেভাবে বিচার করার মতো সহজ সমিকরণীক গণিত না। সেভাবে বিচার করলে ভুল করা হবে এবং তাতে সংঘাত, ধর্মীয় অস্থিরতা বাড়বেই, কমবে না। ভার্চুয়াল জগতেও এ কারণে দুই পক্ষের অনর্থক বিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে। রামুর সেই বক-ধার্মিকদের বাইরে যত ধার্মিক আছে কেউই কিন্তু এই আচরণ সমর্থন করছে না। শুধু ধর্মের সমস্যার কারণে এই সংঘাত হলে সকল ধার্মিকই একাত্ম হতো। সেটা কিন্তু হচ্ছে না। এখানে একদল অমানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠগতার সুবিধা পাওয়ায় যত অনিষ্ট হচ্ছে। আজকে যদি রামু'র বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ হতো, সেখানেও একই প্রেক্ষাপটে একই ঘটনা ঘটতো। অহিংসার বাণী সেখানে খাটতো না। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও খাটে নাই। এটাই হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ধর্মের বাণী ছাপিয়ে অধর্ম করে, করায় !
ধর্মে অবিশ্বাসীরা সবসময় যা করে, এখনো তা'ই করে যাচ্ছে। দরকার ছিল ধার্মিকদের সাথেই একাত্ম হয়ে এসব বক-ধার্মিকদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া। কিন্তু এরা লড়ে যায় কেবলই ধর্মের বিরুদ্ধে, মাঝখানে মানুষ মরে সাফ হয়। এ ঘটনায় ধর্মকে দোষারোপ করা হচ্ছে... একটা কথা বলে রাখি-
একটা সময় অবিশ্বাসীদের সংখ্যা বেশি হবে। তারা হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সে সময় তারা বিশ্বাসীদের গলায় পাড়া দিয়ে বলবে,
কই তোর আল্লাহ ? ডাক দেখি। কই আসে না কেন ? তারপর হো হো করে হাসতে হাসতে উল্লাস করবে ! হ্যাঁ, এটাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা। না মানে ধর্ম, না মানে নিধর্ম। করে শুধু অধর্ম !
এর মানে এই না অবিশ্বাসীরা খারাপ। ভালো-খারাপের সাথে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কোন সম্পর্ক আছে- এই কথা আমি "অবিশ্বাস" করি।
সবার আগে শারীরিক মানুষেরা মানবিক মানুষ হতে শিখুক। তারপর বিশ্বাস-অবিশ্বাস যা ইচ্ছা করুক...
তখন এই পৃথিবীতে 'সমস্যা' নামক শব্দটা আর থাকবে না...!