প্রথমেই স্বীকার করছি মেটাল সিরিজের থার্ড ব্যান্ড হিসেবে SlipKnot আসত না। অল্টারনেটিভ মেটালের শুরুর দিকের ব্যান্ড হিসেবে অন্যান্য ব্যান্ডের তুলনায় এদের ইনফ্লুয়েন্স কারো চেয়ে কম না, তবে আরো দুয়েকটা ব্যান্ডের পর স্লিপনট আসত। একটা এক্সিডেন্টের জন্য স্লিপনট সিরিজের থার্ড ব্যান্ড!
স্লিপনট! আমেরিকার আইওয়ার ব্যান্ড। নিউ মেটালে প্রথমদিককার আর্টিস্ট, নিউমেটাল আর এক্সট্রিম কিছু মেটাল জাঁনরের গান গাইত ফর্মেশনের পর থেকেই। আজতক ১৪ মিলিয়নের বেশি রেকর্ড বিক্রি হওয়া এবং ৭ বার গ্র্যামি নমিনেশন পাওয়া ব্যান্ড। তবে স্লিপনট বেশি পরিচিত মেটাল ফ্যানদের কাছে অন্য কারণে, ব্যান্ডের অধিক মেম্বার সংখ্যা (৯জন!), সবসময় বিশেষ মুখোশ পড়ে সব গান বা কনসার্টে অংশ নেয়া, সব গানেই প্রাইমারি ড্রামার থাকার পরও সামনে কয়েকটা ডিব্বা নিয়ে অতিরিক্ত ২জনের লাফালাফি (যদিও প্রাইমারি ড্রামার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ড্রামারদের একজন) এবং অবশ্যই অবশ্যই যেটার কথা বলতে হবে- অতিরিক্ত এনার্জেটিক লাইভ পারফর্মেন্স! গানের ধাঁচ এবং এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য ব্যান্ডটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হয় খুব সহজে এবং দ্রুত।
অনেক বিখ্যাত ব্যান্ডেরই শুরুটা বা শুরুর কারণটা বড় কষ্টের। জীবনের কিছু দুঃখ বেদনার কথা, ছ্যাঁকা খাওয়ার ঘটনা অনেক ব্যান্ডের সৃষ্টির কারণ ছিল। যেমনটা ছিল আমেরিকান হেভিমেটাল/অল্টারনেটিভ মেটাল/নিউ মেটাল ব্যান্ড স্লিপনট! ব্যান্ড মেম্বারদের মাঝে ২জন ছিল জীবনের শুরুতেই নানা ঝামেলায় জর্জরিত হয়ে কঠিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়াদের তালিকায়, ভোকাল অনেক বড় হওয়ার আগে পর্যন্ত জানতই না তার বাবা আসলে কে! স্টার্টিং মেম্বারদের একজন ব্যবসায় কঠিন মার খেয়ে সুইসাইডের ডিসিশন নিয়েছিলেন, তারপরই তার জীবনে আসে প্রেম, এবং আস্তে আস্তে মন ফিরে পেতে থাকেন মিউজিকের দিকে, পুরানো দুই ফ্রেন্ডের সাথে শুরু করেন মেটাল চর্চার নতুন এক ধারার দিকে যাত্রা। যার ফলাফল তো আমরা জানি, ১৮ বছর পর আজ তাবৎ দুনিয়ার মেটাল ভক্তদের কাছে স্লিপনট নামটা এখন স্পেশাল কিছু বুঝায়।
ব্যান্ডের শুরু ১৯৯২ সালে। শন ক্রেহান তখন রিহ্যাবের পরপর অন্য বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলেন নতুন ধাঁচের কোন ব্যান্ড বানানো যায় কিনা। সেই উদ্দেশ্যই বেসিস্ট পল গ্রে, ভোকাল এন্ডারস এবং গীটারিস্ট স্টীল এবং নং-কে নিয়ে শুরু করেন ন্যু-মেটাল/ডেথ মেটাল গ্রুপ 'পেইনফেস', শন নিজে নিলেন ড্রামসের ভার। (ব্যান্ডটা এখনো আছে, মাঝে ২০০১-২০০৮ বন্ধ ছিল, তবে শুরুর মেম্বারদের মধ্যে এন্ডারস ছাড়া কেউ নেই এখন)। কিছুদিন যাওয়ার পর শন এবং পল ফিল করলেন ঠিক এই ধাঁচের গান তারা চাচ্ছেন না। তবে পেইনফেসের গূরুত্বটা অন্য জায়গায়, ব্যান্ড মেম্বারদের মুখোশ পড়ে গান গাওয়ার আইডিয়াটা তখনই আসে শনের। ৯৫-এ নং চলে যান ব্যান্ড ছেড়ে তখন তারা ব্যান্ডের নাম দেন দ্যা পেল ওয়ানস। সময়টা খুব ভাল যাচ্ছিল তাদের; ডাকা মাত্র পেয়ে যান তারা জোয়ে জর্ডিসন-কে, ড্রামসে। জর্ডিসন ড্রামসে আসার পর শন ড্রামস ছেড়ে পারকিউশনে চলে যান (পাঠক লক্ষ্য করুন, এখানেই কিন্তু আধুনিক স্লিপনটের শুরু; এখনকার কাস্টমস পারকিউশনিস্ট দুজনের একজন এই শন ক্রেহান!)। আরেকটা চেন্জ হয় ব্যান্ডে জস নামের নতুন একজন গীটারিস্ট আসেন এন্ডারস চলে আসেন ভোকাল এবং এক্সট্রা পারকিউশনিস্টের দায়িত্বে। কিছুদিন পর, জর্ডিসনই প্রস্তাব করেন ব্যান্ডের স্লিপনট নামটা।
