আঁশটে কথা
রাহাদ আবির
সাঁড়াশি অভিযান
ভদ্রলোকের বাসার দরজার সামনে থেকে মাছ চুরি, এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?
সাইদের মা দরজার তালা খুলে ঘরে ঢুকে বোরকা ছেড়ে চারতলায় উঠার ক্লান্তিতে ফ্যানের নিচে বসে হাঁপাতে লাগলো, একটু পর ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি খেতে গিয়ে মাছগুলো ফ্রিজে রাখার কথা তার মনে পড়ে। কিন্তু এ ঘর-ও ঘর করে দ্যাখা গেলো পলিথিন ব্যাগে আনা মাছগুলো রান্নাঘরে নেই, ডাইনিংরুমেও নেই, তবে ঘরে এনে রাখলোটা কোথায় সে? ও আল্লা, সে অ্যাতো মনভোলা, দরজার তালা খোলার সময়ই তো ব্যাগটা বাইরে রেখে এসেছে। তাড়তাড়ি দরজা খুলে সাইদের মা তো তাজ্জব, আরে মাছগুলো গ্যালো কোথায়? দুইহাত বাই পাঁচহাতের দরজার সামনের সামান্য জায়গাটুকু তো খাঁ খাঁ করছে। সে তো দরজার বগলেই রেখেছিলো পলিথিন ব্যাগটা, তাহলে যাবে কোথায়?
পাশের ফ্ল্যাটে চার-পাঁচবার কলিংবেল দিতে মিমের মা দরজা খোলে, সাইদের মা মাছের ব্যাগের কথা বলতেই প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে জানায় এধরনের কোনো মাছের ব্যাগ সে দেখেনি। সাইদের মা ধন্দে পড়ে, তবে কি সিঁড়িতে ওঠা-নামার সময় কোনো বাইরের মানুষ এসে নিয়ে গ্যালো? তাহলে নিচে দাড়োয়ানের কাছে খোঁজ নেয়া যাক। তার স্বামী তাবলিগ করে, সে-ও মাসে দুইবার মহিলাদের নিয়ে বাসায় মাস্তুরাত জামাত বসায়, সুতরাং তার মতো ধার্মিক মহিলা ভালোমতো না জেনে কাউকে দোষারপ করলে মানুষ কি বলবে! তাই ঘরে এসে নিজেকে কালো বোরকায় আবৃত করে সাইদের মা নিচে নামে। দাড়োয়ানকে এ ব্যাপারে বলতে পান খাওয়া লাল ঠোঁটে আবদুল মান্নান চোখ কুচকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, ক্যান আপনে উপরে ওঠনের সময় তো আপনের হাতেই একটা মাছের পলিথিন দ্যাখলাম। অ্যারপর তো চাইরতালায় আর কেউ যায় নাই, এইরহম পলিথিন নিয়া কেউ নিচেও নামে নাই। এ পর্যন্ত বলে সে থামে তারপর বিজ্ঞের মতো নিজের মতামতটা জুড়ে দ্যায়, মাছ যদি কেউ নিয়া থাকে তাইলে এই বাড়ির মইধ্যেই আছে, আপনে পরতিডা ফেলাটে ফেলাটে গিয়া খোঁজ লন, ঘরের চিপা-চুপায় নজর দিয়েন, মাছ চুরি কইরা যাইবো কই?
