চার বছরেরও কিছু বেশী সময় ধরে জাপানে আছি, আরও কমপক্ষে এক বছর থাকতে হবে। এদেরকে যতটুকু কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার ভিত্তিতে জাপানিজদের সম্পর্কে আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ শেয়ার করছি। জাপানিজরা সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিজেদের মধ্যে ধারন করে নিজেদেরকে অদ্ভুদ এক জাতি হিসেবে ধরে রেখেছে। সে রকম ১০ টি বিষয় এখানে উল্লেখ করব:
১. জাপানিজরা প্রচন্ড বিনয়ী, দায়িক্তশীল এবং হেল্পফুল; আপনাকে সাহায্য করার জন্য পারলে যেন জান দিয়ে দেয়! কিন্তু কখনও তারা অন্তর দি্যে ভালবেসে আপনাকে আপন করে নিবে না।
২. অধিকংশ জাপানীজ কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না, অথচ ধর্মের মোরাল বিষয়গুলো তারা তাদের প্রত্যহিক জীবনে ধারন করে বা অভ্যাসে পরিনত করে ফেলেছে, যা যেকোন ধর্ম প্রধান দেশের নাগরিকদের থেকে কম নয়।
৩. এরা আপনার পরিবারের সব কথা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনবে, আপনাকে তা বলতে উতসাহ দিবে, কিন্তু নিজেদের ফ্যামিলি সম্পর্কে কোন কথা বলতে চাইবে না। এমন কি বিবাহিত কি না, বাচ্ছা কয়জন এ ধরনের সাধারন বিষয় গুলোও না।
৪. আপনি যদি পথে ঘাটে কোন বিপদে পড়েন, পারত পক্ষে আগ বাড়িয়ে আপনাকে সাহায্য করতে যাবে না। অথচ “ওনেগাই শিমাস” বলে সাহায্য চাইলে নিজের কাজ বাদ দিয়ে আপনার উপকার করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যাবে।
৫. ফ্রি সেক্স এর দেশ জাপান, এশিয়ায় পর্ণ মুভি বানানোতে এরা অন্যতম, কিন্তু রাস্তা ঘাটে এই পর্যন্ত কখনও দুই জাপানিজ কে চুম্মা-চাট্টি করতে দেখি নাই। এমন কি ক্যাম্পাসে কোন জুটিকে হাত ধরে হাটতে বা বসে গল্প করতেও দেখিনি।
৬. অধিকংশ জাপানীজ, বিশেষ করে যারা সার্ভিস রিলেটেড কাজ করে তারা সারাক্ষন মুখে একটা মাপা হাসি ঝুলিয়ে রাখে; যেন কতই না হাসিখুশি, অথচ বিশ্বে আত্মহত্যার রেট জাপানে সর্বাধিক।
৭. বোমা মেরে আমেরিকা জাপানের যে ক্ষতি করেছে তা জাপানের ইতিহাসে আর কেও করেনি। অথচ সেই আমেরিকা এখন জাপানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু দেশ। শুধু সরকার নয়, সাধারন জাপানিজরাও কোন ভাবে একটু আমেরিকার ছোয়া পেলে নিজেদের ধন্য মনে করে।
৮. জাপান ফাস্ট ওয়াল্ড কান্ট্রি গূলোর অন্যতম, কিন্তু ভিতরে ভিতরে আবার প্রচন্ড কনজারভেটিভ। নিজেদের ভাষা, নিজেদের দেশ, নিজেদের ঐতিয্য কে এরা এমন ভাবে সংরক্ষণ করে যাতে বিদেশীরা তাদের সাথে মিশে যেতে না পারে।
৯. প্রায় শতভাগ শিক্ষিত একটি উন্নত দেশ হলেও জাপানে মহিলাদের অবস্থান খুব একটা সম্মানজনক অবস্থায় নয়। চাকুরীতে উচুপদে মহিলাদের সংখ্যা খুব বেশী নয়। তারা ঘরেও নাকি খুব নিগৃহীত; বৌ পেটানোতে জাপানিজ পুরুষদের সুখ্যাতি আছে। অথচ অধিকংশ পরিবারে কর্তার মাসিক বেতন তার বৌ এর একাউন্টে জমা হয় বা গিন্নিই মূলত সংসার হ্যান্ডেল করে।
১০. কথায় কথায় বিনয় সুচক বিশেষণ আর ঘন ঘন মাথা ঝাকুনি দেখে যে কেও ভাব্বে এরা কত কোমল হ্রিদয়ের মানুষ কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এরা নাকি এক সময় নতুন বন্দুক বানিয়ে তা পরীক্ষা করার জন্য চীন-কোরিয়া থেকে মানুষ ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে পরখ কোর্ট তা কয়টারে ফুটা করতে পারে। তারো আগে এক যুদ্ধে সেনাবাহিনীতে পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছিল একজন সৈনিক এক তরবারি দিয়ে কয়জন চাইনিজের গলা কাটতে পারে। একটা ছবি দেখে ছিলাম, দুই সৈনিক তাদের তরবারি সহ পোজ দিয়ে ছবি তুলছে ... একজন সম্ভাবত কেটেছে ১৫৫ টা, আরেকজন ১৫৪ টা !
জাপানিজ সোসাইটিকে “Sand Society” বলা হয়ে থাকে; এরা সারাজীবন পাশাপাশি বসবাস করে কিন্তু কেও কারো সাথে একেবারে মিশে যায় না। আর আমরা হচ্ছি “Soil society” মারামারি কাটাকাটি যা-ই করি, একসাথে মিলে মিসে থাকি।
আবার ও বলছি, এটা একটা সাধারণ বিশ্লেষণ; প্রতিটা ক্ষেত্রেই হয়ত কিছু ব্যাতিক্রম আছে আমি শুধু আমার বিশ্লেষণ এখানে লিখলাম। অন্য যারা জাপানে থাকেন বা থেকেছেন তাদের মতামত আশা করছি।