আগের পর্বের জন্য দেখুন, Click This Link
প্রারম্ভিক কথা: সবাই মেগাসিরিয়াল(কয়েক পর্বে আরকি) আকারে পোস্ট দেয় আমি বাদ যাব কেন? ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ের কিছু কথা নিয়ে শুরু করলাম এই সিরিজ, দেখা যাক শেষ করতে পারি কিনা। ভাল লাগলে, সেটাই আমার প্রাপ্তি, কারণ কলেজে ঢুকার সময়ও কেউ টের পায়নি, বার হওয়ার সময়ও না। শুরু হচ্ছে মেগাসিরিয়াল ঢাকা কলেজের ২য় এপিসোড, ঢাকা কলেজ:২; নবীনবরণ এবং ফার্স্ট ইয়ারের আরো কিছু মজার কথা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি আজ ৬ বছর হল। নবীনবরণে এটেন্ড করেছি মোট ৭টা, কয়েকটাতে নেপথ্যেও ছিলাম, অনেক মজা করেছি। কিন্তু ঢাকা কলেজের আমাদের ব্যাচে নবীনবরণ নিয়ে যে মজাটা আমি পেয়েছিলাম, সেই মজা আর কোথাও পাব না, ইয়ে... কেউ পাক, তাও চাইনা।
ফার্স্ট ইয়ারে, মাস খানেক ক্লাশ হওয়ার পর হঠাৎ একদিন দেখলাম নোটিশ বোর্ডে নবীনবরণের দিন লেখা। খুব এক্সাইটেড লাগল, সারা জীবন শুনেছি এই প্রোগ্রামের কথা, আজ আমার বেলায় হবে! গেলাম সেদিন সেজেগুজে (মানে ধোয়া জিন্স পড়ে, আমি জিন্স সাধারণত ৭/৮ বার পড়ে ধুই, মুটামুটি ২/৩মাস পরপর, সময়ের অভাবেই, তাছাড়া ময়লা হয়ও কম)। যেয়ে দেখি ক্লাশ হচ্ছে পুরাদমে, এবং আমি প্রথম দুই পিরিয়ড মিস করেছি। বুঝেন, কেমন লাগে! এর পরের ডেট পড়ল পরের মাসে, সেইদিনও সেম কেস। তবে ক্লাশ মিস যায়নি, তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছিলাম। এরকম আরো দুইবার ডেট দিল। থার্ড টাইম ধরা খেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, ঠিক করলাম ফোর্থ ডেটে প্রোগ্রাম হলেও যাব না। কপাল! এর পরের ডেট যেদিন পরল, আমার সেদিন প্রচন্ড জ্বর (১০৩-৪)। কলেজে গিয়েছিলাম দুপুরে কেমিস্ট্রি ল্যাব ছিল সেটায় এটেন্ড করতে। কলেজে ঢুকেই শুনি প্রচন্ড শোরগোল, ঢুকে দেখি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে - আমার সেই বহুল প্রতাশ্যিত নবীনবরণ! দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছিল, জ্বরের ঘোরে একপাশে দাড়িয়ে উপভোগ(!) করার চেষ্টা করতে লাগলাম। মজা কম পাইনি, একেতো কপাল চাপড়াচ্ছিলাম, এর মধ্যে দেখলাম নিম্নমানের কাঠের ফোল্ডিং চেয়ারগুলো ভেঙে অনেকেই পড়ে যাচ্ছে- আর হাসির কি রোল! সবাইকে রজনীগন্ধার একটা করে স্টিক দিয়েছিল, গান শুরু হতেই সবাই নিজ দায়িত্বে তা এলোপাথারি ছোড়া শুরু করে। একটা স্টিক যেয়ে পড়ে তৎকালীন প্রিন্সিপাল ম্যাডামের মাথায়, ম্যাডাম রেগে অনুষ্ঠানস্হল ছেড়ে চলে যান। গান গাইতে কারা কারা এসেছিল আজ আর মনে নেই, আর আমি আধ ঘন্টার বেশি ছিলামও না। প্রিন্সিপাল ম্যাডামের ঘটনাটাও পরেরদিন শুনেছি।
যাই হোক, আমরা বরিত(!) হলাম!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ফার্স্ট ইয়ারের আরেকটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল এবং এর রেজাল্ট। আমি এবং আমার এক ফ্রেন্ড (নাম বলছি না, দুঃখিত) পাশাপাশি বসে যে কয়টা পরীক্ষা দিয়েছি সব কয়টা জোস হয়েছে, কিন্তু যেগুলাতে একসাথে বসতে পারিনি, সেগুলা দুজনেরই মার্কস কম উঠেছে কম্পারেটিভলি! সবগুলাতেই পরীক্ষা হয়েছিল ৭৫এ, শুধু বাংলা, ইংরেজিতে ১০০। ৭৫০জন স্টুডেন্ট, মনে হয় ৭০০এর উপরে পরীক্ষায় বসেছিল, রেজাল্ট দেয়া হল, প্রথমে পাস/ফেল ফরমেটে। অর্থাৎ পাস যারা করেছে তাদের বিভাগ(১ম, ২য়, ৩য়) টাঙানো হয়েছিল। মোট ৯০জন প্রথম বিভাগ পেয়েছিলাম, মনে আছে এখনো। তবে ঘটনা অন্যখানে....