চারটা বড়ো বড়ো মাছÑ একহাজার টাকার বেশি হবে দাম! তাছাড়া এমন টাটকা মাছ কোথায় মিলবে? এখন তো ঢাকা শহরের মাছ মানেই ফরমালিন মেশানো অপঁচনশীল মাছ। সাইদকে নিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে বোনের বাসায় গেলে জোর করে দিয়ে দিলো, ভোলা থেকে আসার সময় দুলাভাই বড়ো বড়ো টাটকা ইলিশ আর পাংগাশ কিনে এনেছে। ওখান থেকেই দুইটা ইলিশ, দুইটা পাংগাশ দিয়েছিলো।
এই বিল্ডিংয়ে বাড়িওয়ালীর সাথেই তার বেশি খাতির, আগে বিষয়টা তার কানে দেয়া দরকার। বড়িওয়ালী সব শুনে নির্দ্বিধায় জানিয়ে দিলো এটা কার কাজ হতে পারে ; তবে ‘যদি’-র কথা তো বলা যায় না, একবার সব ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে গিয়ে খোঁজ নেয়া ভালো।
দ্রুত তিনতলা পর্যন্ত পাঁচটি ফ্ল্যাটে সাইদের মা পদধুলি দিয়ে ঘটনার বিবরণ দিলো : বিশাল বড় বড় চারটা মাছ যা ঢাকায় টাটকা পাওয়া তো কল্পণা আর দাম হিসাব করলে মিনিমাম দেড়-দুই হাজার। তারপর সম্ভাব্য চোর কে হতে পারে এ বিষয়েও সবার মতামত জানতে চাইলো।
অ্যাতো বড়ো বড়ো চারটা মাছ তার ঘরের দরজা থেকে বেহাত হয়ে যাবে? চারদিন দানাপানি না খেয়ে থাকলেও সাইদের মা এ শোক কাটাতে পারবে না। সে-ও এখন নিশ্চিত এটা ওই চুন্নির মেয়ের কাজ, দরকার হলে ওই মাগির তামাম ঘর খুঁজে সে ফাতা ফাতা করে ফেলবে তবু মাছ বের করবেই। সাইদের মা দ্রুত চারতলায় উঠে কলিংবেল চাপলে মিমের মা মুখ-বের -করা দরজা ফাঁক করে উঁকি মারে, কি ভাবি মাছ পাইছেন?
একটু ভিতরে ঢুকতে দেন গো ভাবি, চাইরতালা উঠা-নামা কইরা হাঁপাইয়া গেছি, একটু ঠাণ্ডা পানি খাবো।
আমি তো বাথরুমে ঢুকতে লইছিলাম.., বলে মিমের মা মুখের ভাব এমন করলো যেন এই মুহূর্তেই বাথরুম সারার জন্য দরজাটা বন্ধ করা জরুরি।
আমার ফ্রিজে ঠাণ্ডা পানি নাই, একটু ঠাণ্ডা পানি খাওয়ান গো।
আচ্ছা আসেন..। অপ্রস্তুত হয়ে মিমের মা খুব অনিচ্ছার সাথে আগলানো দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়।
ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে মিমের মা। দ্রুততার সাথে ভেতরটা পুরোপুরি চোখ বুলাতে না পেরে সাইদের মা ফের নিজ হাতেই ফ্রিজ খুলে বসে, ওইটা কি রাখছেন ভাবি?
ওইটা তো কাঁচা পেঁপে। বলে গ্লাসে পানি ঢালতে থাকে।
আপনের ফ্রিজটা এখনও নতুনের মতো। বলতে বলতে সাইদের মা উপরের ডিপফ্রিজ খুলে দেখে বন্ধ করে দ্যায়। সে আগেই ভেবেছিলো ফ্রিজে রাখার কথা না, অন্য কোথাও রেখেছে। রান্নাঘর ও এদিক-সেদিক উঁকি দিতে দিতে সাইদের মা অনুরোধ করে, ভাবি ট্যাং আছে না? ট্যাং দিয়া চিনি দিয়া নাইরা দ্যান। গলাটা একবারে শুকাইয়া গেছে।
দুটি বেড আর ড্রইং ডাইনিং এর ছোট ফ্ল্যাট। সাইদের মা বড়ো ঘরটায় ঢুকতে যেতেই মিমের মা হাহাকার করে ওঠে, ভাবি ওইঘরে না এইঘরে বসেন।
