somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ুউইকিপিডিয়া: জনমানুষের বিশ্বকোষ (পর্ব ২)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

!@@!476275 !@@!476276
[জানুয়ারিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির আয়োজিত !@@!476283 !@@!476284 !@@!476285-!@@!476286 !@@!476287 !@@!476288 !@@!476289] "উইকিপিডিয়াঃ জনমানুষের বিশ্বকোষ শিরোনামে বক্তব্য রেখেছিলাম। ঐ ভাষণটির অনুলিপি পর্যায়ক্রমে যোগ করছি। আজ এর দ্বিতীয় পর্ব পোস্ট করলাম

*[ইটালিক]ইন্টারনেটে উইকি প্রযুক্তির ইতিহাস[/ইটালিক]

ষাটের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারগুলি হতে তৈরী হওয়া ইন্টারনেট ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হয় নব্বই এর দশকের গোড়ায়। আর এসময়ই তৈরী হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মতো প্রযুক্তি, যা তথ্যকে বিশ্বজুড়ে সবার নখদর্পনে এনে দেয়। তবে, গোড়ার দিকের সব ওয়েবপেইজই ছিলো শুধুমাত্র পড়ার উপযোগী। অর্থাৎ ওয়েব পেইজগুলির পাঠকেরা শুধুই পড়তে পারবেন, কোনো পরিবর্তন করতে পারতেন না। একমূখী এই ওয়েবপেইজগুলো তাই বিশ্বজুড়ে যৌথভাবে কাজ করায় খুব একটা সহায়তা করতে পারেনি।

এই ব্যাপারটাকে পাল্টানোর জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদেরা চেষ্টা শুরু করেন। ওয়ার্ড কানিংহাম নামের একজন প্রোগ্রামার প্রথম এরকম সফটওয়ার তৈরী করেন। তিনি এর নাম দেন উইকি। এই শব্দটি এসেছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ভাষার শব্দ উইকিউইকি হতে, যার অর্থ দ্রুত ভাবে ছুটে যাওয়া। খুব দ্রুততার সাথে উইকিপ্রযুক্তির ওয়েবপেইজকে পাল্টানো যায়, তাই এই নামকরণ। উইকি প্রযুক্তির আরেকটা লক্ষ্য ছিলো ওয়েবপেইজ তৈরীকে অনেক সহজ করে দেয়া, এইচটিএমএল বা অন্যান্য ওয়েবপেইজ ডিজাইনের ভাষার মতো এটা অতো জটিল না, বরং এতে লেখার চেহারার চাইতে মূল বিষয়বস্তুর উপরেই বেশী জোর দেয়া হয়েছে।

উইকি প্রযুক্তির মূলে রয়েছে উইকি সফটওয়ার, যা সার্ভারে দেয়া থাকে। এটি থাকার ফলে উইকিপ্রযুক্তি ভিত্তিক ওয়েব পেইজ গুলিকে সম্পাদনা করা যায় পৃথিবীর যেকোনো খান থেকেই। ফলে একই ডকুমেন্টের উপরে কাজ করতে পারেন হাজার হাজার মানুষ, যা অন্য কোনো প্রযুক্তির চেয়ে অনেক বেশি ব্যাপক। এছাড়া পুরনো যেকোনো সংস্করণে ফেরত যাওয়া যায় খুব সহজেই। তাই অযাচিত যেকোনো সম্পাদনাকে সহজেই পাল্টে সঠিক সংস্করণে ফেরত যাওয়া যায়।

* [ইটালিক]উইকিপিডিয়ার সূচনা[/ইটালিক]

উইকি প্রযুক্তির বিস্তার ঘটলেও এর ব্যবহার মূলত সীমাবদ্ধ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে। বিশ্বকোষে এটি ব্যবহার করার কথা কারো মাথায় আসেনি শুরুতে।

২০০০ সালের দিকে জিম ওয়েলস নামে এক জন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা একটি বিশ্বকোষ তৈরীর উদ্যোগ নেন। এর নাম দেয়া হয় নুপিডিয়া (ঘঁচবফরধ)। এটা অবশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য স্থানের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় তৈরীর কথা ছিলো। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও দেখা গেলো যে, মাত্র গোটা বিশেকের বেশি নিবন্ধ শুরু করা যায় নি। ২০০১ সালে জিম্বো ওয়েলসের সহযোগী ল্যারি স্যাঙ্গার তাঁকে পরামর্শ দেন যে, উইকি প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি পুরাপুরি উন্মুক্ত বিশ্বকোষ তৈরী করার জন্য। শুরুতে কেউ ভাবতেই পারেনি এটা আসলে সম্ভব। কিন্তু অল্প কিছু দিনের মধ্যেই হাজার কয়েক নিবন্ধ তৈরী হয়ে গেলো। তাই উইকিপিডিয়ার আত্ম প্রকাশ ঘটলো ইংরেজি ভাষায়।

