জাপানের সাধারন মানুষের আচার আচরন নিয়ে সিরিজ পোষ্ট দিচ্ছিলাম। আজ লিখব সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রমধর্মী একটা বিষয় নিয়ে; ওন্সেন বা পাবলিক বাথ বা আরো সোজা কথায় বললে অনেকে এক সাথে মিলে নগ্ন হয়ে গোছল করার জাপানীজ কালচার।
ওন্সেন কি?
ট্রেডিশনালী, বাইরের কোন ফাকা জায়গায় প্রাকৃতিক উপায়ে গরম পানিতে পুরুষ-মহিলা-শীশু একসাথে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে গোছল করা কে জাপানীজ ভাষায় ওন্সেন বলা হয়। সাধারণত ওন্সেনে প্রাকৃতিক গরম পানি ব্যবহার করা হয় কিন্তু আধুনিক কিছু ওন্সেনে ট্যাপের পানি গরম করেও ব্যবহার করা হয়। তবে ওন্সেনের পানি কিছু মিনিমাম ক্রাইটেরিয়া পুরন করা লাগে যেমন পানিতে কমপক্ষে ২৫ টি খনিজ লবন থাকতে হয়, পানি ফুটন্ত অবস্থা থেকে কিছুটা কম তাপমাত্রা থাকতে হয় ইত্যাদি...
পূর্বে, ওন্সেনে নারী-পুরুষ-শীশু একসাথে গোছল করত; তবে মেইজী পিরিয়ড থেকে ছেলে মেয়েদের জন্য আলাদা ওন্সেন হয়েছে; কিন্তু এখনো কিছু রুরাল স্থানে একসাথে ওন্সেন আছে।
দেখুন দুইটা প্রাকৃতিক ওন্সেনঃ
ওন্সেন কোথায় পাওয়া যায়?
জাপানের সর্বত্র অসংখ্য ওন্সেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে; যেগুলো প্রাইভেট, বানিজ্যিক বা সিটি অফিসের তত্তাবধানে কমিউনিটি সার্ভিসের অংশ হিসাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ট্যুরিষ্ট প্লেসে অবশ্যই এক বা একাধিক ওন্সেন থাকে। সাধারণত প্রতিটা পরিবারে অন্তত একটা করে ওন্সেন থাকে যেটা পরিবারের সকল সদস্য বা অনেক ক্ষেত্রে তাদের আত্মীয় স্বজন ব্যবহার করে থাকেন।
এবার একটু বিজ্ঞাপন বিরতি দেই
------------------------------------------------------------------
সাধারণ জাপানিজদের আচার ব্যবহার নিয়ে লেখা পূর্বের ব্লগ গূলোঃ
জাপানিজঃ আজব এক জাতি !!!
গাড়ীর হর্ন ঃ জাপানীজ স্টাইল !!! (২)
নিরবাচনী প্রচারণা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৩)
ময়লা ফেলা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৪)
-------------------------- ( -----------------------------------
বিজ্ঞাপন বিরতির পর আবার ফিরে এলাম; সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ!
ওন্সেন ব্যবহারের নিওমাবলী কি?
পাবলিক ওন্সেন সাধারণত একটা ফি এর বিনিময়ে ইউজ করা যায়। ওন্সেনে ঢোকার মুখে টয়লেট থাকে, সেখানে প্রথমে সবাই ফ্রেশ হয়ে নেই। তারপর একটা রুমে সমস্ত কাপড় খুলে নির্দিষ্ট বাক্সে রাখতে হয়। তারপর মূল ওন্সেন রুমে ঢুকতে হয় যার এক পাশে থাকে গোছল করার ব্যবস্থা। সাবান শ্যাম্পু মেখে ভাল করে গোছল করে পরিষ্কার হয়ে মুল ওন্সেনের গরম পানিতে বসতে হয়। যতক্ষন ইচ্ছা বসা যা্ তবে পানি এত গরম থাকে যে আধা ঘন্টার বেশী বসে থাকা দুষ্কর! এরপর পানি থেকে উঠে গা মুছে আবার পূর্বের রুমে ফিরে গিয়ে কাপড় পরতে হয়। গোছল করা পর্যন্ত অনেকে ছোট্ট একটা রুমাল দিয়ে আসল জায়গাটা ঢেকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে কিন্তু মূল ওন্সেনে কোন কাপড় পরে নামা নিষেধ!
