আনিসুল হক আমার প্রিয় লেখকদের একজন। কেন জানি ওনার লেখা আমাকে খুব টানে। তার সবচে বড় কারন উনি আমাদের মনের কথা প্রকাশ করেন অসাধারন ভাষায়। তাই ওনার লেখা পেলে না পড়ে ওঠা হয় না।
প্রথম থেকে যখন প্রথম আলোর ভক্ত তখন থেকেই আমাদের সবচে প্রিয় কথা আর ভাললাগার জায়গা ছিল এবং যা এখন আসে তা হল প্রথম আলোর পেশাদার সাংবাদিকতা, প্রকৃত তথ্য আর বস্তুনিষ্ঠ উপস্থাপন। লেখার মধ্যে এক অদ্ভুত ধরনের সাবলীলতা আসে। যেকোনো খবর বা ফিচার পড়তে গেলে না পড়ে ওঠা যায় না। সেই ভাষা, সেই সংবাদ উপস্থাপন আর পাঠকের মন জুড়ানো রকমারি সব খবর নিয়ে যে পত্রিকাটি আমাদের আধুনিক সংবাদপত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সেটি প্রথম আলো।
আমার স্বল্প ভাষাজ্ঞান আর সাধারন ভাবনা থেকে যা বুঝি তার ফল হল প্রথম আলো না পড়লে দিনটাই যেন কেমন কেমন লাগে। শুরু থেকে বিশ্বাস করি পাঠক প্রিয়তা কাকে বলে তা প্রথম আলোই অর্জন করেছে আর দিন যত যাবে ততবেশি অর্জনের ঝুলিতে যোগ হবে।
এরপর আসল গনিত উৎসবের দিন। এমন অসাধারন প্রতিযোগিতা আর সৃষ্টিশীল কাজের জন্য প্রথম আলো হল আমাদের আরে প্রতিদিনের প্রয়োজন আর জীবনের আয়োজন। এভাবে দিন চলে। কোন সংবাদ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলে তা প্রথম আলোতে থাকবে না সেটা তো হয় না। সেই সাথে প্রথম আলো এমন সব হাড়ির খবর বের করে আনে যা প্রথম আলোকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। প্রথম আলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয় প্রথম আলো নিজেই।
এমন ভালো লাগার গল্পটার সাথে কিছু কষ্ট জড়িয়ে যায়। নানা কারনে আমাদের প্রিয় পত্রিকাটি বিভিন্ন সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু পাঠকরা ছিল প্রথম আলোর সাথে। যে পাঠকরা প্রথম আলোর সবচে বড় আপন সেই পাঠকের সাথে প্রথম দূরত্ব সৃষ্টি করে প্রথম আলো নিজেই। বহুজাতিক কোম্পানির দুনিয়া কাঁপানো ত্রিশ মিনিটের নাম করে চমৎকার অনুষ্ঠান আর তার পর পবিত্র শহীদ মিনারে পবিত্র শ্রদ্ধা পিশে ফেলা ঘটনার ফল অনেক পাঠককে কষ্ট দিয়েছে।
সব কিছু মিলেই পত্রিকা, পাঠকের গুঞ্জন, আলোচনার টেবিল, চায়ের কাপে আড্ডা। দিন যায় দিন আসে। কিন্তু সম্প্রতি সত্যি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছি। কারন যে পত্রিকাটি পড়ার পর আরেকটি কাগজ উলটে দেখব বা ব্রাউজ করব অন্য পত্রিকার ওয়েবসাইট- তা কখনও ভাবিনা। ভাবার প্রয়োজনও মনে করিনা। টেলিভিশন এ খবর দেখতে না পেলেও কোনদিন মনে হয়নি তথ্যের ভাণ্ডার থেকে দূরে থাকলাম। এই আত্মবিশ্বাস লালন করছি এবং করে আসছি। অনেকদিন গেছে বিবিসি শোনা হয়নি, টিভি দেখা হয়নি, কিন্তু পত্রিকা বেরিয়েছে আর প্রথম আলো পড়া হয়নি এমনটি খুব কম ঘটেছে।
