somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জর্জ অরওয়েলের অ্যানিমেল ফার্ম

২৭ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজি সাহিত্যের বিংশ শতাব্দীর এক বড় লেখকের জন্ম তখনকার ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে। শুধু তাই নয় ইংল্যান্ড থেকে এসে এই লেখক তার কর্মজীবনও শুর¤œ করেন ভারতবর্ষে। এই লেখকের নাম জর্জ অরওয়েল। যার আসল নাম এরিক আর্থার বে¯œয়ার। ১৯০৩ সালে ভারতের মতিহারে তার জন্ম। জর্জ অরওয়েলের সবচে বিখ্যাত দুটি উপন্যাস হল অ্যানিমেল ফার্ম (১৯৪৫) ও নাইনটিন এইটি ফোর (১৯৪৯)। অ্যানিমেল ফার্ম নিয়েই এই লেখা।
অ্যানিমেল ফার্মÑ পশুর খামার। নামটি থেকেই উপন্যাসের কাহিনীর কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। মানে সাদা কথায় উপন্যাসটি পশুপাখিকে কেন্দ্র করে। তাহলে উপন্যাসটি বাচ্চাদের জন্য? আদতে তা নয়। এ ধরনের উপন্যাসকে বলে রূপকধর্মী। প্রতীকের মাধ্যমে এখানে বলা হয় অন্য গল্প। অ্যানিমেল ফার্ম হল রূপকধর্মী একটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস। স্ট্যালিনের সময়কার সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া এর পটভূমি।
উপন্যাসের গল্পটা সং—েগপে এরকম : মিস্টার জোন্সের একটি পশু-খামার রয়েছে। সেটির নাম ম্যানর ফার্ম। তার খামারের পশুরা তার উপর ভীষণ —গ্যাপা। কেবল মিস্টার জোন্স নয়, দুপেয়ে সম¯ত্ম মানুষের ওপরেই তারা —গ্যাপা। পশুদের নেতা ওল্ড মেজর। একটি বৃদ্ধ শূকর। এক রাতের সভায় সে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়। পরদিনই তার মৃত্যু ঘটে। তার ভাষণের সারমর্ম হল : পশুর জীবন খুব কর¤œণ, কষ্টকর এবং অল্প সময়ের। এই জীবনের পুরোটা জুড়ে তারা মানুষকে কেবল দিয়েই যায়। অথচ মানুষ এর বদলে তাদের প্রতি সদয় হওয়া তো দূরের কথা, যখন তারা বৃদ্ধ হয়, কাজে অ—গম হয়ে যায় মানুষ তাদের কেটে খেয়ে ফেলে। এই হল পশুর জীবন। কিন্তু এইভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। ওল্ড মেজর বলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন এই পশুরা একদিন মানুষের কাছ থেকে মুক্তি ছিনিয়ে নেবে এবং নিজেদের একটি আলাদা সমাজ গড়বে। ওল্ড মেজর মারা যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ম্যানর ফার্মের সম¯ত্ম পশুপাখিরা স্নোবল নামে একটি শূকরের অধীনে একজোট হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং মিস্টার জোন্সকে খামারবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে। ম্যানর ফার্মের নাম পাল্টে তারা রাখে অ্যানিমেল ফার্ম। বিজ্ঞতার দিক দিয়ে খামারের পশুদের মধ্যে স্নোবল সেরা। মূলত সেই নেতা বিবেচিত হয়। খামারটিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর কাজে স্নোবল নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। পশুদের পড়াশুনা শেখানোর ব্যবস্থা করে, খামার কীভাবে চলবে সেসব নীতিমালা ঠিক করে। ধীরে ধীরে অ্যানিমল ফার্ম হয়ে ওঠে পশুদের সুখের রাজ্য। কিন্তু সুখ কি আর চিরদিন থাকে? নেপোলিয়ন নামে আরেক শূকর স্নোবলকে খামার থেকে উচ্ছেদ করে নিজে —গমতা কেড়ে নেয়। খামারে শুর¤œ হয় দুঃখের দিন। শুর¤œ হয় পশুতে পশুতে বৈষম্য।
শূকররা পরিণত হয় সুবিধাবাধী শ্রেণীতে। নেপোলিয়ন হয়ে ওঠে এক স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর শাসকের নাম। খামারে খাদ্য সংকট বলে সব পশুদের খাদ্যের রেশন কমিয়ে দেয়া হয় কিন্তু শূকররা ক্রমেই বিলাসিতাতে গা ভাসিয়ে দেয়। যে দুপেয়ে মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা যাবে না বলে আইন ছিল সেই মানুষজাতির সঙ্গে নেপোলিয়ন ব্যবসা আরম্ভ করে। ডিম, দুধ বিক্রি করে তার বদলে শূকরদের জন্য কেনা হতে লাগল মদ। আরো দুঃখজনক ঘটনা হল অ্যানিমেল ফার্মে বক্সার নামে সবচে পরিশ্রমী এবং নিবেদিতপ্রাণ ঘোড়াটি আহত হয়ে কাজে অ—গম হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তির নামে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। খামারের পশুরা একসময় বুঝতে পারে নেপোলিয়ন ও মিস্টার জোন্সÑএ দুই চরিত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং মিস্টার জোন্সের চেয়ে নেপোলিয়ন আরো খারাপ। এবার আসা যাক, উপন্যাসের চরিত্রগুলি নিয়ে। ওল্ড মেজর নামে বৃদ্ধ শূকরের চরিত্রটি এখানে কাল মার্ক্সের প্রতীক। যে একটি একটি ইউটোপিয়ান পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে। স্নোবল হল ট্রটস্কির প্রতীক। আর নেপোলিয়নকে উপস্থাপন করা হয়েছে স্ট্যালিনের চরিত্র দিয়ে। সমাজতন্ত্রের সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই উপন্যাসের মূল মেসেজ হল যেসব বিপ¯œবী বিপ¯œবের মাধ্যমে দেশে একতন্ত্রের শাসন কায়েম করে, সময়ের ব্যবধানে তারা নিজেরাই এক সময় স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। কারণ তাদের —গমতা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তারা ধীরে ধীরে স্বার্থপর হয়ে ওঠে এবং আত্মোন্নয়নই তখন হয়ে ওঠে তাদের মূল ল—গ্য। এইভাবেই তারা বিপ¯œবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ঠিক যেমনটি করেছে অ্যানিমেল ফার্মের নেপোলিয়ন চরিত্রটি। জর্জ ওরঅয়েলকে বলা হয় আয়রনির মাস্টার। তার সম¯ত্ম লেখাই শোষক, শাসক ও অন্যায়ের বির¤œদ্ধে। নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন, অসহায়ত্বের চিত্র ধরা পড়ে তার লেখায়।
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×