সাবজেক্ট অনেকগুলো, ডিপার্টমেন্ট আলাদা আলাদা, যেহেতু অনার্স লেভেলের কলেজ। ভূগোল বিভাগের এক টিচারের দায়িত্ব ছিল সব সমন্বয় করা, সেভাবেই রেজাল্টে বিভাগ বের করা হয়েছিল, এবং কন্ট্রোলারের দায়িত্বেও ঐ টিচার ছিলেন (মানে পরীক্ষার উপস্হিতি চেক করা, গার্ড ডিস্ট্রিবিউট করা হলগুলোতে, ইত্যাদি)। ওনার নাম আজ মনে নেই, তবে উনি তাঁর দায়িত্বে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছিলেন! রেজাল্ট টাঙানোর কয়েকদিন পর থেকে আমরা ডিপার্টমেন্টগুলোতে যেয়ে যেয়ে মার্কস জানা শুরু করলাম। খাতা দেখানো হয়নি, শুধুই মার্কস। ম্যাথের মার্কস দিতে অনেক দেরি হচ্ছিল, কারণটা বুঝতে পারছিলাম না কেউ। অনেকে বলছিল, ভুগোল বিভাগে নাকি রেজাল্ট হারিয়া গেছে, কেউ বলছিল ম্যাথের রেজাল্ট নাকি দেবেনা, কেউ বলছিল ভূগোলের ঐ স্যার নাকি কি ভূল করেছেন, ...ইত্যাদি। তারপর একদিন মার্কস ঝুলানো হল, ভূগোল বিভাগের সামনে..........
অদ্ভূত মার্কস! আমি পেয়েছি ম্যাথে ৬, আর আমার সেই ফ্রেন্ড পেয়েছে ১২! এখানেই শেষ না, অন্য বন্ধুরাও হিসেব করে জানালো যে যত আনসার করেছে তার থেকে নাকি ১২ করে কম পেয়েছে! আমার তো তাও হিসাব মেলে না, আনসার তো আর ১৮ করিনি এর ৩গূণের কাছাকাছি ৫৫ করেছি। কাকে বলব বুঝতে পারছিলামনা। এক ক্লাশমেট আবার শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, ম্যাথে ফেল করে ও ফার্স্ট ডিভিশন পায় কিভাবে? আমিই বা কি উত্তর দেবো, এত বাজে পরীক্ষা তো আমি দেইনি, সবাই জানে সেটা, আপনারাই বলুন ইয়ার ফাইনালেও ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রিতে লেটার পায় যে সে কিভাবে ম্যাথে ফেল করে....যাই হোক, দুর্জনের কথায় কান দিলামনা। আরেক ছেলে, অন্য সেকশনের, সেও ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া ইয়ার ফাইনালে, তার অভিযোগ আরো মজার, তার নম্বর নেই ম্যাথের মার্কস-শীটে, অথচ সে পরীক্ষা দিয়েছে। সে ঐ স্যারকে অনেক কষ্ট করে খুঁজে বের করে কমপ্লেইন করাতে স্যার তাকে বলেছিলেন, 'তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি পরীক্ষা দাওনি'। সে বারবার অভিযোগ করায় স্যার তাকে নিয়ে পরীক্ষার পার্সেন্টেজের শীট চেক করে দেখেন সে ছিল পরীক্ষায়। তখন স্যার যে উত্তরটা দিয়েছিলেন তাকে তা আমি এই জীবনে ভুলতে পারবনা 'তুমি তাহলে খাতা জমা দাওনি, খাতা নিয়ে হল থেকে চলে গিয়েছিলে। আমার কাছে এসেছ কেন?'
পরের পর্বগুলোতে পলিটিকসের কথা এসে পড়বে, নেগেটিভ সাইড তাই এখনো আনিনি। পরের পর্বে সেকেন্ড ইয়ারের কথা শুরু হবে, পড়ার আমন্ত্রণ রইল। আর আপনাদের কথাও শেয়ার করূন, প্লীজ। ধন্যবাদ, সবাইকে।