যাকগে, গীটারিস্ট স্টিল থাকতে চাচ্ছিলেনা না ব্যান্ডে কারণ তার পছন্দ ছিল ক্রিশ্চিয়ান রক/মেটাল। স্টীল চলে যাওয়ার পর ব্যান্ডে তার জায়গায় রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে লীডে যোগ দেন মিক থমসন (দেখতে দৈত্যের মত, মামায় সেরকম বাজায়)। মাস্কের প্রথম দফা বানানো তখনই শেষ হয়ে যায়। এর মাঝে ব্যান্ড স্যাম্পলার পজিশনে নেয় ক্রেইগ জোনসকে, পরে ডিজে সিড উইলসন যোগ দেন ব্যান্ডের প্রতি আগ্রহ থেকে। তবে ব্যান্ডে জোনসের ভূমিকাটাই বেশি স্যাম্পলার এবং টার্নটেবলিস্ট হিসেবে। ডিজের ক্যাঁচক্যাঁচানি খুব একটা শুনা যায় না ইদানিং। ভোকাল হিসেবে তখন ব্যান্ডে ছিলেন শন ম্যাকমহন, তবে তার পারসোনাল ঝামেলার জন্য আর থাকতে চাচ্ছিলেন না ব্যান্ডে। তার রিপ্লেসমেন্টে কে আসে সেটা বলার আগে অন্য একটা জিনিসের কথা বলতে চাই।
আইওয়ার ডেস মইনসে একটা পুরান ক্লাব দ্যা সাফারি। ফেসপেইনের সময় থেকেই ব্যান্ডমেম্বারা সেখানে একসাথে পারফরম করতেন। এবং এই পারফরম করতে করতেই পরিচয় হয় আরেক ব্যান্ড স্টোন সাওয়ারের মেম্বারদের সাথে (১৯৯২-)। স্টোন সাওয়ার তখন ছিল হার্ড-রক/হেভিমেটাল ব্যান্ড। যাকগে, এই ক্লাবগুলোতে পারফরমের একটা আলাদা তাৎপর্য আছে। অনেক বড় বড় ব্যান্ড এগুলোতে মাসের পর মাস পারফরম করে ইনস্ট্রুমেন্টের টাকাটা অন্তত তুলে নিতে পারে। বেশ কিছু বড় ব্যান্ড উঠে এসেছে এভাবে, ক্রীড-রাও একসময় পারফরম করত ফ্লোরিডার এক ক্লাবে। যাকগে, স্টোন সাওয়ারের ভোকাল কোরে টেইলর রাজি হন স্লিপনটের ভোকাল হতে। ততদিনে ব্যান্ডের ডেমো টেপ বেরিয়ে গেছে, মানুষের মুখে নাম ছড়াচ্ছে একটু একটু করে। ফাইনাল ২টা চেন্জ আসে, এন্ডারস ভোকাল থেকে শুধু পারকিউশনে যান এবং পরে ব্যান্ড ছেড়ে দেন। তার জায়গায় আসেন নতুন পারকিউশনিস্ট আসেন ক্রিস ফ্যান। আর লাস্ট আসেন গীটারে জেমস রুট, ইনিও স্টোন সাওয়ারে ছিলেন কোরের সাথে।
অলরাইট, ব্যান্ডের ফরমেশন তো হল। ব্যান্ডের স্টার্টিং মেম্বার ৩জনের (শন, পল এবং জর্ডিসন) শুরু থেকেই প্ল্যান ছিল ব্যান্ডের স্টেজ এপিয়ারেন্স হবে অন্যান্য সব ব্যান্ড থেকে আলাদা। ৯৫এর পর থেকে ব্যান্ডে আসা প্রত্যেকে যার যার মাস্ক ডিজাইন করিয়ে নেয় এক বিখ্যাত কোম্পানিকে দিয়ে। লাস্ট আসা রুট নেন নিজের ডেথমাস্ক, বাকিরা যার যার ইচ্ছা মত। এবং তখনই ব্যান্ড মেম্বারদের একটা সিরিয়াল নাম্বার ঠিক হয়, যা আজো সেভাবেই আছে।
(#0) Sid Wilson – turntables (since 1998)
(#1) Joey Jordison – drums (since 1995)
(#2) Paul Gray – bass, backing vocals (since 1995)
(#3) Chris Fehn – custom percussion, backing vocals (since 1997)
(#4) James Root – guitars (since 1999)
(#5) Craig "133" Jones – samples, media (since 1996)
(#6) Shawn "Clown" Crahan – custom percussion, backing vocals (since 1995)
(#7) Mick Thomson – guitars (since 1996)
(#8) Corey Taylor – lead vocals (since 1997)
উপরের মুখোশগুলো ছিল ভল:৩ পর্যন্ত।
৪৭তম গ্র্যামিতে স্লিপনট!
এখনকার মুখোশের আরেকটা ছবি দিলাম!
আসল চেহারাসহ মুখোশের একটা ছবি দিলাম নিচে-
পাপারাজ্জিরা অনেক বছর জোঁকের মত লেগেছিল ব্যান্ডমেম্বারদের আসল ছবি তোলার জন্য। কনসার্টের পর জোঁকের মত লেগে থাকা, কোন স্টুডিওতে আছে বের করার চেষ্টা করা, কম হয়নি। এখন অবশ্য ওদের অরিজিনাল ফেসের ছবি অনেকের কাছেই আছে। যাই হোক, এগুলো নিয়ে পরে আরো বলছি, ব্যান্ডের রেকর্ডগুলোর দিকে একটু দৃষ্টিপাত করি এখন!