না না, এইঘরেই বসি। সাইদের মা খাটের উল্টোপাশের চেয়ারটায় বসে। ডাইনিংরুম থেকে মিমের মা-র ট্যাং বানিয়ে আনতে যে সামান্য সময় লাগলো এর মধ্যেই সাইদের মা দূরবীন-চোখে ঘরের চিপা-চুপায় উঁকিঝুঁকি মেরে অবশেষে খাটের নিচে উঁবু হয়ে পর্যবেক্ষণ করতেই কেল্লা ফতে, ঐ তো সবুজ পলিথিনটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। যাক এতক্ষণে প্রাণটা হাতে পেয়েছে। খাটে বসে মিমের মা-র আনা ট্যাং খেয়ে এবার সত্যি সত্যিই তার পরানটা শীতল হলো। গ্লাসটা ফিরিয়ে দিয়ে সাইদের মা মুচকি হাসে, তা ভাবি আপনের না বাথরুম পাইছে, বাথরুমে গেলেন না? আমি বসি আপনে বাথরুম যান।
না.. বাথরুম গেছে গা।
অসুবিধা নাই আপনে যান, আমি চোর না, ঘরের কিছু চুরি হইবো না।
ছি ছি, এগুলা কি কন! মিমের মা নিচুস্বরে বলে।
মানুষ যে আজকাল কি হইছে ভাবি কাউরে বিশ^াস করন যায়না। চেয়ার ছেড়ে মিমের মা-র পাশে খাটে বসতে বসতে সাইদের মা বলে। মিমের মাকে নিরুত্তর দেখে নিজেই আবার যোগ করে, তা ভাবি একটু চা-নাস্তা খাওয়াইবেন না, আপনের বাসায় আসলাম।
কি খাইতে দিমু, ঘরে কিছু নাই, চা-ও শেষ হইয়া গেছে।
না, চুন্নি মাগি ভয় পাইছে, তাকে এঘরে রেখে কিছুতেই উঠবে না, যা করার ওর সামনেই করতে হবে। এই ভেবে সাইদের মা আচমকা যেন খাপ থেকে তলোয়ার বের করে, ভাবি আমি তো মাছ পাইছি।
শুনে তেমন আচমকাই মিমের মা চমকে ওঠে, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, চোখ গোল করে জানতে চায়, কোন..কোন জায়গায়?
সাইদের মা তড়িৎ মাটিতে হাঁটু ভেঙ্গে বসে খাটের তল থেকে সবুজ পলিথিনটা টেনে নিয়ে দেখায়, এই যে মাছ!
কী? কী..কন? এইটা আমার ঘরে.. আমার ঘরে আইবো ক্যান? মিমের মা যেন সাত আসমান থেকে মাটিতে পড়ে।
আল্লারে কি কয়, তাইলে আমি পাইলাম ক্যামনে? আপনের খাটের তল থেকা কি ম্যাজিক দিয়া বাইর করছি?
না না, এইটা হইতেই পারে না, মিমের মা প্রতিবাদ করে, এইটা আমার ঘরে আইবো কোত্থেকা?
আইবো কোত্থেকা মানে? সাইদের মা-র ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, গলা উচিয়ে বলে, আপনে চুরি কইরা আইনা খাটের নিচে রাখছেন, আবার উল্টা ঝারি লন?
কি, মুখ সামলাইয়া কথা কন কইলাম, আমার ঘরে ঢুইকা আমারে চোর কয়, সাহস কতো?
সাহসের কি দেখছেন আপনে, আমি চোর হাতেনাতে ধরছি আমার সাহস থাকবো না? চোর কোহানকার!
কি, আবার অপমান? মিমের মা তর্জনি উচায়, আপনে আমার বাসার থেকা যান কইলাম, যান।
যামুই তো, চোরের বাসায় কি থাকতে আইছি নি, চোর ধরতে আইছি। যেতে যেতে সাইদের মা তীব্রস্বরে চেচায়, আমি অহনই সব ফ্লাটে ফ্লাটে যামু, শালিস বসামু।
হ হ, অহন বাইরন। সব ষড়যন্ত্র, আমিও দেইখা লমু।
দরজার বাইরে এসে সাইদের মা গলায় যেন মাইক বসিয়ে ফেলে, বিচার বসাইয়া তোমার আমি মাথা নাইড়া করমু চুন্নি, পুরা এলাকায় রাষ্ট কইরা দিমু তোরে।...
পলিটিকস
ঘটনার পরবর্তী স্টেপে সাইদের মা তখনই বাড়িওয়ালীর বাসায় গিয়ে এক নিঃশ্বাসে রোমাঞ্চকর উদ্ধারাভিযানের কাহিনী আদ্যোপান্ত বর্ণনা করে ‘দাবি মানতেই হবে নইলে আন্দোলন’-এর সুরে জানায়, এর একটা উপযুক্ত বিহিত করনই লাগবো ভাবি, ঘরের লগে চোর রাইখা তো নাকে ত্যাল দিয়া ঘুমান যায় না, আজকে আমার সামান্য মাছ চুরি করছে কালকে যে আপনের ঘরের সোনা-গয়না চুরি করবো না হের নিশ্চয়তা কি?...
