somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানীজদের কুকুর প্রীতি এবং আদিম নিসংসতা! (৭) :|

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বে pet হিসাবে সবচেয়ে বেশী পালিত হয় সম্ভবত কুকুর। সেই আদিম কাল থেকে কুকুরকে মানুষ বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে পালন করে আসছে। ধর্মের বিধি নিষেধ থাকার কারনে মুসলিম দেশে কুকুর পালনের তেমন প্রচলন না থাকলেও বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে রঙ বেরঙের কুকুর পালনের প্রচলন রয়েছে। অন্য কোন কুকুর প্রেমিক জাতিকে তেমন কাছ থেকে আমার দেখা হয়নি, তবে জাপানীজদের কুকুর প্রীতি একটু ভিন্ন মাত্রার।

জাপানে এমন অসংখ্য ফ্যামিলি আছে যাদের ছেলেমেয়ে নেই বা কখনই বিয়ে করেনি কিন্তু কুকুর ছাড়া ফ্যামিলি এখানে খুজে পাওয়া দুষ্কর। বরং লক্ষ লক্ষ ফ্যালিলি পাওয়া যাবে যার সদস্য দুইটি প্রানী; একজন মানুষ আর তার পোষা কুকুর। অনেকের একাধিক কুকুরও আছে। জাপানিজরা তাদের কুকুর কে কতটা যত্ন করে সেটা বুঝানোর জন্য একটা উক্তিই মনে হয় যথেষ্ট, “ওরা কুকুরকে নিজেদের সন্তানের মত মনে করে এবং সন্তানের মত আগলে রাখে”। জাপানে আশার আগে
আমার এক জাপান ফেরত কলিগ সাবধান করে দিয়েছিল জাপানে সাইকেল চালাতে সাবধান থাকবেন; কোন বাচ্চার গায়ের উপর সাইকেল উঠিয়ে দিলে মাফ পেতে পারেন কিন্তু কারো কুকুরের উপর সাইকেল উঠিয়ে দিলে কিন্তু রক্ষা নেই!/:)! এখানে এসে কথাটা আমার যথার্থ মনে হয়েছে। এরা কুকুর কে প্রচন্ড ভাল বাসে, বুড়াবুড়ি গুলো সারাক্ষন কুকুরকে সাথে নিয়ে ঘুরে। কুকুরের যত্ন আত্তিরও শেষ নেই। কুকুর কে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গোছল করানো, তাঁকে ব্যয়াম করানোর জন্য রোজ বিকালে হাটতে যাওয়া, রঙ রেরঙয়ের জামা কাপড় পরান, নিয়মিত চুল - নখ কেটে দেওয়া, ব্রান্ডের খাবার খাওয়ানো ... ইত্যাদি ইত্যাদি। এদের কুকুরের যত্ন বা তার পিছনে খরচ কোন অংশেই একটা বাচ্চা পালনের চাইতে কম নয়। কুকুরের জন্য আলাদা হাসপাতাল, আলাদা সেলুন এমন কি আলাদা ডিপার্টমেন্ট শপ ও আছে। অধিকংশ ডিপার্টমেন্ট শপ, যেখানে মানুষের ব্যাবহার্য জিনিষ পাওয়া যায় সেখানে কুকুরের জিনিষ পত্রের জন্য আলাদা একটা কর্নার থাকে। একটু আলালের ঘরের দুলাল ( ধনীর কুকুর) হলে তিনি নির্দিষ্ট ব্রান্ডের খাবার ছাড়া খান না। এখানে কুকুরের বিনোদন এবং খেলা ধুলার ব্যাবস্থাও আছে। কুকুরকে রেখে কাজে যাবেন? কোন চিন্তা নেই, কুকুরের ডে-কেয়ার আছে না!! :-*

প্রায় দিন সকাল বিকালে দেখা যায় বুড়া বুড়ি গুলো তাদের সঙ্গি কুকুর ছানা কে নিয়ে হাটতে বের হয়েছেন, হাতে একটা প্যান! কুকুর যদি কোথাও হাগু করে দেয় সাথে সাথে সেটা তুলে নেয় যাতে রাস্তা নোংরা না হয়। চলতি পথে আবার অন্য আরেকজনের কুকুরের সাথে দেখা হলে কুকুরে কুকুরে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়; তা দেখে তাদের মালিকগন যারপরনাই খুশি হন এবং তারাও তাদের কুকুরের নানা প্রশংশায় পঞ্চমুখ হন। মনে করুন, আমাদের দেশে দুই বাচ্চাকে নিয়ে তাদের মা’রা হাটতে বের হয়ে পথে দেখা হয়ে গেলে যা হয় আর কি! :P