ব্যান্ডের প্রথম ডেমো ছিল Mate. Feed. Kill. Repeat, ১৯৯৬এর হ্যালোইনের সময় বের করে। এই এলবামটির তাৎপর্য অনেক। ব্যান্ডের পরিচয় সৃষ্টিতে তো লাগেই সাথে পরের কয়েকটা এলবামের সোর্স হিসেবেও কাজ করে। এলবামের ৩টা গান ছিল হেভি মেটাল ধাঁচের বাকিগুলো ছিল জ্যাজ এবং ফাংকের সংমিশ্রণে মেটালের কিছু কাজ। মাত্র ১০০০কপি ছাড়ায় বেশিরভাগ ভক্তই ডেমো টেপটি পায়নি, যদিও ইন্টারনেটের বদৌলতে মানুষের কাছে পৌছে গিয়েছিল। মজার ব্যাপার কি, ২০০৩এ গিয়ে দেখা যায় স্লিপনটের কোন ব্যান্ড মেম্বারের কাছেই ডেমো টেপটির একটা কপিও নেই
১৯৯৯ সালে ব্যান্ডটি রিলিজ করে তাদের সেলফ টাইটেলড ডেব্যু এলবাম। ততদিনে ব্যান্ডের সব মেম্বাররা একসাথে বেশ কিছু জ্যামিং করেছেন, কোরে ভোকাল হিসেবে যথেষ্ট স্ট্যাবল হয়ে গেছেন। ডেব্যু এলবাম হিসেবে সাফল্য অনেক বেশি ছিল, কারণ ইন্টারনেট আর দ্যা সাফারির কল্যাণে প্রচুর ফ্যান হয়েছিল স্লিপনটের ততদিনে। বিলবোর্ডে ৫১ নাম্বারে ডেব্যু হয় এলবামটার। কয়েকদিন আগে এলবামের ১০বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্পেশাল এডিশন ছাড়া হয়েছে একটা, ডিলাক্স এডিশন যদিও। সিঙ্গেলস ছিল স্পিট ইট আউট আবং ওয়েট এন্ড ব্লিড! ডেব্যু এলবামের জন্য আরেকটি বড় লাভ ছিল যেটা সেটা হচ্ছে ওয়েট এন্ড ব্লিড ২০০১ সালে মেটালে গ্র্যামি নমিনেশন পেয়ে বসে। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হতে আরো কাজে লাগে। গানটার মিউজিক ভিডিও যোগ করলাম নিচে। একসাথে কোরের মিহি গলা, স্ক্রিম, মেটালকোরের টাচ, ন্যুমেটালের টাচ সবই আছে গানটায়।
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
২০০১ সালে বের হয় পরের এলবাম, Iowa. আমার চোখে ব্যান্ডের সেরা এলবাম ২টার ১টা। সেলফ টাইটেলড এলবামের পর পুরা আমেরিকাতেই বিপুল ফ্যান গুষ্ঠী পেয়ে যায় স্লিপনটরা। আইওয়া এলবাম সেটাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন তৎকালীন সংখ্যায়, আইওয়া ন্যুমেটাল জাঁনরের প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে সফল রেকর্ড। ২০০০ এবং ২০০১ সালে স্লিপনট জেতে ক্যারাঙ-এর 'বেস্ট ব্যান্ড ইন দ্যা ওয়াল্ড' এওয়ার্ড। বলার অপেক্ষা রাখেনা, আইওয়ার জন্যই এটা সম্ভব হয় এত দ্রুত!এর পরের দুই বছর মেটালে গ্র্যামি নমিনেশন নিয়ে এলবামের সিঙ্গেলস লেফট বিহাইন্ড এবং মাই প্লেগ গানদুটি। প্রথমে লেফট বিহাইন্ড। এটা পিওর নিউ মেটাল। মিউজিক ভিডিওতে আসলে ভোকাল কোরে টেইলরের জীবনের কিছু অংশ দেখান হয়েছে। ছোট ছেলেটির আবাসস্হল হিসেবে যে বাসাটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা আসলেই ছিল ভোকাল কোরে টেইলরের ছেলেবেলার আবাসস্হল। ব্যান্ড মেম্বাররা একটা বনের ভেতর গান গাইতে থাকেন, শুরুতে অল্প কিছু ছাগল থাকে ব্যান্ড মেম্বারদের পাশে, গানের স্কেল চড়ার সাথে সাথে ছাগলের সংখ্যাও বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে দেখা যায় প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝেও অনেক মিস্টি(!) চেহারার ছাগল জড়ো হয়েছে ব্যান্ড মেম্বারদের আশেপাশে গ্র্যামিতে হেরে যায় গানটা টুলের একটা মাস্টারপীসের কাছে
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
মাই প্লেগ গানটা ২০০৩ সালে মেটালে গ্র্যামি নমিনেশন পায়। ন্যু মেটাল, নিঃসন্দেহে, তবে ভেতরের যন্ত্রণাটা ফেটে বের হওয়াটা পরিস্কার বোঝা যায় গানে। ডিজের ব্যবহার নেই গানে, দুই গীটারের হেভি রিফ আর সাথে জর্ডিসনের ব্যাপক ড্রামিং গানটাকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। ভিডিওতে রেসিডেন্ট এভিলের কিছু ক্লিপস ইউজ করা হয়েছে।
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
এরপর কিছু ঘটনা দেখে তাবৎ ভক্তকূল স্লিপনটের ভবিষ্যত নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়ে। মেইন উদ্যোক্তা শন ক্রেহান বিজি হয়ে পড়েন তার সাইড প্রজেক্ট টু মাই সারপ্রাইজ নিয়ে। ড্রামার জোয়ে জর্ডিসন মার্ডারডলস-এ ব্যাকাপ ভোকাল এবং লীড গীটারের ভার নেন (এটা একটা হরর পাংক/ পাংক মেটাল ব্যান্ড, ভোকাল ওয়েডনেসডে ১৩। মাঝে ৫ বছর হায়েটাসে থাকার পর কয়দিন আগে আবার শুরু হয়েছে।)। কোরে টেইলর, জিম রুট ২০০২ থেকে বিজি হয়ে পড়েন তাদের পুরান ব্যান্ড স্টোন সাওয়ার নিয়ে, সেখানে জটিল কিছু গান তারা কম্পোজ করেন জস রেন্ড, ইকানোমকি এবং জোয়েল ইকম্যানের সাথে। স্টোন সাওয়ারের একটা গান (ইনহেল) ২০০৪ সালে মেটালে গ্র্যামি নমিনেশন পায়। এখানেই শেষনা, ২০০৩এর শেষের দিকে কোরে টেইলর মাদকাসক্তির জন্য মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন। ডিজে সিডও চান্সে ডিজে মুনবুটস নামে ধুমসে পাড়ায় পাড়ায় ডিজেগিরি করা শুরু করেছিল ঐ সময়!