হ হ, দেহি কি করা যায়। আমি তো আগেই আপনেরে সাফ জানাইলাম, চোর মিমের মা ছাড়া আর কেউ না। আচ্ছা অহন শান্ত হন, মাথা ঠাণ্ডা করেন।
শান্ত থাকি কেমনে কন, আগে চুন্নি নিচতালায় আছিলো আপনে আবার আমার পাশে ভাড়া দিলেন (মিমের নানি নিচতলায় ভাড়া থাকে, আগে একসাথেই ছিলো, দুইমাস হলো মায়ের সাথে ঝগড়া করে আলাদা হয়েছে, কারণ মিমের নানি নাকি মেয়ের ঘরের খাবার, জিনিস ইত্যাদি চুরি করে)। অহন চোর পাশে লইয়া শান্তিতে থাকি কেমনে। হাতেনাতে ধরলাম তারপরও চুন্নি মাগি ডাটে কয়, এইটা আমার ঘরে আইবো কোত্থেকা? কতবড় জঘন্য শয়তান চিন্তা করেন!
ওই মিমের মা মনটি আর কি, অই ছেমরির মায় তো আরো বেশি চুন্নি। নিচে আমাগো লেবু পেয়ারা গাছের ফল তো আমরা খাইতেই পারি না, সব অই মনটি আর ওর মায় সাবার করে, কতদিন হাতেনাতে ধরছি, কয়, দুই একটা নিলে কি হয়?
এরপর লঘু আলোচনা গুরু আলোচনায় মোড় নিলে মিমের মা-নানি সহ চৌদ্দগুষ্ঠির স্বভাব চরিত্র উদঘাটন শুরু হয়। বড়িওয়ালী রসিয়ে রসিয়ে বলে : আসলে স্বভাব যাইবো ক্যামনে? ওরা তো আগে একরকম বস্তিতেই থাকতো। মিমের বাপে ভালো ফ্যামিলির ছেলে। ঢাকায় মেসে থাইকা পড়াশুনা করতো, অই মনটির বাসায় টিউশনি করাইতে গেলে ছেমরি শুরু করে মাস্টারের লগে পিড়িত, পড়তে বইয়া বলে হাত ধইরা বইয়া থাকতো। মনটির বাপে তখন নিউমার্কেটের রাস্তায় ফল বেঁচতো। চিন্তা করলো মনটির মতো কালা মাইয়ারে বিয়া দিবো ক্যামনে? তারপর একদিন ঘরের মধ্যে প্যাঁচে ফালাইয়া মানুষজন ডাইকা কাজি দিয়া বিয়া করাইয়া দ্যায়। বস্তির ফল বিক্রেতার মাইয়ারে বিয়া করছে শুইনা মনটির শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ছেলেরে ত্যাজ্য পুত্র করে। আজ পর্যন্তও ছেলের বউরে স্বীকার করে নাই। মনটির জামাই খালি মাঝে মাঝে মা-বাপের লগে গিয়া দেহা কইরা আসে। আবার মনটির মায়ের সৎ মা কি করছে জানেন নি? মনটির সৎ নানি হের বড় জামাইয়ের সাথে ভাইগা গেছে।..
ছি ছি, আস্তাগফিরুল্লাহ, কি জঘন্য! ঠিকই আছে, মানুষ গরিব হোক সেইটা মাইনা নেয়া যায়, কিন্তু স্বভাব-চরিত্র খারাপ হইলে.. , সাইদের মা মন্তব্য করে। এরপর গলা চিকন করে যোগ করে, একবার মাসখানিক আগে আমি জামাতের দাওয়াত দিতে মিমগো বাসায় গেছিলাম, মিমের মা দরজা খুইলা কয়, আসেন। বিশ্বাস করবেন না ভাবি দেখি কি খালি ব্রা পরা। আমি তো ডরে আর শরমে নাই, তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতর ঢুকছি, কওয়া তো যায় না, আমার ছোটভাইটা বা সাইদের বাপও ওইসময় দরজার সামনে আসতে পারে। জিগাইলাম, কি ভাবি, এমনে খালি গায়ে যে দরজা খুললেন আমি না হইয়া তো কোনো পুরুষও হইতে পারতো। বেহায়ার মতো কয়, কে আর আইবো এইসময়, বাইরে থেকা আইছি তো গরম লাগতাছে। মনে মনে কই, কি এমন শরীর যে মাইনষেরে দেহানের অ্যাতো শখ, আর আমাগো মতন সুন্দর হইলে না জানি কি করতো! আর মাগির কি কালা কুচকুইচচা শরীর ভাবি, দেখলে ঘিণ করে।
হ, ওই ছেমরি অ্যামনই, শরম-লজ্জা নাই। এইসব কইরাই তো মিমের বাপের মতো সরল-সোজা মানুষটারে বিয়া করছে। তারপর হুনেন, বিয়ার পর বস্তি ছাইরা কোনোরকমের একটা দুইরুমের বাসায় ওঠেÑ একরুমে মনটির জামাই আর অন্যরুমে শ^শুর-শ^াশুড়ি। মনটির জামাই চাকরি শুরু করলে বাসা ভাড়া একাই সব দিতো। পরে শ্বশুররে নিউমার্কেটে ফলের দোকানও লইয়া দিছে।..