আপনি কুকুর যতই অপছন্দ করেন বা ভয় পান এদের সামনে তা প্রকাশ করতে যাবেন না; খুব মাইন্ড করবে! আপনার সামনে আপনার সন্তানকে কেও ঘৃণা করলে আপনার কি অনুভুতি হয় ভেবে দেখেন! একবার এক মজার ঘটনা হয়েছেঃ বাসার পাশে একটা পার্কে একদিন ছেলে আর তার মা কে নিয়ে ঘুরতে গেছি। ওরা দুজনেই কুকুর খুব ভয় পায়। এক বুড়াও আসছে তার দুই কুকুর নিয়ে; পার্ক একটু ফাকা পেয়ে দুটোকেই ছেড়ে দিয়েছে খেলা করার জন্য। কিছুক্ষন পর একটা এসে আমার ছেলের সাথে খাতির করতে গেছে; ছেলে তো ভয়ে চিৎকার! আমি ছুটে গেছি ছেলেকে বাঁচাতে। ইতিমধ্যে অন্য টা চলে গেছে ছেলের মার সাথে গল্প করতে; তিনিও ভয়ে চীৎকার দিয়ে ছুট! কুকুর চিন্তা করছে সে তার সাথে খেলছে, সেও পিছে পিছে ছুট! আমি একসাথে দুই জায়গা কেমনে সামলায়! হঠাত বুড়াকে জোরে একটা ধমক দিলাম, “ওই মিয়া আপনার কুত্তা সামলান!!” X((
বুঝতে পেরেছেন ঘটনাটা?? রাগের মাথায় আমি বুড়াকে বাংলায় ধমক দিয়ে ফেলেছি!;) ;) সে তো কিছু বুঝল না, কিন্তু আমাদের কাণ্ডবান্ডে এতটা বিরক্ত হলো যে, খুবই মেজাজ খারাপ করে গজ গজ করতে করতে কুকুর নিয়ে পার্ক থেকে চলে গেল!

কুকুর প্রীতি নিয়ে অনেক কথা হলো; এবার আসি এদের আদিম নিশংসতা বিষয়ে ...
তার আগে ছোট্ট একটু বিজ্ঞাপন বিরতী, চলে যাবেন না যেন!!! :-*
----------------------------------------------------------
সাধারণ জাপানিজদের আচার ব্যবহার নিয়ে লেখা পূর্বের ব্লগ গূলোঃ
জাপানিজঃ আজব এক জাতি !!!

গাড়ীর হর্ন ঃ জাপানীজ স্টাইল !!! :) (২)

নিরবাচনী প্রচারণা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৩)

ময়লা ফেলা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৪) :-* :-/

জাপানীজ ওন্সেন বা গন গোছল (৫)

জাপানিজদের ধর্ম পালন (৬)
-------------------------------------------------------------
বিজ্ঞাপন বিরতীর পরে আবার আসি মূল আলচনায়; সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!

হুমায়ূন আহমেদের একটা লেখায় পড়েছিলাম, আগে জাপানিজরা তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে কাধে করে নিয়ে দূরে পাহাড়ে ফেলে আসত। সেখানে তারা না খেতে পেরে, ঠান্ডায় বা জন্তুর আক্রমনে মারা পড়ত। সাধারণত বাড়ীর বড় ছেলেদের এই কাজ করতে হতো; ছেলে যখন বাবা-মা’কে কাধে করে পাহাড়ে উঠত তখন বাবা-মা’র হাতে থাকা ছোট্ট একটা লাঠী দিয়ে ছেলেকে আস্তে আস্তে বাড়ি মারত, আর কিছু একটা শ্লোক পড়ত। এখন আধুনিক জাপানে সেই আদিম প্রথা আর নেই। কিন্তু তার আধুনিক সংস্করন রয়ে গেছে! এই যে কুকুর গুলোকে এরা জান দিয়ে সন্তানের মত লালন পালন করে, সেই কুকুর গুলো যখন বুড়া হয়ে যায় বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় বা কেও নতুন কোন মডেলের কুকুর কিনতে চায় ... মোট কথা কুকুরের প্রয়োজন ফুরালে সেগুলেকে ওরা পাহাড়ে বরফের মধ্যে ফেলে রেখে আসে বা সিটি অফিসের কুকুর নিধন সেন্টারে দিয়ে আসে। সেখানে একসাথে অনেক কুকুর জড় করে গ্যাস চেম্বারে নিয়ে মারা হয়। অবলা কুকুর মারার সেই দৃশ্য দেখলে যে কোন হৃদয়বান মানুষের বুক কেঁপে উঠবে! ইউটিউবে অনেক গুলো ভিডিও আছে, আমি এই কমন প্লাটফরমে সেটা আর দিলাম না; কেও ইচ্ছা করলে দেখতে পারেন। তবে নরম মনের মানুষদের সেই রিস্ক নিতে না যাওয়াই ভাল; আমি একটা ভিডিও দেখে এখনও তা মন থেকে মুছে ফেলতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১১
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×