somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নম্বরপত্রে ঘষামাজা, ২৫ কর্মকর্তা জড়িত তবে আমরা যারা ভুক্ত ভোগি তারা জানি ১ জন ব্যক্তি ও নেই যার নিয়োগ দুর্নির্তি ছারা হয়েছে।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে খাদ্য পরিদর্শক, উপখাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি। এর জন্য কমিটি খোদ মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকারী পাঁচটি কমিটির মধ্যে চারটি কমিটির ২৫ জন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কর্মকর্তারা চাকরিপ্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার নম্বরপত্রে ঘষামাজা, উপরিলিখন ও কাটাকাটি করে নম্বর পরিবর্তন করেছেন। ৩৭ জন পরীক্ষার্থীর নম্বরপত্রে এমন ঘষামাজার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। এর মধ্যে একজনের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর না থাকায় তা তদন্তের আওতায়ই আনা হয়নি। ২৫ জনের মৌখিক পরীক্ষার নম্বরপত্রে ঘষামাজা ও কাটাকাটি হয়েছে। এই ২৬ জনের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বাতিল করা হয়েছে এবং তাঁদের বাদ দিয়ে অন্য যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি ১১ জনের নম্বরপত্রে যে ত্রুটি দেখা গেছে, তা অনিচ্ছাকৃত ও নম্বরপত্র নির্ভুল করার প্রয়োজনে কমিটির সব সদস্যের সম্মতিতে করা হয়েছে বলে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে। এই ১১ জনের মধ্যে তিনজন চাকরি পেয়েছেন।
খাদ্য অধিদপ্তরের ১০ শ্রেণির এক হাজার ৫৫২ পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে মোট আবেদন করেন তিন লাখ ৮৭ হাজার ৪৩৭ জন। ২০১১ সালে লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২৩০ জন। ২০১৩ সালে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয় এবং গত ৫ এপ্রিল এই নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়। চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হন এক হাজার ১৭৫ জন।
শুরু থেকেই এই নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তখনকার খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মৌখিক পরীক্ষার জন্য গঠিত পাঁচটি কমিটিতে খাদ্য অধিদপ্তর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশনের ৩০ জন কর্মকর্তা ছিলেন। এর মধ্যে চার কমিটিতে ছিলেন মোট ২৫ জন কর্মকর্তা। তাই ওই ২৫ কর্মকর্তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনিয়মের জন্য দায়ী। সবচেয়ে বেশি অনিয়ম পাওয়া গেছে অধিদপ্তরের অন্যতম পরিচালক শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটির কাজে।
তদন্ত কমিটি অনিয়ম সংঘটনের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটিগুলোর আহ্বায়ক, সদস্যসচিব ও সদস্যদের বিরুদ্ধে বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটি বা বাছাই কমিটি সরাসরি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না থাকায় তাদের ত্রুটির বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
গত ১১ মে গঠিত তদন্ত কমিটির একমাত্র সদস্য ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আতাউর রহমান। কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরপত্র, লিখিত পরীক্ষায় জেলা বা অঞ্চলভিত্তিক সর্বোচ্চ বা নিকটতম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের ওএমআর শিট ও টেব্যুলেশন শিট পরীক্ষা এবং নিয়োগ কার্যক্রমে নিযুক্ত কমিটির কার্যক্রম পর্যালোচনা করে।
জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে যে কর্মকর্তারা জড়িত, তাঁদের ব্যাপারে কী করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আমরা পাইনি। পেলে অবশ্যই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাকির হোসেনের কমিটি: তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ২৮টি নম্বরপত্রে অনিয়ম করেছে। এর মধ্যে ১৪টি খাদ্য পরিদর্শকের, ছয়টি উপখাদ্য পরিদর্শক ও আটটি সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শকের পদ।
তদন্ত কমিটির কাছে জাকির হোসেন বলেছেন, সব কটি নম্বরপত্র তৈরি করেছেন কমিটির সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কে এম মাহবুবুর রহমান জোয়ার্দার।
কমিটির সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম খান বলেছেন, সব কাটাকাটিই মাহবুবুর রহমান করেছেন এবং কমিটির আহ্বায়ক স্বাক্ষর দিয়ে তা নিশ্চিত করেছেন।