কাজেই বেসিস্ট পল গ্রে ২০০৩এর এলবাম Vol. 3: (The Subliminal Verses) বের হবার সময় বলেছিলেন, ব্যান্ডের রিবার্থের এলবাম এটা, খুব একটা ভুল বলা চলে না (আসলে, পল সবসময়ই আপ্রাণ চেষ্টা করতেন ব্যান্ডটাকে একটা পরিবারের মত রাখতে)। ব্যান্ডের সবচেয়ে সফল এলবাম এটা আমার চোখে, বিলবোর্ডেও ২নং পজিশনে ডেব্যু হয় এলবামের। ক্যারাঙ! ম্যাগাজিন এলবামটাকে স্বীকৃতি দেয় একবিংশ শতাব্দীর ৩১নং শ্রেষ্ঠ মেটাল এলবাম হিসেবে। সব টাইপের গানই ছিল; ন্যু মেটাল, অল্টারনেটিভ মেটাল, হেভি মেটাল। যদিও আমি টের পাইনি কেমনে কি হল, একটা গান হার্ডরকে গ্র্যামি নমিনেশন পায় ২০০৫ সালে! আমি ৩টা গানকে ফোকাস করব ঐ এলবামের- যদিও আর ভাল গানও ছিল। ভারমিলন গানটার কথা বলব আগে। গভীর চিন্তার গান এবং গানটার ২টা পার্ট আছে, পার্ট ১ এবং পার্ট ২। শেষের ভার্স আর কোরাসটুকুর লিরিকস তুলে দিলাম এখানে, ব্যাপক চিন্তার জিনিস!
I'm a slave, and I am a master
No restraints and, unchecked collectors
I exist throught my name, to self ablige
There is something in me, the darkness finds
I won't let this build up inside of me (8x)
কোরের মেলোডিক ভয়েসে গাওয়ার ক্ষমতা আমি প্রথম উপলব্ধি করি এই গানটা শুনে। এই গানের (পার্ট২) মিউজিক ভিডিওতে ব্যান্ডের মেম্বাররা তাদের নিজেদের বৈশিষ্ট্যমূলক মাস্কগুলো না পড়ে নিজেদের ডেথ মাস্ক পড়েন। অসাধারণ অভিব্যক্তি! অথচ এই মেলোডির মাঝেও গীটারের রিফ এবং ব্লাস্ট বীটের এক্সপার্টের ড্রামিং শুনার মত। ভারমিলন ২০০৫এ মেটালে গ্র্যামি নমিনেশন পায়! পার্ট ১ সম্পূর্ণ এক্যুস্টিক গীটারের একটা কম্পোজিশন, ড্রামসের ইউজ নেই। গানটা অসাধারণ, ভিডিওর কাহিনী একটা মৃত মেয়েকে নিয়ে। পার্ট ২ এর গান এবং ভিডিও কোনটাই প্রথমটাকে আগে দেখে না নিলে বুঝা যাবে না, এটাতে দেখনো হয় সেই মেয়েটার আরেক পরিণতি। দুইটা গানই অসাধারণ। প্রথম ভিডিওটা পার্ট ১ এর পরেরটা পার্ট ২ এর, ভিডিওর নাম যাই লেখা থাক!
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
পরের গান ডুয়ালিটি। এটা হার্ডরকে ২০০৫এ গ্র্যামি নমিনেশন পায়। গানের রিদম খুবই সুন্দর নিঃসন্দেহে। তবে ইন্টারেস্টিং হল গানের মিউজিক ভিডিওটা। রোডরানার রেকর্ডস প্রথমে ব্যান্ডের ভক্তদের কাউকে ভলান্টিয়ার বেসিসে নিজের বাসা ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়, এবং সেই মোতাবেকই মিউজিক ভিডিওর শুটিংটি সম্পাদন করা হয়! বেশি কিছু বলবনা, এত ধ্বাংসাত্মক আবাসিক ভিডিও কমই দেখেছি। রোডরানার রেকর্ডস পরে ঐ ভক্ত ফ্যামিলিকে ৫০হাজার ডলারের ক্ষতিপূরণই দেয় সম্পূর্ণ ভিডিওটি বানাতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৫লাখ ডলার। দেখুন স্লিপনটের অন্যতম ব্যয়বহুল ভিডিওটি,
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
অবশেষে গ্র্যামি জুটল স্লিপনটের কপালে। ছয়বার নমিনেশন পাওয়ার পর ৬ষ্ঠবার, ২০০৬ এর গ্র্যামিতে মেটালে গ্র্যামি পায় বিফোর আই ফরগেট গানটার জন্য। মেটাল গান; ন্যুমেটাল বা অল্টারনেটিভ মেটাল নয়। এবং এই গানেই প্রথমবারের মত ব্যান্ড মেম্বাররা মাস্ক ছাড়া আসে ক্যামেরার সামনে, যদিও ভিডিওতে কারো চেহারাকেই সরাসরি একবারও ফোকাস করা হয়নি। বেশিরভাগ টাইমেই দেখানো হয়ছে ইনস্ট্রুমেন্টের উপর অত্যাচারগুলো অথবা কোরের মুখের নিচের অংশ এবং পুরা দেখালে মুখগুলোকে আউট অফ ফোকাস রেখে। সব মেম্বারের মুখোশগুলো পাশে ঝুলিয়ে রাখতে দেখায় ভিডিওতে! খাঁটি