কাজী সাহেব বড়ই দেল-বান বান্দা। হুজুরের হুকুমের এক বিন্ধু হের ফের করেন না। কেনইবা করবেন। হাজার হোক হুজুর তাঁহার মত নগণ্য বান্দাকে কাজীর আসনে ফরমান করেছেন। কিতাব তিনি জানুন আর এলেম কালাম কলবে থাক বা না থাক হুজুর-জানের প্রতি তার নেকমান্দ খুলুসিয়াতের কথা কে না জানে। একদম দিলসে পেয়ার কারতা হ্যাঁয়। নিয়তের মধ্যে এতটুকুন গলতি নেহি পাতা হ্যাঁয়। কাভি নেহি।
বিবি সাহেবান গণ কে লইয়া কাজী সাহেবের দিন ভালোই গোজরান হইতেছিল। মাঝে মধ্যে কিলবিল করিয়া আমমোক্তার গিরি ফলানোতেও ভালোই বকশিস আসছিল। এসব তো হুজুরজান কে তোহফা। তিনি না দিলে এই অধমের দিকে কোন কাক পক্ষী ভুল করিয়া প্রকৃতির কর্মও করিত না। সেই বট তলার উকিল বাবু- এমন করিয়াই তো জীবনভর চলিয়া যাইত রে বাপু!
দিন বদলাইল। কাজী সাহেবের কপালেও ভাগ্য খুলিয়া আসিল। তিনি আর বট তলার উকিল বাবু রহিলেন না। হুজুর-জান তার জান- কোরবান করা দিলের খুবসুরত বকশিশ দিলেন। তিনি এখন বড় বিচারালয়ের বড় কাজী হইয়া গেলেন। লে হালুয়া। খা সালা। জীবনভর এখন তোর নামের আগে লেখা হবে ‘দেল-বান কাজী হুজুরে আলার একমাত্র স্নেহধন্য...।
ব্যটা মউতের পর এপিটাফে অনেক খেতাব পাবি। বুঝলি।
কাজী সাহেব বুঝে যান তার কি করা লাগবে। আর কোন হুকুম আহকাম তার উপর নাজেল হওয়া লাগে না। এক খানি সোবক তার দেলে গাঁথা আছে। নিজ গুনে তিনি তাহাকে তাবিজ বানাইয়া লইলেন। শুরু হল হুজুর জানের রেজামন্দি, দেলখুশি হাসেল করার সমস্ত কায় কারবার। মাঝে মাঝে কিছু কমবখত, নালায়েক সাম্বাদিক যে এসব নিয়া গোল পাকায় না তা অবশ্য নয়। কিন্ত হুজুরজানের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদে ও সব বাচ্চালোক কে দুরে গিয়া তালিয়া বাজাইতে পাঠাইয়া দিয়াছেন তিনি। অতএব কাভভি মুশকিল নেহি। সব বাচ্চালোক চোপ রাহে।
এই কাজী সাহেব একদিন স্বপ্নে দেখলেন হুজুর জানের ক্যাম্বা জানি লাগতাসে। কোন নালায়েক বকলম জানি হুজুর জান রে লইয়া স্ট্যাটাস মারছে। ঐ নালায়েক দোয়া মাঙ্গছে- হুজুর-জানের জানি রাইতের বেলা পেটো- বেরাম শুরু হয়।
কাজী সাহেব লাফাইয়া উঠিলেন। আবে হালায় কাহিনী কি? ঘরের মধ্যে তখন দেখেন শাহী ফরমান হাজির পঞ্জিকা। ঐ খানে পাইলেন- আসলেই এক নালায়েক এই কাম করছে। স্বপ্নের সাথে হুবহু মিল। আরে এই না হলে দেলে দেলে মিল। শরম লাগতাসে এট্টূ এট্টূ। মাগার সবভি ঠিক আছে!
আরে নালায়েক কামটা করলো কি? রাস্তার মধ্যে হুজুর-জানের হুকুম বরদাররা চলবে, খেলবে এটা তো স্বাভাবিক। ওরা গরু ছাগল চিনে। দেখলেই চিনে ফেলে। তাই তো ওদের কে হুজুর জানের খেদমত করতে দেয়া হয়েছে। এখন দুটো নাম করা কি জানি..., সাথে নাকি আরও তিনটা- ঐ হইল আর কি; পাঁচটাকে নাকি ওরা একদিন সাবাড় করে দিছে। আরে বাবা এরকম তো হয়-ই। আজরাইল আইলে তারে তো আর মানা করন যায় না! হোক না হয় তাদের নাম শুরু হইছে মি...মু বা তা...মা দিয়ে। আরে বুঝলাম তোরা না হয় এদের কে গুরু মানিশ। এখন আজরাইল আইছে- যা বেহেস্তে যা। ওখানে যেয়ে আবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস মারিস না!
বাহ কি ভালো রে তোদের গুরুরা। একদম রা করে না। কিন্ত হালা বেতমিজ, বেয়াকুফ-তুই কেনে স্ট্যাটাস মারলি। মারবি মার তাই বলে হুজুর-জানের বেরামোর দোয়া করি! সালার বেয়াক্কল। দেখাচ্ছি মজা!
কোতোয়াল কোথায়? কোথায় পেয়েদা। ধরে আন সালাকে। পাকড়াও সালেকো। ইত্না বেত্তমিজি হুজুর-জান কে লিয়ে! ধর শালারে। খাইছি তোরে!
ফরমান জারি হল। মাগার সালার বেত্তমিজের কপাল কা জোর! সালা ভেগেছে। তাও নাকি অনেক আগেই। এক্কেবারে সাত সমুদ্দ্র পাড়। ওর মায়ের কপাল রে বাবা।
কোতোয়াল ফিরে এলো! কাজী সাহেব কে জানালো- ‘মুলুকের ইধার উধার সব ধার ঘুরে এলাম হুজুর। কিন্তু ঐ বেয়াকুফ বেত্তমিজ এর কোন হদিস মিললো না। সে তো মুলুক ছেড়েই ভেগেছে হুজুর’।
কাজী সাহেব এবার তার দেলে হাত দিলেন। তাবিজ খানা দেখলেন। সব কুছ ঠিক হ্যাঁয়। ব্যস! শাহী ফরমান- “ওই বেত্তমিজ যে কিনা হুজুর-জান কে লিয়ে এহেন ইবিলিশি কর্ম করিয়াছে আবার ফরমান জারির পর ও দরবারে হাজির হয় নাই তাই দরবার এ হাজির না হওয়ায় উহাকে দামেশক মুলুকের জ্বলে, জঙ্গলে, স্থলে- যেথায় পাওয়া যাইবে সেই খান থেকেই পাকড়াও করিয়া আনিয়া ছয় মাস গরাদে ভরিয়া রাখা পূর্বক দরবারে হাজির করিতে রাজ আদেশ জারি করা হইল”।
পাদটীকাঃ এটা একটা স্রেফ রম্য। কোন জীবিত বা মৃত কারোর সাথের এর তিলমাত্র মিল নেই। যদিবা কোন মিল পাওয়া যায় তবে করজোড়ে ক্ষমা চাইছি।