তবে মাহবুবুর রহমান তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, কোনো অনিয়ম হয়নি। চারটি নম্বরপত্রে ঘষামাজা রয়েছে মাত্র।
তদন্ত কমিটি বলেছে, অনিয়ম হয়েছে এবং এতে কমিটির আহ্বায়ক খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শেখ জাকির হোসেন এবং সদস্য কে এম মাহবুবুর রহমান সরাসরি জড়িত। এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব নজরুল ইসলাম সরকার, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) তিন উপপরিচালক আবদুল হাই, নেয়ামতউল্লাহ, পান্না চন্দ্র দে, প্রোগ্রামার আরিফুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক।
জানতে চাইলে শেখ জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু বলতে পারি, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।’
মোশাররফ হোসেনের কমিটি: খাদ্য অধিদপ্তরের অন্যতম পরিচালক মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ছয়জনের ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছে। এর মধ্যে পাঁচজন খাদ্য পরিদর্শক ও একজন সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক পদে পরীক্ষার্থী ছিলেন।
কমিটির সদস্য ও মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল মান্নান তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, দুজনের প্রাপ্ত নম্বরের অঙ্কে কাটাকাটি থাকলেও কথায় লেখা অংশে কাটাকাটি নেই। কমিটির সদস্যসচিব, অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেছেন, কমিটির সিদ্ধান্তমতেই উপরিলিখন ও কাটাকাটি হয়েছে।
এ কমিটিতে বিকল্প হিসেবে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মজিবর রহমান এক দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। সেদিন একজন পরীক্ষার্থীর নম্বর কাটাকাটি করা হয়। এ বিষয়ে তিনি তদন্ত কমিটিকে বলেন, ওই প্রার্থী নম্বর পেয়েছিলেন ১৬। পরে ১ কে ২ বানিয়ে প্রাপ্ত নম্বর ২৬ করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়নি।
তোফাজ্জল হোসেনের কমিটি: অধিদপ্তরের অন্যতম পরিচালক তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি একজন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষার নম্বরে অনিয়ম করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ বিষয়ে তোফাজ্জল হোসেন তদন্ত কমিটিকে জানান, তিনি বা তাঁর কমিটির কেউ উপরিলিখন করেননি। উপরিলিখনের কালি ও তাঁর ব্যবহার করা কলমের কালি এক নয়। উপরিলিখনের মাধ্যমে ১২ কে ২২ (১ কে ২ বানিয়ে) বানানো হয়েছে। নম্বর বাড়ানোর কারণে ওই প্রার্থীর চাকরি হলে তা বাতিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কমিটির সদস্যসচিব ও অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সাইলো) ধরিত্রী কুমার সরকারও একই বক্তব্য দেন।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে আরও ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিরাজুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাসুদুল হাসান, পিএসসির উপপরিচালক ফজলুল হক।
বদরুল হাসানের কমিটি: অধিদপ্তরের অন্যতম পরিচালক বদরুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে একজন প্রার্থীর মৌখিক নম্বরে কাটাকাটি হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি তদন্ত কমিটিকে জানান, কমিটির সব সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তিনি ১০ কেটে ১২ করেছেন। কিন্তু কেন করেছেন, তা এখন তাঁর মনে পড়ছে না।
কমিটির অন্য সদস্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বেঞ্জামিন হেমব্রম বলেন, অনেক দিন আগে পরীক্ষা হয়েছে, তাঁর পরিষ্কার কিছু মনে নেই। তবে তিনি কোনো কাটাকাটি বা ঘষামাজা করেননি। প্রতিদিন পরীক্ষা নেওয়ার পর নম্বরশিট সিলগালা করে জমা দিয়েছেন।
এই কমিটির আরেক সদস্য ও অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন জানান, কমিটির আহ্বায়ক প্রাপ্ত নম্বর ১০ কেটে ১২ নম্বর দিয়েছেন। নম্বরপত্রে সবার সই রয়েছে।
তদন্তে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে, ভবিষ্যতে নিয়োগ কার্যক্রমে অহেতুক দীর্ঘসূত্রতা বর্জন করতে হবে।
জানতে চাইলে তখনকার খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কোনো দুর্নীতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তদন্ত কমিটি হয়েছে বলেও আমার জানা নেই।’

Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×