রকিং ভিডিও, গানের শেষে যার যার মাইক ছুঁড়ে ফেলে দেয়, প্যাডেলে লাথি মেরে সরিয়ে দিয়ে চলে যায় ব্যান্ডের সবাই। গানটা সুন্দর। মেটাল পছন্দ করে না এরকম পাবলিকরাও গানটাকে ভাল বলেছে গানের রিদমটার জন্য। পুরা কম্পোজিশনটাই অসাধারণ, লিরিকস হেভিমেটালের কমন টাইপের কিন্তু রক্ত গরম দেয় চোখের পলকে। আমি অনেকদিন ইন্ট্রোটাকে মোবাইলের রিংটোন হিসেবে ইউজ করেছি (ফোন বাজলে পাশের অনেকেই লাফিয়ে উঠত)! পুরা গানটা শুনুন, আমি কথা দিচ্ছি, কোরাসের সময় ব্যান্ডের ৯ মেম্বারের সাথে আপনিও চেঁচিয়ে উঠবেন "I". দেখুন,
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
এলবাম আরেকটা আছে ওদের। সেটার কথা পরে বলব, আগে ব্যান্ডের বৈশিষ্ট্যগুলো আরেকটু গভীরে যেয়ে দেখার চেষ্টা করি। প্রথমেই গানের কথা। গতানুগতিক হেভি মেটাল গানের প্রায় সব উপকরণ এদের লিরিকসে বিদ্যমান। আরো যা আসে তা হল অন্ধকারের কথা, ভালোবাসার কথা, সমাজের কিছু আচারের উপর ঘৃণার কথা, রাগ/ক্ষোভ, ইত্যাদি। কিছু গানে দার্শনিক চিন্তার ছাপও পাওয়া যায়। মানসিক ব্যাধির কিছু টার্মও পাওয়া যায় কোন কোন গানে।
এরপর ইনস্ট্রুমেন্টের কিছু কথা বলি। ড্রামসে জোয়ে জর্ডিসন জন্মগত প্রতিভা নিঃসন্দেহে। ব্লাস্টবীটের রেটিং-এ সম্ভবত অন্য কোন একজন ড্রামার এগিয়ে, তবে আমার চোখে ব্লাস্ট বীটে জোয়ে জর্ডিসন পৃথিবীর সেরা। কিছু গানে ব্লাস্ট বীটের ব্যবহার একদমই থাকেনা, তখনো দেখা যায় তার কম্পোজিসনের কোয়ালিটি। এমনিতে অসম্ভব ফাস্ট, কিন্তু দেখা গেছে যেকোন গানের জন্যই আদর্শ ড্রামার। স্লিপনটের লাস্ট এলবামের গানগুলোতে মেলোডি টাইপের গান বেড়েছে-এবং সেখানেও জর্ডিসন স্বমহিমায় ভাস্বর! আট বছর বয়সে নিজের প্রথম ড্রাম-কিট পাওয়ার আগ পর্যন্ত গীটার বাজাতেন এবং গীটারেও যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন, মার্ডারডলসে জর্ডিসন লীড গীটারিস্ট এবং ভোকালিস্টও বটে! তবে জর্ডিসন কোন মাপের ড্রামার তা বুঝার আরেকটা সহজ উপায় আছে। ঠেকা বেঠেকায় অনেক ব্যান্ডেই জোয়ে জর্ডিসনকে ধার নেয়, বাজিয়ে সবাইকে মাত করে আসেন। একবার ডাউনলোড ফেস্টিভালে মেটালিকার লার্স উলরিখ অসুস্হ, ডাক পড়ল জর্ডিসনের। সেদিন, মেটালিকার গাওয়া ১২টা গানের ৯টাতেই জর্ডিসন প্লে করেন। কোরে টেইলর সেদিন মজা করে বলেছিলেন 'জর্ডিসন আজ ইতিহাস সৃষ্টি করল!' মাঝে কর্ন, মিনিস্ট্রি, স্যাটিরাইকন এদেরকেও ঠেকার সময় হেল্প করে এসেছেন জর্ডিসন!
তবে জর্ডিসনের সাথে এডিশনাল পারকিউশনিস্টদের কথা না বললেই না। শন ক্রেহান এবং ক্রিস ফ্যান দুইজনই দুইটা টম বিশেষ বেল্টের সাহায্যে গলায় ঝুলিয়ে নেন, এটাই তাদের ইনস্ট্রুমেন্ট মোবাইল অবস্হায়! এমনিতে স্টেজের ২পাশে কয়েকটা স্নেয়ার রাখা থাকে তাদের জন্য, দুজনের সেটাপ সেখানে আলাদা। শন ক্রেহানের সেটাপে ড্রামসটা লিফটের সাহায্যে ফ্লোর থেকে বেশ উচুতে রাখা থাকে, যেখান থেকে তিনি প্রায়ই লাফ মারেন (ক্রিসের উচ্চতা ভীতির জন্য সাধারণ সেটাপ ইউজ করতে দেখা যায়!)। জর্ডিসনকে প্রায়ই ব্যাকআপ দেন দুজনেই। তবে এই দুজনের আসল চেহারা দেখা যায় স্টেজে কনসার্টের সময়। এনার্জেটিক লাইভ পারফরমেন্সের জন্য এই দুজনের ভূমিকাই মনে হয় সবচেয়ে বেশি। অনেক উচু থেকে লাফ দিয়ে পড়া, মাঝে মাঝে একজন আরেকজনের স্নেয়ারে স্টিক দিয়ে পেটানো, আর গানের স্কেল উঠা নামার সাথে সাথে অন্যান্য বিভিন্ন স্ট্যান্টবাজি তো আছেই! মাঝে মাঝে বেসবল ব্যাট দিয়ে বড় ড্রামসে বাড়ি দেয়ার মত কাজও করেন তারা! এরা দুজনেই এক্সট্রিম লাইভ একশনগুলোর জন্য অনেকবার আহত হয়েছেন। কোরে কনসার্ট জমাতে এক্সপার্ট, তবে স্লিপনটের ক্ষেত্রে এই দুজনই সব কাজ সেরে দেন