এটা কাপড় রাখার ঘরঃ
গোছলের জায়গাটা এরকমঃ
এটা একটা ইনডোর ওন্সেনের মূল টাবঃ
ওন্সেনের উপকারিতা কি?
শুধু একসাথে একাধিক মানুষ উলঙ্গ হয়ে পানিতে নামা বাদে আমি ওন্সেনের ভিতর খারাপ কিছু দেখি না। বিশেষ ভাবে উৎপন্ন এই পানির খনিজ লবন শরীরের জন্য খুব ভাল, তাছাড়া গরম পানিতে বসে থাকাটা শীত প্রধান দেশের মানুষের জন্য শুধু আরামদায়ক-ই নয় ব্যাথা-বিষ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। জাপানিজরা অবশ্য এই ওন্সেন তাদের উন্নতির পিছনে একটা বড় ভুমিকা রেখেছে বলে মনে করে। hadaka no tsukiai বা naked communion বলে এখানে একটা কথা প্রচলিত আছে। ওরা মনে করে মানুষ তার কাপড় খুলে ফেললে মনের সকল বাধা বা শ্রেনী বৈষম্য ও দূর হয় তখন তারা মন খুলে কথা বলতে পারে। এই কথার প্রমান পেয়েছিলাম এক বাঙ্গালী ভাই যিনি দীর্ঘ দিন একটা জাপানী কম্পানীতে কাজ করছেন তার কথাতে। উনি বলেছিলেন, “আমাদের অফিসে তো কলিগ বা বসদের মধ্যে কম্পানীর উন্নতি বিষয়ক মূল আলোচনা হয় ওন্সেনে বসে!”
এই ঠান্ডায় একটু গরম পানির ছোয়া নিশ্চয় খুব আরামদায়ক!
মিয়া-ভায়ের দেখি ওন্সেন বিষয়ে বিরাট গিয়ান! ওন্সেনের অভিজ্ঞতা আছে নাকি??
জী, ৩/৪ বার গেছি বা যেতে হয়েছে। গত সপ্তাহে একটা পাহাড়ী গ্রামে ঘুরতে গেছিলাম; -১০ থেকে -১৫ তাপমাত্রা, এক থেকে দেড় মিটার স্নো’তে চারিদিক ঢেকে আছে, বাসায় গোছলের ব্যবস্থা নেই তাই গেলাম পোলাকে নিয়ে ওখানকার একটা ওন্সেনে। পোলা তো আবার বদের হাড্ডী! ঢুকেই সে বলে বাবা দেখ দেখ সব নেংটু নেংটু ... হি হি হি ... । পোলার সামনে ওন্সেনে নামা অসম্ভব! তাই প্রথমে তাকে গোছল করিয়ে বের করে দিয়ে নিওম ভেঙ্গে একটা ছোট তোয়ালে কোনরকম জড়িয়ে রেখে গোছল সারলাম। আমাকে কাপড় পরা দেখে কেও কেও একটু আড়চোখে দেখল, কিন্তু বিদেশী বলে কিছু বল্ল না। আসলে শুধু আমরা কেন যেকোন সভ্য মানুষ এই কালচারে অভ্যস্ত হওয়া অসম্ভব!
যাই হোক প্রায় প্রতিটা পোষ্টে জাপানীজদের ভাল গুন গুলো আমাদের অভ্যাসে নেওয়ার জন্য আহব্বান জানাই, আজ তার উল্টোটা বল্ব; জাপানীজদের ওন্সেন কালচারে আমরা অভ্যস্ত হতে চাই না!!