আমি তো ভাই বেনসন খাই না। তাহলে গোল্ডলিফের কার্টুন আর কোক ছয়টা।
বললেন, ফাটাফাটি যেন হয়। কিন্তু কিসের কবিতা বলবেন তো?
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে হাতে ধরিয়ে দিলেন। রুমের সবাই কাগজটার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। দেখলাম মেয়েলি হাতের লিখা একটা ছড়া। “সফদার ডাক্তার”-এর কোলাজ। “রিদুনের রিদুনামি”।
..................................................
রিদুনের রিদুনামি বুয়েটের ক্যাম্পাসে
ধুপ-ধাপ ধুম-ধাম কত কিছু ঘটেরে
লিকলিকে কালা ঠ্যাঙ জোড়াতালি হাফপ্যান্ট
ক্রিকেটের বলহাতে ফুটবল খেলেরে।।
ভরপেট তিনবেলা ভাত খায় গামলা,
যেন ঘানিটানা বলদের মজুরের কামলা।
এদিকে রিদুন ভায়া আয়নাকে বলে রোজ
আমি দেখি কালা না খানিকটা শ্যামলা(!)
লোকে বলে আহারে(!)
উহুরে কি ভাবেরে
আরেকটু সাদা হলে কালা বলা যেতরে!
রাস্তার ললনারা এইবেলা সাবধান,
রিদুনের হৃদয়টি শতমাইল বেগবান।
সিনাটাকে ফুলিয়ে পিঠটান করে সে,
রমণী হরণে মন আহা উহু করে রে।
এইবার রিদুনামি মহাখালী বাসস্ট্যান্ড,
পরনে এখনো সেই জোড়াতালী হাফপ্যান্ট।
ভগিনীর ফেরেন্ডরা বসে আছে বাসেতে,
“ইমপ্রেস করবই” – ঠেকায় কে আমারে”।
এইভেবে রিদুলাল বাসটার পেছনে
প্রাণপণ দেয় ছুট দাঁতমুখ খিঁচায়ে।
রিদুনের রিদুনামি কত কি যে বন্দনা
মাথাটাতে ছিট আছে (হৃদয়টা মন্দ না)।
..................................................
....এবার বলেন, মেয়েটা কে। কী করে? কোথায় পড়ে? কী সম্পর্ক? দেখতে কেমন? এক গাদা প্রশ্ন।
এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। লিখবা কিনা কও?
কবিতা লিখা কি ডালভাত? শানে নুযুল না জেনে কিভাবে লিখি? চিন্তিত ভঙ্গিতে বললাম।
আচ্ছা, তাহলে শুনো। বেচারের মুখ চোখ লজ্জায় লাল। নাকি আর একটু কালো? নতুন প্রেমে পড়া হাই ইশকুলের কালো ছেলেটির মত।
আমি কঠিন সিরিয়াস হয়ে হাত-পা ঝেড়েঝুড়ে বসলাম।
কেউ একজন গলা খাঁকারি দিল। আর একটা কোক হলে মন্দ হত হত না, কি কস, রিদুন্যা?
এক কান থেকে সেগারেট বেরিয়ে এল ঠোঁটে। যেন রবিন হুড তার ধনুকে শর পরিয়ে শত্রু নিধনে প্রস্তুত।
ঘটনা হল, মেয়েটির নাম স্বর্ণা। ময়মনসিংহ মেডিকেলের সেকেন্ড ইয়ার। বোনের রুমমেট। ওর ভাইয়ের সাথে আমার বোনের বিয়ে।
আমরা একসাথে বলে উঠলাম, মানে বেয়াইন! তাই বলেন! তো উনি এখন কোথায়? ছড়াটা পেলেন কীভাবে?
আমাদের বাসায়। এখন ছন্দে ছন্দে এর উত্তর দাও। আমি সিগারেট নিয়ে আসি। সিগারেট ছাড়া তো আবার আমাদের কবির কবিতা আসে না।
আরে! রাখেন আপনার সিগারেট। মেয়েরে না দেখলে কবিতা হবে না।
যেন তৈরি ছিল। গলা থেকে পেন ড্রাইভটা খুলে বাড়িয়ে দিল।
জুম ইন করে করে দেখলাম একে একে সবক'টা ছবি। উনার সামনে যতটা শালীনভাবে সম্ভব।
সিগারেট আগুনে পোড়াতে পোড়াতে লিখে ফেললাম। জন্ম নিল “সাদাকালো”।
..................................................
গোলগাল চেহারায় রঙচঙ লাগিয়ে,
ছড়াখানি লিখেছ তালগোল পাকিয়ে।
কালোর ভিতরে কেন সাদা মন খুঁজলে?
আর কী কী খুঁজে পাও চোখদু’টি বুঁজলে?
সাদাকালো স্বপ্নেরা কতরাত জ্বালিয়ে
ঘুমুতে দেয়নি মোটে বলবে না বানিয়ে।
মুগ্ধ হতে গিয়ে আয়নায় যতবার
তাকিয়েছি, পারিনি স্বরূপে কোনবার।
তোমার গোলালু চোখে নিজেকে খুঁজে পেয়ে,
মুগ্ধ না যতটা, বিব্রত তারচেয়ে।
দুষ্টু হাওয়ায় যদি মুখে চুল উড়ালে,
সরিয়ে আবার কেন চোখ দু’টি ঘুরালে?
এনাটমি ছেড়ে দিয়ে আজ তুমি স্বর্ণা,
সাইকোলজির ক্লাসে কেন দিলে ধর্ণা?
যে ঘরে আমায় রাখো, আমি তার আয়তন।
তোমার হৃদয়ে শুধু আমারি যে বিচরণ।।
..................................................
পরের ঘটনা না হয় আরেক দিন বলব।
খুব ঘুম পাচ্ছে রে ভাই।
এই সামহোয়্যারইনব্লগ গত কয়েকদিন একদম ঘুমাতে দেয়নি।
শুভ সকাল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৮:২২