গীটার! মেইন গীটারিস্ট দুইজনই বস! এমনিতে স্লিপনটের পুরা সেটআপটাই নির্ভর করে ডাউনটিউনড ২টা গীটার এবং ডাউনটিউনড একটা বেসের উপর, পারফেক্ট ন্যুমেটাল/হেভিমেটাল এনভায়রনমেন্ট ক্রিয়েটের জন্য। ভারি রিফ স্লিপনটের কমন টাইপ, মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন থমসন এবং জেমস রুট সেই কাজে। স্লিপনটের জন্য থমসন এবং রুটের প্লেয়িং স্টাইলের কমন টাইপ হল ফাস্ট প্লেয়িং, অড টাইমিং (দেখা যায় মাঝে মাঝে) আর অল্টারনেট পিকিং-এ অসাধারণ দক্ষতা। দুজনই যার যার সিগনেচার গীটার বাজান এবং নিজ নিজ কোম্পানির এনডোর্সডও বটে! রুট-কে এনডোর্স করে ফেন্ডার গীটারস, রুটের নামে সিগনেচার গীটারের ২টা লাইন আছে-টেলিকাস্টার সিরিজের(এটাই বেশি ব্যবহার করেন) আর স্ট্যাটোকাস্টার সিরিজের; ২সিরিজের আবার সাদা আর কালো আলাদা ভ্যারিয়েন্ট আছে। রুট ছাড়া সম্ভবত আর একজনকেই দেখেছি ফেন্ডার গীটার নিয়ে মেটাল গান গাইতে (সেপালচুরার লীড গীটারিস্ট)। থমসন পুরান পাপী, আইওয়া এলবামের রিলিজ হওয়া পর্যন্ত তাকে বি.সি. রিচ এনডোর্স করত। ঐ গীটারগুলোর চেহারা মেটাল জাঁনরের সাথে জটিল লাগত। কেন কি জানি, ২০০৫এ তিনি সুইচ করেন সবার প্রিয় ব্র্যান্ড আইবানেজে (এখন সিগনেচার গীটার বাজান, এনডোর্সড তো অবশ্যই!!)। দুজনের আলাদা টেকনিশিয়ান আছে, স্টেজে যার যার নিজস্বতা ফুটিয়ে তুলতে দুজনই সর্বদা সচেষ্ট! লিডের দায়িত্ব দুজনেই ভাগ করে বাজান, তবে শেষ এলবামের বেশ কটা গানে মনে হয় জিম রুটকেই বেশি দেখেছি।
বেসিস্ট পল গ্রে-র কথা ও বলা উচিত এখানে। ওয়ারউইকের বেস ব্যবহার করতেন আগে, কিছুদিন আগে আইবানেজের সিগনেচার বেস ইউজ করা শুরু করেন। পুরা সেটআপের সাথে কম্বিনেশন ঠিক রাখতে তিনিও ড্রপ টিউনিং ইউজ করতেন। নিজের কাজে তিনি আসলেই জটিল ছিলেন। বামহাতি ছিলেন, পিক বেশি ব্যবহার করতেন, পুরান ফিঙ্গারস্টাইলে ফিরে যেতেন রেয়ার। অল্প কিছু গানেই বেসিস্টদের প্রিয় স্ল্যাপিং টেকনিক ইউজ করতে দেখা গেছে।
স্লিপনটের গানে ডিজের ব্যবহার আগে অনেক ছিল, ভল:৩ থেকে কমে আসছে। স্যাম্পলার এবং কিবোর্ডের কাজ করেন ব্যান্ডে জোনস, তিনি ব্যান্ডের সবচেয়ে ঠান্ডা সদস্য। বলা হয়, জোনসকে ১০টা প্রশ্ন করলে ২টার উত্তর দেন! তার আরেক নামই এজন্য The Silent One. অপরজন ডিজে সিড উইলসন। ওনার কাজ টার্নটেবল এবং কিবোর্ড নিয়ে।
সবচেয়ে ইমপরট্যান্ট জনের কথা বলি এবার। কোরে টেইলর! আমার চোখে মেটাল জাঁনরের সবচেয়ে কঠিন ভোকাল। স্লিপনটের সাথে থাকায় পুরা ক্যারিয়ার জুড়ে মেইনলি ন্যুমেটালে কাজ করে গেছেন,পুরান কিছু স্টাফে দেখা গেছে হেভি মেটালে দক্ষতা। স্লিপনটের বেশ কিছু লিরিকসও তার লেখা। স্লিপনটে গান গাওয়ার সময় তাকে প্রকাশ করতে হয় রাগ/ক্ষোভ, যন্ত্রণার টোন, সেটাতে ষোল আনাই সফল তিনি। ড্রামার জর্ডিসন এত মেটাল গানের পরও একবার বলেছিলেন, কোরের গলায় সত্যিকারের মেলোডি আছে। আছে, আসলেই আছে। হেভি মেটাল,ন্যু মেটাল, কিছু rapping, গ্রাউলড ভয়েস, স্ক্রিমড ভোকাল, হার্ড-রকের বলিষ্ঠ কন্ঠ, সবই তো দেখা গেছে একজনের গলাতেই। কোন একটা গানে জানি ব্যারিটোনেও গান গাইতে দেখা গেছে তাকে। পারেনও বটে। আবার আরেক ব্যান্ড স্টোন সাওয়ারে তাকে গাইতে হয় পোস্ট গ্রান্জ, হার্ডরক, অল্টারনেটিভ রক/মেটাল, এই টাইপের গান। যারা জানেন না তাদের