আদম পাহাড় রহস্য (শ্রীলংকা)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শ্রীলংকার রহস্যময় এক পাহাড়। নাম তার আদম পাহাড়।নানা কারণে এ পাহাড়টি রহস্যে ঘেরা। এর শীর্ষে রয়েছে বিরাট আকারের এক পায়ের ছাপ। রহস্য তা নিয়েই। এ পায়ের ছাপকে সব ধর্মের মানুষই পবিত্র হিসেবে মনে করে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বে নানা রকম পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এসব পায়ের ছাপ একেকটা একেক রকম। আকৃতি নানা রকম। কিন্তু এসব পায়ের ছাপ সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ দীর্ঘদিন ধরে। এমনই এক পায়ের ছাপ আদম পাহাড়ে। শ্রীলংকার মুসলমানরা বিশ্বাস করেন পৃথিবীর আদি মানব হজরত আদম (আ.) প্রথম এই শ্রীলংকায় পদার্পণ করেছিলেন। ওই পাহাড়ে রয়েছে তারই পায়ের ছাপ। তার জন্য এ পাহাড় ও পাহাড়ের ওই পায়ের ছাপ মুসলমানদের কাছে পবিত্র হিসেবে পরিণতি হয়ে আসছে।
শুধু শ্রীলংকার মুসলমানরাই নয়, এর বাইরের অনেক দেশের মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত আদম (আ.)-কে যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয় তখন তিনি প্রথম পা রাখেন শ্রীলংকায়। আর আদম পাহাড়ের ওপর ওই পায়ের ছাপ দেখে তারা মনে করেন তা হজরত আদম (আ.)-এর। এজন্য মুসলমানরা এ পাহাড়কে অসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আর এজন্য এর নাম দেয়া হয়েছে আদমস পিক বা আদমের পাহাড়। এ পাহাড়ের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। এ পাহাড়ের চূড়ায় যে পদচিহ্ন রয়েছে সেখানে পৌঁছা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এডভেঞ্চার। তবে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন। এই পায়ের ছাপ শুধু মুসলমানদের কাছেই নয়, একই সঙ্গে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও হিন্দুদের কাছেও পবিত্র। তারাও মনে করেন তাদের ধর্মের সঙ্গে এর রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্ক। এতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আদমের পাহাড় সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই পবিত্র। তারা শ্রদ্ধার চোখে দেখেন এ পাহাড়কে। তারা সবাই স্বীকার করেন এ পাহাড়ের চূড়ায় আছে ওই পবিত্র পদচিহ্ন। তার আকৃতি বিশাল। শুধু এজন্যই নয়, এ পাহাড় নিজেই একটি রহস্য।
এ্যাডামস পিক পাহাড় আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছতে হলে যে পথ তা চলে গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪০০০ ধাপ। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। জটিল এক আবহাওয়ার এক অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ, কাব্যিক অর্থে বলা যায় এ পাহাড় তখন মেঘের ভিতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে।
এ পাহাড় ও পাহাড়ের পদচিহ্ন নিয়ে একটি বই লিখেছেন মারকুস অকসল্যান্ড। বইটির নাম ‘দ্য স্যাক্রেট ফুটপ্রিন্ট: এ কালচারাল হিস্ট্রি অব আদমস পিক’। এতে বলা হয়েছে, এ পাহাড়টি ২২৪৩ মিটার উঁচু। আকৃতি কোণের মতো। ভারত মহাসাগর থেকে এ পাহাড় পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আগেকার দিকে আরবের সৌখিন ব্যক্তিরা সমুদ্র যাত্রায় এসে পিরামিডের আকৃতির এ পাহাড় দেখে পুলকিত হতেন। তাদের কেউ কেউ এটাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড় বলেও অভিহিত করেছেন। প্রাচীনকালে সিংহলিরাও এ পাহাড়কে বিশাল উচ্চতার বলে মনে করতেন। কেউ কেউ মনে করতেন এটিই বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড়। ৮৫১ সালে এ পাহাড়ে পদচিহ্ন প্রথম দেখতে পান আরবের সোলাইমান। রত্নপুরা হয়ে পবিত্র এ পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন বিখ্যাত আরব দার্শনিক ইবনে বতুতা। তিনি এখানে উঠার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন বারবেরিন থেকে। তার আগে ব্যাপক পরিচিত বণিক ও ভ্রমণ পিপাসু মার্কো পোলো আদমের পদচিহ্নে তার সম্মান জানানোর জন্য আরোহণ করেন এ পাহাড়ে। তিনি ১২৯২ সালে চীন থেকে ভেনিস যাওয়ার পথে এ সফর করেন।
এ পাহাড়ের চূড়া সামান্য একটি সমতল ক্ষেত্র। ১৮১৬ সালে লেফটেন্যান্ট ম্যালকম এর পরিমাপ করেন। তাতে দেখা যায় এর দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট এবং প্রস্থ মাত্র ২৪ ফুট। মোট আয়তন ১৭৭৬ বর্গফুট। এর চূড়ায় রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন। এর দৈর্ঘ্য ৬৮ ইঞ্চি। ৩১ ইঞ্চি চওড়া। তবে বৌদ্ধরা মনে করেন, ওই পদচিহ্ন হলো বুদ্ধের বাম পায়ের। বুদ্ধ তার অন্য পা রেখেছিলেন বর্তমানের থাইল্যান্ডে (আগে যা সিয়াম নামে পরিচিত ছিল)। থাইল্যান্ডে রয়েছে তার ডান পায়ের ছাপ। থাই ভাসায় একে বলা হয় ফ্রা স্যাত। সেখানে পায়ের ছাপের যে মাপ তা আদম পাহাড়ের পায়ের ছাপের মতোই। আকারও এক রকম। একই রকম পদচিহ্ন আরও পাওয়া গেছে লাওসে, ক্যাবোজে ও চীনে। বৌদ্ধরা ধারণা করেন, বুদ্ধ ছিলেন ৩৫ ফুট লম্বা। তাই তিনি এত দূরে দূরে পা ফেলতেন। তবে এই পদচিহ্নকে খ্রিস্টানরাও সম্মানের চোখে দেখে। ১৫০৫ সালে শ্রীলংকা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। তারা মনে করেন সেইন্ট থমাস দ্য ডাউবটার ভারত ও শ্রীলংকা এসেছিলেন। এরপর তিনি এই পাহাড়ে পা রেখে স্বর্গে চলে গিয়েছেন। তবে হিন্দুরা মনে করেন, ওই পদচিহ্ন হলো শিবের পায়ের।
সকল ধর্মের মানুষের কাছেই এ এক মিলন মেলার নাম যেখানে সকলেই খুঁজে পায় তার বিশ্বাস আর শান্তির উৎস।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন