রেজিস্টার বিল্ডিঙের নিচতলায় একটা তথ্যকেন্দ্র আছে। কিন্তু যতদিন গেছি কোন মনিষ্যি চখে পরে নাই। কোথায় গিয়ে জিজ্ঞেস করব? কিছু না বুঝে ৩০৮-এ ঢুকি। বললাম, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য ট্রান্সক্রিপ্ট উঠাতে হবে। ‘৩১০ থেকে ফর্ম নিয়ে ফিলাপ করে হলে জমা দেন। প্রভোস্টের সাইন হলে এখানে এনে...।’ কাউন্টারে বসা লোকটি বলতে থাকলে আমি থামাই, ‘সেই একি প্রসেস?’ সন্দেহ হয়। আরেক রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে বলল, ৩০৫-এ যান। কাজ হল। যেতে জানাল, অনার্সের নম্বরপত্রের জন্য লাগবে ৪০০, মাস্টার্সের জন্য ৪০০। আর ইম্প্রুভমেন্ট থাকলে প্রতিটার জন্য ১০০ করে। জরুরি উঠাতে হলে প্রতি কপির জন্য ৫০০ টাকা করে। দুইটা ফর্ম ফিলাপ করার পর টাকার অঙ্ক লিখে দিল। (এটা পরদিনের ঘটনা। কারণ সেই ফরমের সাথে প্রথম বর্ষ থেকে যত নম্বরপত্র আছে, সব ফটোকপি দিতে হবে। আগেরদিন তথ্য জেনে নিয়ে পরদিন ওসব নিয়ে আসি) টাকা দিয়ে আসলাম ব্যাংকে, অনার্সের ও মাস্টার্সের আলাদা করে জরুরি টাকাসহ । পরে রেজিস্টার বিল্ডিঙের এক কর্মচারী জানাল, ‘আপনি তো বেশি দিয়েছেন। অনার্স মাস্টার্স একসাথে হল ৫০০। আলাদা করে দিছেন কেন?’ আমি তো বেকুব, ৩০৫-র লোক যেভাবে বলছে সেভাবে করছি। ‘ওরা তো বলবেই, টাকা পাবে।’ তিনি হাসেন।
৭দিন পর গিয়ে শুনি অনার্সেরটাতে নাকি কি সমস্যা আছে। সেকেন্ড ইয়ারে মোট নম্বর বেশি দেখাচ্ছে চতুর্থ বর্ষের নম্বরপত্রে। ‘আপনার বোধ হয় সেকেন্ড ইয়ারে ইম্প্রুভমেন্ট আছে।’ ‘না ভাই, বাসায় আর কোন কাগজ নাই। আর আমার মনে হয় আমি সেকেন্ড ইয়ারে ইম্প্রুভমেন্ট দেই নাই।’ তার কথায় ৩০৮-এ গিয়ে অনুনয়-বিনয় করে বলায় জানভাই ঢাবির বিশাল সাইজের খাতাপত্তর বের করে দেখে বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনার ইম্প্রুভমেন্ট ছিল। এখন আপনাকে এই নম্বরপত্র উঠাতে হবে।’ তার মানে সেই এক যুগ আগের জিনিশ উঠাতে আবার রেজিস্টার বিল্ডিং--হল--আবার রেজিস্টার বিল্ডিং--জনতা ব্যাঙ্ক--আবার রেজিস্টার বিল্ডিং। উফফ!! ৩১০ থেকে ফর্ম ফিলাপ করে বহু বছর পর হলে গেলাম। হল থেকে বলে, অ্যাডমিট কার্ডের ফটোকপি কই? কাল নিয়ে আসব বলে বিদায় নেই। পরেরদিন সেই হল-অ্যাটাসটেড ফর্ম রেজিস্টার বিল্ডিঙে ৩০৮-এ আনি। শুধু টাকার অংক ১৭৫ বসিয়ে দেয়। সেটা নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা শেষে আবার রেজিস্টার বিল্ডিঙে জমা। (শুধু টাকার অংক কি প্রথমেই ফর্ম নেয়ার সময় বসিয়ে দেয়া যেত না? ওটা লেখার জন্য আরেকবার ঘুরানের মাজেজা কি??)
পরের হপ্তায় সেই নম্বরপত্র নিয়ে ৩০৫-এ। কোনার যিনি কম্পিউটারে সব চেক করে প্রিন্ট দেবেন তার অবসর হওয়ার অপেক্ষা করি। ফাইল নিয়ে বসে কি দেখে বলে, আপানার তো বাংলায় রেফারড। এটা চেক করে আনেন ৩০৮ থেকে। আবার যাই। ‘হুম, আপনার এটার নম্বরপত্র তুলতে হবে।’ রাগে, দুঃখে কি করব বুঝতে পারি না। জানভাই পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। বলল, ‘আরে, এটা উঠাতে হবে না, আপনি ফার্স্ট ইয়ারের নম্বরপত্র অরিজিনালটা নিয়ে আসলে রিপ্লেস করে দেবে। গেলাম পরদিন। কিন্তু যে লোকের কাজ সে বলে, ‘না, এটা কেমনে সম্ভব?’ বহুত হুজ্জতি করার পর বলে, ‘আজকে তো সময় শেষ, পরশু আসেন। কথা বলে দেখি।’ কাজ হল। নতুন দেয়া নম্বরপত্র ফটোকপি করে ৩০৮ হতে ভেরিফাই করিয়ে একবারে সেই কম্পিউটারের লোকের কাছে যাই। সিরিয়াল আসলে যখন কাছে ঘেঁষলাম, তখন ওনার কীবোর্ড কাজ করছে না। কি যন্ত্রণা! সে তার পাশের কলিগকে বলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে তাকে তার কীবোর্ডটা দিতে। অপেক্ষা। আধঘণ্টার ভিতর দেখা গেল সে কোত্থেকে কীবোর্ড যোগার করে এনেছে। অতএব, জরুরি টাকা দিয়ে ৭দিনের জায়গায় আমি সব কাগজ পেলাম ৩ হপ্তায়। ধন্য ধন্য বলি তারে!! ভাবি, রেজিস্টার বিল্ডিঙে আগুন লাগলে অবস্থা কি হবে!