বলছি, কোরে টেইলরের সামনে থ্র্যাশ মেটালে ক্যারিয়ার গড়ার পথ খুলে গিয়েছিল কিছুদিন আগে। থ্র্যাশের জনকদের এক ব্যান্ড, এনথ্রাক্সে ভোকাল সংকটের সময় প্রায় ২বছর তাদের কনসার্টে ভোকালের কাজ চালিয়ে আসছিলেন। তবে নতুন এলবামে সরাসরি ভোকাল হিসেবে দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। পরে অবশ্য এনথ্রাক্স মেইন ভোকাল হিসেবে আরেকজন পুরান মেম্বারকে পেয়ে যায়। কোরের সাথে অনেক ব্যান্ডেরই দারূন সম্পর্ক বিদ্যমান। এর আগে একবার কর্নের ভোকাল জোনাথন ডেভিস অসুস্হ থাকায়, পুরা কনসার্টেই তাকে ভোকালের দায়িত্বে দেখা গিয়েছিল। কোরের একদম ঠান্ডা একটা গান আছে আমার এই পোস্টে।
ব্যান্ডের মেম্বারদের পোষাক একটা গূরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে তাদের এই মিলিটারি মিলিটারি ইমেজ সৃষ্টিতে। আইওয়া এলবাম পর্যন্ত তাদের পোষাক থাকত লাল রংএর জাম্পস্যুট। ভল:৩ এ ছিল কাল রং-এর জাম্পস্যুট, আর লাস্টের এলবামে জাম্পস্যুটের পরিবর্তে অনেকটা সাধারণ পোষাকেই দেখা গেছে, তবে রং যথারীতি সবার কালো। মাস্কেও চেন্জ এসেছে এলবাম থেকে এলবামে। জর্ডিসন বলেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে, মাস্কের পরিবর্তনটা তাদের বয়সের সাথে সাথেই হচ্ছে। মাস্কের কথা আর ডিটেইলস লিখলাম না, লিখলে পোস্টের সাইজ ডাবল হয়ে যাবে তবে মজার ব্যাপার কি, ২০০৬এর গ্র্যামির অনুষ্ঠানের দিনও তারা মাস্ক পড়েই গিয়েছিলেন, সে অবস্হাতেই এওয়ার্ড গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী অংশে পারফরম করেন বিফোর আই ফরগেট গানটা!
তো উপরের সেটআপে, হেভি রিফের জন্য ডাউনটিউনড গীটার, ব্লাস্টবীটের একজন শিল্পী এবং অত্যন্ত ফাস্ট একজন ক্লাস ড্রামার, ওয়াইড ভোকাল এবিলিটির একজন ভোকালের সাথে যখন মেটালের সুর তুলছেন, সাথে প্রাইমারি ড্রামারকে সাপোর্ট করছেন এক্সট্রা দুজন পারকিউশনিস্ট, মিলিটারি ভাব আসাটাই স্বাভাবিক! এজন্যই রোলিং স্টোনে একবার রবার্ট চেরী বলেছিলেন স্লিপনট সম্পর্কে, "a threshing machine devouring a military drum corps!" উল্লেখ্য, ব্যান্ডের ভক্তদের স্লিপনটের মেম্বাররা ডাকেন ম্যাগট বলে।
স্লিপনটের মুখোশ নিয়ে কিন্তু আইনি জটিলতাও হয়েছিল একবার। আমেরিকার বার্গার কিং -এর ফিকশনাল ব্যান্ডের মুখোশগুলো ছিল অনেকটা একইরকম, পরে স্লিপনটের আদালতে যাবার উপক্রম হলে সেটা তারা চেন্জ করে। আবার আরেক মেটাল ব্যান্ড মাশরুমহেড দাবি করেছিল স্লিপনটরা তাদের কাছ থেকেই মাস্কের কনসেপ্ট চুরি করেছে, সেটা অবশ্য ধোপে টিকেনি! স্লিপনটের সাথে বনেনা সম্ভবত শুধু লিম্প বিজকিটেরই। ফ্রেড ডাস্ট অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন প্রেসে স্লিপনট সম্পর্কে, যদিও স্লিপনটের মেম্বাররা সেসম্পর্কে কমই উত্তর দিয়েছেন। স্লিপনটের গানের ধরণ নিয়ে ফ্রেড অনেক জঘন্য জঘন্য কথা বলেছিলেন (যেটা তার স্বভাব!) উত্তরে শন ক্রেহান কি বলেছিলেন এখন আর মনে করতে পারছিনা!
আরেকটা ব্যাপার! মনে আছে তো স্টোন সাওয়ারের কথা? আসলে মেইন মেম্বারদের দুজন দুই ব্যান্ডের কমন বিধায় একটা যখন স্টুডিওতে ঢুকে আরেকটার কাজ তখন প্রায় বন্ধ থাকে, টুকরা টুকরা কনসার্টের কাজ খালি চলে। এবং দুই ব্যান্ডই স্টুডিওতে ঢুকে এলবাম বের করার নিয়তে, গান লেখা, কম্পোজ সব একবারে স্টুডিওতেই সারে। মজার ব্যাপার কি, স্টোন সাওয়ারের বেসিস্ট শন ইকোনোমাকি স্লিপনটের স্টেজ মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেন!
