নাস্তিকতাকে অনেকে অত্যাধুনিকতা ও নিজেকে অন্যের চেয়ে আলাদাভাবে উপস্থাপনের তরল প্রয়াস বলে বিবেচনা করেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি নাস্তিকতাকে এতো সহজলভ্য বলে মনে করি না। একজন আস্তিক প্রতিদানের আশায় (তাকে আপনি বেহেস্ত, প্যারাডাইস কিংবা স্বর্গ যাই বলুন) সৎ! থাকার চেষ্টা করেন। প্রতিদানের প্রত্যাশা করাটা ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিরই পরিচায়ক। অপরদিকে একজন নাস্তিক কোনো প্রতিদানের আশা না করে শুধুমাত্র নিজের বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই বিবেকের কাজগুলো সম্পন্ন করেন। এই বিবেকের দায়বদ্ধতাই নাস্তিকতার প্রথম এবং মূল শর্ত। বিবেকের দায়ব্দ্ধতা ব্যতিরেকে নিজেকে নাস্তিক হিসেবে দাবী করাটা নেহায়েৎ অযৌক্তিকই নয়, প্রতারণার সামিল। এমন ব্যক্তিকে কখনও সত্যিকারের নিবেদিত নাস্তিক বলা যাবে না।
*** নাস্তিকতার ভিত্তি বিবেকের দায়বদ্ধতা আর আস্তিকতার ভিত্তি প্রতিদানের প্রত্যাশা।
নাস্তিকতাকে অর্জন করতে হয়। পক্ষান্তরে আস্তিকতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। এর সূতিকাগার হচ্ছে বিশ্বাস। বিবেক বুদ্ধির ব্যবহারের সুযোগ এখানে খুবই কম। কিন্তু নাস্তিকতা মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারণ, বাস্তব অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও জ্ঞানের বিশ্লেষণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এটাকে উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন কিংবা সম্পত্তির মতো ব্যবহারের আদ্যৗ কোনো সুযোগ নেই। আপনি যদি বিষয়টাকে সম্পদের সাথে তুলনা করেন তবে আস্তিকতা হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ আর নাস্তিকতা হচ্ছে নিজের যোগ্যতার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ।
*** নাস্তিকতাকে অর্জন করতে হয় বিবেকের ব্যবহার, দৈনন্দিন জীবনধারণ, বাস্তব অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও জ্ঞানের বিশ্লেষণের মাধ্যমে। অপরদিকে আস্তিকতা উত্তরাধিকার সূত্রে বিনা পরিশ্রম বিনা যোগ্যতায়ই অর্জন সম্ভব।
নাস্তিকতা অবশ্যই একটি ধর্ম। সাধারণভাবে ধর্ম বলতে সেই পন্থা, বা পথ কে বুঝায় যা কোনো পদার্থ, ব্যক্তি অথবা ব্যক্তিবর্গ অনুসরণ করে থাকে। সেই হিসেবে নাস্তিকতা অবশ্যই একটি ধর্ম। কারণ একজন নাস্তিক বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত পথে নিজেকে পরিচালিত করেন। তাই একজন নাস্তিক-কে কোনো প্রকারেই অধার্মিক বা ধর্মদ্রোহী বলা যাবেনা। বরং নাস্তিকতা পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য মানুষ কর্তৃক অনুসৃত ধর্ম এবং এ ধর্মের মাধ্যমেই পৃথিবীতে সার্বিক শান্তি আনয়ন সম্ভব। কারণ আস্তিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত ধর্মগুলো তাদের প্রবর্তকের গুণকীর্তনে ব্যস্ত। তারা স্রস্টার গুণকীর্তনের চেয়ে শুধু তাদের প্রবর্তকদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে ব্যস্ত। এর ফলশ্রুতিতে জেহাদ, ক্রুসেড প্রভৃতি ধর্মযুদ্ধের অবতারণা হয় যার ফলাফল সম্পর্কে সবাই অবহিত। অপরদিকে নাস্তিকতা সব মানুষকে সম মর্যাদা নিয়ে মানুষকেই সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দেয় এবং এক যাচিত সাম্যের সৃষ্টি করে।
*** আস্তিকতা নয়, নাস্তিকতা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। প্রচলিত আস্তিকতার ভিত্তিতে প্রবর্তিত ধর্মগুলোর ব্যর্থতা তাই প্রমাণ করে।