সাহিত্যে চুরি ব্যাপারটা নতুন নয়। বহুকাল ধরেই বিশ্বসাহিত্যে এ চৌর্যবৃত্তির ধারা চলে আসছে। এ ধরনের হীনকাজের ব্যাপারে গবেষণাও আছে বেশ। তাতে বিশ্ব সাহিত্যের রথি মহারথিদের নামও আছে। ইংরেজিতে এই চৌর্যবৃত্তিকে বলে plagiarism। আর যারা এ ধরনের চুরি করে তাদের বলা হয় plagiarist। বাংলায় এদের বলা হয় কুম্ভীলক। এদের কাজ হচ্ছে অন্যের রচিত সাহিত্যের ভাব, ভাষা, আঙ্গিক, অন্যের উক্তি নিজের বলে চালানো। কখনো কখনো অন্যের পুরো সাহিত্যকর্মটাই নিজের বলে চালিয়ে দেয়া। আর এ চৌর্যবৃত্তির শিকার হয়ে থাকে সাধারণত অখ্যাত সাহিত্যিকেরা। আর কুম্ভীলকদের তালিকায় যাদের নাম সবার উপরে থাকবে, তারা হচ্ছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, সাংবাদিক এবং জনপ্রিয় ধারার ফরমায়েশি লেখকগণ।
উইকিপেডিয়ায় বর্ণিত তথ্যানুসারে সাহিত্যিকদের এই চৌর্যবৃত্তি শুরু হয় খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে। রোমান কবি মার্শাল তখন অন্য এক কবির বিরুদ্ধে তার কবিতা চুরির অভিযোগ করেছিলেন। তখন থেকে সাহিত্যে অন্য সাহিত্যিকের ভাবনা বা রচনা চুরির বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। ল্যাটিন plagiarius শব্দটির অর্থ হচ্ছে সাহিত্যভাবনার চুরি বা অপহরণ। ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ নাট্যকার শব্দটিকে ইংরেজি ভাষায় পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি plagiarius থেকে উৎপন্ন plagiary শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে plagiarism শব্দটি ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত হয়।
বিশ শতকে আধুনিকতাবাদ বিকাশের আগে এ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। আধুনিকতাবাদ বিকাশের সাথে সাথে অন্য লেখকের ভাবনা চুরি অনৈতিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এ অনৈতিক কাজ প্রতিরোধে আজও
কোনো আইন প্রণীত হয় নি। কেউ কেউ কপিরাইট আইনের কথা ভাববেন। না, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। তা plagiarism- এর বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর নয়।
এখন মূল প্রসঙ্গে আসি। ইন্টারনেটের কল্যাণে সাহিত্যে চৌর্যবৃত্তি ব্যাপারটা বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। অনেকের লেখায়ই এ ধরনের অনুযোগ দেখেছি। কোনো ব্লগে, ফেসবুকে বা অন্য কোথাও কোনো লেখা প্রকাশ হলেই কুম্ভীলকেরা অতি দ্রুত তা কপি করে নিজ নামে অন্য ব্লগে, নিজ ব্লগে, ফেসবুকে বা অন্য কোথাও প্রকাশ করে। আমার মতো একজন অখ্যাত, অতি সাধারণ লিখিয়ের কবিতাও যে কোনো কুম্ভীলকের পছন্দ হবে, চুরি করতে ইচ্ছে হবে, তা জানা ছিলো না। অথচ তাই হয়েছে। শুধু আমার নয়, উক্ত কুম্ভীলক অনেকের কবিতাই চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করে চলেছে। তার এই চৌর্যবৃত্তি ধরে ফেলেছেন সেই ব্লগেরই আর একজন কবি। তার লেখার স্ক্রিনশট নিচে দেয়া হল।
এই কুম্ভীলকদের লক্ষ্য করে বহু আগে আমি একটি কবিতা লিখেছিলাম ‘আমি কোনো কবিতা লিখি না’। পরে এই শিরোনামেই একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করি ২০১৪ সালে। সেই গ্রন্থেরই তিনটি ছোটো কবিতা ‘সময়ের কড়চা – ১,২,৩’। ২৮-০৭-২০১৬ সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে somewhereinblog-এ কবিতা তিনটি পোস্ট করি। কুম্ভীলক মোঃ শরিফুল ইসলাম তুহিন কবিতা তিনটি চুরি করে একটি কবিতার ব্লগে নিজ নামে প্রকাশ করে। ধন্যবাদ খান লোকনাথী (হিরন্ময় কবি)-কে একজন কুম্ভীলককে ধরিয়ে দেবার জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