* [ইটালিক]মুক্ত সোর্স[/ইটালিক]

উইকিপিডিয়ার এই অভাবনীয় সাফল্যের মূলে রয়েছে জনমানুষের উপরে বিশ্বাস। আগে ধারণা ছিলো যে, বিশ্বকোষ লেখাটা শুধুই বিশেষজ্ঞদের কাজ। কিন্তু আপামর জনতার কাছে যে তথ্য আছে, বংশ পরম্পরায় এক প্রজন্ম হতে পরের প্রজন্মে মৌখিক বা সামাজিক ভাবে যে তথ্য স্থানান্তরিত হয়, তা এক সাথে সংকলিত করে এক জ্ঞানের মহাসাগর প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। উইকিপ্রযুক্তি সারা বিশ্বের মানুষকে এই সহযোগিতার সুযোগটা করে দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে উইকিপিডিয়া পড়া, ও এক সাথে মিলে মিশে সহযোগিতা করার মাধ্যমে গোষ্ঠিগত জ্ঞানকে সামগ্রিক সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পেরেছে।

উইকিপিডিয়ার প্রতিটি নিবন্ধেই সম্পাদনা করার ব্যবস্থা আছে। তাই যে কেউ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মূহুর্তেই যে কোনো নিবন্ধে তথ্য যোগ করতে পারেন। সাধারণত নিবন্ধগুলো শুরু হয় দুই এক লাইনের কথামালা নিয়ে। ইন্টারনেটে গুগল বা ইয়াহু অনুসন্ধানের প্রথম পাতাতেই এসব নিবন্ধের লিংক চলে আসে। এভাবেই হোক বা অন্য যে কোনো ভাবে নিবন্ধটি পড়তে গিয়ে যদি কারো মনে হয় যে, নিবন্ধটিতে কিছু তথ্য যোগ বিয়োগ বা পরিমার্জনা করা দরকার, সেটা দুই একটি ক্লিক করেই করে ফেলা সম্ভব। এটা খুব বড় একটা সুবিধা --- কারণ ব্রিটানিকা বা এনকার্টার মতো অন্যান্য বিশ্বকোষগুলো পড়তে গিয়ে ভূল তথ্য পেলেও সেটা ঠিক করে অপেক্ষা করতে হয় পরবর্তী সংস্করণের জন্য। আর উইকিপিডিয়ায় সেটা করা যায় সাথে সাথেই। যেমন, ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরীয় সুনামী সংঘটিত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেটার উপরে তথ্যবহুল নিবন্ধ যোগ করে ফেলেন উৎসাহী উইকিপিডিয়ানেরা। সে তুলনায় ব্রিটানিকা ও এনকার্টার মতো বিশ্বকোষের ইন্টারনেট সংস্করণেও সে তথ্য আসতে সময় লাগে বেশ অনেক দিন। আর ছাপা সংস্করণে তো সেটা আসতে পরের বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

উইকিপিডিয়া হলো জনমানুষের বিশ্বকোষ। এটা শুধু জনমানুষের লেখাই না, বরং এটার সব তথ্য, সব ছবি ও অন্যান্য বিষয় প্রদান করা হয় মুক্ত কপিরাইট লাইসেন্সের অধীনে। এধরণের দুইটি লাইসেন্স হলো জিএফডিএল ও ক্রিয়েটিভ কমন্স। এসব লাইসেন্সে ছাড়া হয় বলে উইকিপিডিয়ার তথ্যাবলী ও নিবন্ধসমূহ যে কেউ যে কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে এটা ছেপে দিলেও সমস্যা নাই। শুধু উল্লেখ করলেই চলবে যে, এই নিবন্ধ বা ছবিটি উইকিপিডিয়া হতে নেয়া। আসলে তথ্য বা জ্ঞানের তো কোনো মালিকানা নেই, জ্ঞান সকলের জন্যেই। তাই জ্ঞানকে কপিরাইট বা মেধাসত্ত্ব লাইসেন্স দিয়ে বেঁধে না রেখে উইকিপিডিয়ার সব কিছুকেই মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

আর মুক্ত করে দেয়া হয়েছে বলেই রয়েছে অনেক নিয়ম ু উইকিপিডিয়াতে কোনো কপিরাইট যুক্ত লেখা এখান সেখান থেকে নিয়ে যোগ করা যাবে না। ছবির ক্ষেত্রে আরো কড়া কড়ি। শুধুমাত্র মুক্ত লাইসেন্সে দেয়া যায়, বা কপিরাইটের মেয়াদ শেষ হয়েগেছে, এমন ছবিই যোগ করা যাবে উইকিপিডিয়াতে।

[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৩:৩৪
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×