এসব ঘটনা সাইদের মা-র একেবারে অজানা নয়, আগে ভাসা ভাসা এর ওর কাছ থেকে শুনেছিলো, এখন আদ্যোপান্ত শুনে মেমোরি ঝালাই করে নিলো। এইভাবে দুপুরে না খেয়ে বেলা সাড়ে তিনটা কেটে যায় সাইদের মা-র সব ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে গিয়ে এই মাছ উদ্ধারাভিযানের কাহিনী বর্ণনা করতে।
এ তো গেলো দড়ির একপ্রান্তের কথা, অপর প্রান্তে মিমের মা-ও থেমে নেই, সব ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে গিয়ে সে-ও তার পক্ষে প্রচারাভিযান চালিয়েছে। দোতালার তানিয়ার মা-র সাথে তার খাতির, সেখানেই আগে যায়। জোর গলায় বলে : আমি তো বিশ্বাসই করতে পারি না অই কিপটা বোরখাআলি মাছের পলিথিন দরজার বাইরে রাখতে পারে! আমি বাথরুমে গেছিলাম, বাইরইয়া দেহি দরজা খোলা, মিনায় খেলতাছেÑ দেহেন না অইডায় কি শয়তানি করে? অহন এর মধ্যে যে শয়তানডায় মাছের ব্যাগটা টাইনা টাইনা খাটের নিচে ঢুকাইছে হেইডা আমি কেমনে জানমু, কন?
তানিয়ার মা টেটন-মাথায় দ্রুত হিসাব কষে, মিমের ছোটবোন মিনার বয়স দেড়বছর, চারটা বড় সাইজ মাছের পলিথিনের ওজন ৯-১০ কেজি; তাহলে মিনার পক্ষে টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? তাও আবার খাটি চোরের মতো বুদ্ধি করে খাটের নিচে? কিন্তু ঘটনায় মিমের মা চুরি করেছে মনে হলেও সে অই কিপটা সাইদের মা-র বিরুদ্ধে যাবে। সেবার ঝগড়ার পর থেকে বোরখার আড়ালে ঢাকা মিটমিটে শয়তান মাগি তার দু চক্ষের বিষ। সব শুনে অবশেষে মনটির মা-র সুরে তানিয়ার মা প্রতিবাদ করে, না না, ভদ্রলোকের রাসায় গিয়া চুন্নি কইবো অপমান করবোÑ এর একটা বিহিত করমুই, আপনে নিশ্চিন্ত থাকেন।
দোতলায় থাকা হিন্দু মধ্যবয়সী মহিলাটি মধ্যবর্তী পন্থা গ্রহণ করে। সাইদের মাকে বলে, আপনে এটা নিয়া বিচার বসান, আমি আছি আপনার সাথে। চুরিও করবে আবার স্বীকার না করে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেবে, তা তো হয় না, উপযুক্ত শাস্তি দিতেই হবে। আবার মিমের মা আসলে ভোল পাল্টে বলে, বোরখাআলিরা শয়তান হয় বেশি, আপনার চিন্তার কি আছে, আপনিও বিচার ডাকেন।
মিমের মা সব বাসায়ই গেলো কেবল নিজের মায়ের বাসা ছাড়া। মা নিশ্চয়ই তার কথা বিশ্বাস করবে না, তখন হিতে বিপরীত হবে। ঘরের শত্র“ বিভীষণ!
আশ্বিন ১৪১২
(প্রকাশ : সমকাল, ২১ জুলাই ২০০৬)