আপডেটঃ গ্রামীণ ব্যাংকের অধ্যাদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিক্রিয়াঃ
স্টিকি পোষ্টের সুবাদে গ্রামীণ ব্যাংক এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে এই পোষ্টে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই ডঃ ইউনুস তাঁর স্বপ্নের গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারের রোষানল থেকে রক্ষা করার জন্য দেশবাসীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। সংগত কারনে এই পোষ্টে তাঁর বিবৃতিটি তাঁর নিজস্ব ওয়েব সাইট থেকে হুবহু তুলে দিলাম ঃ
"আমি আগে থেকেই এই শঙ্কা প্রকাশ করে এসেছি। এখন আমার শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে এই প্রক্রিয়াকে থামানোর ব্যাপারে আমরা সফল হতে পারিনি। গরীবের মালিকানায় পরিচালিত গরীবের ব্যাঙ্কটি থাকা মালিকানা এবং মালিকানা প্রয়োগের ক্ষমতা থেকে গরীব মালিকদের বঞ্চিত হতে দেখে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। আমি এত মর্মাহত যে আমার ভাবাবেগ প্রকাশে অক্ষম হয়ে পড়েছি। দেশের যারা আমার মত মর্মাহত হবেন তাঁদের অনুরোধ করছি তাঁরা যেন সরকারকে বুঝান যে এটা অত্যন্ত ভুল কাজ হচ্ছে। এটা থেকে তাঁরা যেন বিরত থাকেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত গরিবের ব্যাংকটি ধবংস করে দেবে। গরীবের সম্পদ এবং দেশের সম্পদ রক্ষার জন্যে এগিয়ে আসার জন্য দেশবাসির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গরীব মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি তাঁরা যেন তাঁদের মালিকানা প্রয়োগের অধিকারকে খর্ব না করার জন্য সরকারের প্রতি এবং দেশবাসির প্রতি আবেদন জানান।।"
যে মানুষটা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের দেশটাকে মর্যাদার আসনে দাঁড় করাল, দেশের জন্য এত সম্মান বয়ে আনল, সেই মানুষটা আজ তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্ন কে রক্ষা করার জন্য দেশের মানুষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন - দেশবাসী কি তাঁর ডাকে সাড়া দিবে না ????
মূলপোষ্টঃ
গত পরশু বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংকের সমালোচনা করতে গিয়ে এর সুদের হার ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকের বিভিন্ন ঋণের সুদের হার তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সামুতেও বিভিন্ন সময়ে দেখেছি কিছু ব্লগার ডঃ ইউনুস কে রক্ত চোষা সুধখোর বলে গালি দেওয়ার উপলক্ষ হিসাবে গ্রামীণ ব্যাংকের হুদের হার প্রায় ৫০ শতাংশ বলে হিসাব কষে জ্ঞ্যনগর্ভ পোষ্ট দিয়েছেন। আমি অর্থনীতির ছাত্র নই, চার পুরুষের মধ্যে কেও ব্যাংকার নেই, তাছাড়া গ্রামীন ব্যাংকের সাথেও কোন ভাবেই জড়িত নই; তাই এই ব্যাপারে জানার আমারও একটা আগ্রহ ছিল। বিডিনিউজ২৪ থেকে হিসাবটি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে দিলাম সামুর সেই সব অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য জানার জন্যঃ
বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকে ৫ ধরনের ঋণ কার্যক্রমের জন্য ৫ ধরনের সুদের হার প্রচলিত রয়েছে। এই ঋণ কার্যক্রমগুলোর সুদের হার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ।
গ্রামীণ ব্যাংক বলছে, উপার্জনশীল খাতে তাদের ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ২০ শতাংশ। ১০০০ টাকা ঋণ নিলে এক বছরে সাপ্তাহিক কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করলে মোট পরিশোধ করতে হয় ১১০০ টাকা। অর্থাৎ এক হাজার টাকার ঋণের ওপর বছরে মোট ১০০ টাকা সুদ। মূল টাকার ওপর ফ্ল্যাট রেটে মাত্র ১০ শতাংশ সুদ দিতে হয়। সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করা হয় বলে এ ঋণের কার্যকর সুদ ২০ শতাংশ।
গৃহনির্মাণের জন্য ঋণে ৮ শতাংশ হারে সুদ, ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণে শিক্ষা চলাকালীন কোনো সুদ না নেওয়া হলেও শিক্ষা সমাপ্তির পর ৫ শতাংশ হারে সুদ নেওয়া হয় বলে গ্রামীণ ব্যাংক জানায়।
এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক ভিক্ষুকদের যে ঋণ দেয় এবং ব্যাংকের সদস্যদের কেন্দ্রঘর নির্মাণের জন্য যে ঋণ দেয়, তা সুদবিহীন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) আইন- ২০০৬ এর আওতায় প্রণীতব্য বিধিমালার খসড়া বিষয়ে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীর ৫ অনুচ্ছেদে উল্লে¬খ করা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের সাধারণ ক্ষুদ্রঋণের বর্তমান কার্যকর বার্ষিক সুদের হার ২০ শতাংশ (যা ফ্ল্যাট পদ্ধতিতে ১০ শতাংশ)।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমআরআই কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ সুদের হার ধার্য করা হয়েছে ২৭ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ সুদের হারের চাইতে ৭ শতাংশ কম বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
এতে আরো বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংক জন্ম থেকেই এর গ্রাহকদের ঋণের ক্ষেত্রে ডিক্লাইন ব্যালেন্সের ওপরই সুদ ধার্য করে আসছে। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংক কখনই পরিশোধিত ঋণের ওপর সুদ ধার্য করে না। “অধিকন্তু ঋণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক সব সময় সরল সুদ হিসাব করে। অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ হিসাব করে না। গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতিতে মূল ঋণ এবং আদায়যোগ্য সুদের হিসাব পৃথক খাতে সংরক্ষণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কখনই সুদকে মূল ঋণের সঙ্গে একীভূত করা হয় না।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের সুদ কোনো অবস্থাতেই মূল টাকার বেশি হতে পারে না। ঋণগ্রহীতা দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না-করলে মোট সুদের পরিমাণ মূল টাকার বেশি হতে পারে না। এছাড়া সালতামামীতে নিট মুনাফা অর্জিত হলে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক হিসেবে শেয়ার হোল্ডার সদস্যদের ডিভিডেন্ড দেওয়া হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ডঃ ইউনুস কে গ্রামীণ ব্যাংকের অন্যতম সমালোচক হলেও তিনি স্বীকার করেছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ক্ষুদ্র ঋণদানকারী অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম- এ বক্তব্যটিও পত্রিকায় এসেছে
আমি এখানে কোন মন্তব্য করলাম না, দেখা যাক সামুর অর্থনীতিবিদগন কি বলেন!!!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:২৭