অনেক কিছু জানলেন স্লিপনট সম্পর্কে! আর বেশি কিছু লিখব না, লাস্ট এলবামটার কথা বলি এবার। ব্যাপক খেটেছেন মেম্বাররা এই এলবামটার জন্য। ২০০৭এর শেষের দিকে স্টুডিওতে ঢুকেন সবাই। ৯জন মেম্বার একসাথে বসে লিরিকস লিখেন প্রায় ৩০টা গানের, তারপর সেখান থেকে চতুর্থ এলবামটার জন্য গান চয়েস করেন। ব্যান্ড মেম্বারদের উদ্দেশ্য ছিল স্লিপনটের সবচেয়ে হেভি এলবামটা প্রডিউস করা। ২০০৮এর অগাস্টের দিকে রিলিজ হয় এলবামটা, All Hope Is Gone (আমারও কেন জানি মনে হচ্ছে) এই এলবামটা বিলবোর্ডে যাত্রা শুরু করে ১নং পজিশনে। ক্যারাঙ! ম্যাগাজিন এলবামটাকে স্বীকৃতি দেয় একবিংশ শতাব্দীর ১৬নং শ্রেষ্ঠ মেটাল এলবাম হিসেবে। তবে, এই এলবামের মেইন বৈশিষ্ট্য হল ন্যুমেটালের ইনফ্লুযেন্স খুব একটা দেখা যাচ্ছেনা এখন আর। তার পরিবর্তে অল্টারনেটিভ মেটালের দিকে ব্যান্ডের মেম্বারদের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে বেশি। এই এলবামের বদৌলতে স্লিপনট গত বছর জেতে 'বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ড'-এর ক্যারাঙ এওয়ার্ড। প্রথম সিঙ্গেলস ছিল সাইকোসোশাল, গত বছরের গ্র্যামিতে মেটালে নমিনেশন পেয়েছিল। উল্লেখ্য, সাইকোশোসাল বেস্ট রক ভিডিওর নমিনেশন পেয়েছিল এমটিভিতে ২০০৮ সালে (হেরে যায় অবশ্য)। তবে 'বেস্ট রিফ' ক্যাটাগরিতে জিতে নেয় ২০০৯ এর রিভলভার গোল্ডেন গডস এওয়ার্ড!
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
সালফার গানটা মেটাল। স্লিপনটের পুরান স্টাইল অনেকটাই আছে এতে, শুধু ন্যুমেটালের ইনফ্লুয়েন্সটুকু ছাড়া।
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
তবে ভাল লেগেছিল ডেড মেমোরিস গানটা। শন ক্রেহান ডিরেক্টর ছিলেন মিউজিক ভিডিওর, কোরে টেইলরের চেহারা পরিস্কার দেখান হয়েছে এতে।
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
এই গানটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে আমার কাছে। অনেক গভীর চিন্তার গান। অল্টারনেটিভ রক, ভিডিওর কনসেপ্ট-টাও জটিল। তবে যখন কোরাসে যায়, তখন টের পাওয়া যায়, সবকিছুর পরও স্লিপনট কেন স্লিপনট! দেখুন, বেশি কথা বলছি আজকে
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
কনসার্টে কি করে এক্সাম্পল দেই দুয়েকটা। ডাউনলোড ফেস্টিভাল ২০০৯ এ পারফরম করা বিফোর আই ফরগেট আর সালফার,
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
রক এম রিং ২০০৯ এ পারফরম করা ডুয়ালিটি
ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
পোস্টের শুরুতে বলেছিলাম একটা এক্সিডেন্টের জন্য আজকে স্লিপনটের কথা বলছি মেটাল সিরিজে। এক্সিডেন্ট-টা কি এবার বলি। স্লিপনট এই মূহূর্তে আটজনের ব্যান্ড। গত ২৪শে মে ব্যান্ডের বেসিস্ট পল গ্রে মারা গেছেন। এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ অজানা, প্রাথমিক পোস্টমর্টেমে শরীরে কোন আঘাতের চিন্হ পাওয়া যায়নি। এডভান্সড অটোপসির রেজাল্ট এলে জানা যাবে প্রকৃত কারণ। তবে পুলিশি রিপোর্ট বলছে মৃতদেহের পাশে কিছু পিল এবং সিরিন্জ পাওয়া গেছে। পল গ্রে এর আগেও একবার নেশায় চুর হয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় এক্সিডেন্ট করে জেলে গিয়েছিলেন, সেবারই প্রথম তার আনমাস্কড চেহারা পাবলিক প্লেসে দেখা যায়।
তবে সবকিছুর পরও একজন মানুষ হিসেবে তাকে চিনতে হলে ফিরে যেতে হবে লম্বা সময় একসাথে কাটানো পুরান বন্ধুগুলোর কাছেই। পলের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা লস এন্জেলসে, শুধু স্লিপনটের বন্ধুদের জন্যই পাড়ি জমিয়েছিলেন আইওয়াতে। মৃত্যুর পরদিন ব্যান্ডমেম্বাররা একটা প্রেস কনফারেন্স ডাকেন, আনমাস্কড অবস্হায় কেউই সেদিন অশ্রু সংবরণ করতে পারছিলেন না। কোন প্রশ্ন নেননি সাংবাদিকদের কাছ থেকে নিজেদের ফিলিংসটুকু শুধু বলেছেন। মারা যাওয়ার আগে পল গ্রে এবং তার স্ত্রী অপেক্ষা করছিলেন তাদের প্রথম সন্তানের জন্য। শন ক্রেহানের বক্তব্যটুকু হুবহু তুলে ধরলাম,
"He was kind of the person in the band that really wanted everybody in the band to always get along and just concentrate on the band. He was a really great friend and a really great person. He's going to be sadly missed, and the world is going to be a different place without him."
সময় যাবে, স্লিপনট নতুন বেসিস্ট হয়ত একজন নেবে, ২নং পজিশনটাও হয়ত একদিন ফাঁকা থাকবে না। কিন্তু হ্যালোইন স্টাইলের পিগ মাস্ক পড়া কেউ কি আর কোনদিন একসাথে হবার জন্য তাড়া দেবে পুরান বন্ধুদের? অপেক্ষা করবে স্টুডিওতে পরিবারটির সবার একসাথে হবার জন্য? নাহ!
R.I.P Paul!
এম.পি.থ্রী. ডাউনলোড লিংক:
The Heretic Anthem, My Plague, Left Behind
Duality, Vermilon pt.2, Before I Forget, The Blister Exists, The Nameless
All Hope Is Gone, Psychosocial, Sulfur, Snuff, Dead Memories
***সিরিজের আগের ব্যান্ড ছিল পর্যায়ক্রমে Mudvayne এবং System of A Down