সাম্প্রতিক নানা মন্তব্য, প্রথম আলোর সাথে সেভেন সিস্টার এর যোগাযোগ, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার মন্তব্য, তেল গ্যাস সহ নানা ইস্যুতেও যখন প্রথম আলোকে নিয়ে নানা মন্তব্য তাতেও কোন সমস্যা হয়নি। বিশ্বাস রেখেছি যা পড়ি তার উপর। কাজেই বিশ্বাস ভাঙার প্রশ্নই উঠেনা।
কিন্তু গতকালের ঘটনায় আসলেই অবাক হয়েছি। টেলিভিশনে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপকে পেটানো দেখে বেশ শঙ্কিতও হয়েছি। কোন বাড়াবাড়ির ফল ভালো হয়না একথা কেনা জানে। কিন্তু পুলিশ যা করেছে তাতে আশঙ্কা আর বেড়েছে। এভাবে দমন আর নিপীড়ন যেকোনো শাসকের করুন পরিনতি ডেকে আনে। খানিকটা আশাহত হয়ে একটা থাপ্পড়ের দাম কত হতে পারে সে সম্পর্কে এক্তা ছোটখাটো চিন্তাও করেছি। বন্ধুদের সাথে আলোচনা করেছি। ছাপোষা মানুষ, এর চে কি করব। লাঠি নিয়ে মাঠে নেমে দুদলকে মেরে তক্তা তো বানাতে পারবোনা। শুধু হায় হায় করতে হবে এদেশের ভবিষ্যৎ কি এনিয়ে চিন্তা করে। হরতাল চলবে, মানুষ কাজ পাবে না, গাড়ি চলবে না, অর্থনীতির চাকা বন্ধ হবে। নেতা নেত্রিরা হুঙ্কার ছাড়বেন। কে ভালো, কে কি করেছেন তার হিসেব ফলাবেন। ধরা খাবো আমরা। এক থাপ্পড় দেয়ার হুমকি দিয়ে যে আগুন জ্বালানো হল তা সহজে নিভবে বলে মনে হয়না।
তাই সকালে বসেছিলাম পত্রিকার জন্য। কিন্তু এবার সত্যি বিশ্বাসের কাঁটাটা একটু দুলে উঠলো। কেন জানেন? কারন খুব সোজা। প্রথম আলো এরকম লেজুরবৃত্তি করতে পারবে ভাবিনি। আসল ঘটনা জানার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্ত আজ প্রথম আলো যা প্রকাশ করেছে( সাত জুলাই,২০১১ এর পত্রিকা) তাতে আমি লজ্জিত। আর কিছু না হোক প্রথম আলো পাঠককে সত্যি জানাবে তা যার পক্ষেই যাক না কেন। কিন্তু সাংবাদিক বন্ধু বৃহস্পতিবারের পত্রিকায় কৌশলে সত্য গোপন করার চেষ্টা করেছেন।
প্রথম ছবি তিনটি দেখুন। একদম সোজা বোঝা যাছে মিঃ ফারুক গাড়ি ভাংতে ঢিল মারছেন। সেভাবেই লেখা হয়েছে। কিন্তু ঐ বিএনপি এমপির হাতে ছিল মুঠোফোন। কিন্তু ছবিতে বিষয়টা প্রকাশ্য ভাবে গোপন করা হয়েছে।
প্রথম পাতার চারটি ছবিতে স্পষ্ট যে প্রথম মিঃ ফারুক ঢিল মারলেন। পুলিশ তাকে ধরতে গেলেন আর তিনি পুলিশকে মেরে মাটিতে ফেলে দিলেন। এবার পুলিশ আইন নিজের হাতে তুলে নিল আর ফারুক কে সেইরকম ঝাল মশলা মেশান ওষুধ দিল। অতএব পুলিশ যা করেছে তা আইন মতই করেছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন- ‘ যেভাবে হারুন সাহেব রাস্তায় পড়ে গেলেন যা ছবিতে দেখানো হয়েছে যে ফারুক এর ধাক্কায় তিনি পড়ে গেছেন, সেটাতো সত্যি নয়। কারন টেলিভিশনের ফুটেজ দেখাচ্ছে হারুন সাহেব দৌড়ে গিয়ে ফারুকের কান বরাবর ঘুশি মারছেন। এরি মধ্যে ফারুকের কলার ব্যান্ড টেনে ছিড়ে ফেলেছেন মিঃ হারুন। সেই ঘুসি দিয়ে ফারুককে জাপটে ধরতে ব্যর্থ হারুন যে রাস্তায় পড়ে গেছে। বিষয়টা পরিষ্কার দেখা যাওয়া সত্তেও কেন আপনি এভাবে বিষয়টা গোপন করলেন?
এরপর মিঃ ফারুকের উপর যেভাবে পুলিশ হামলা করেছে তাকে স্রেফ অ্যাকশন বলে চালিয়ে দিলেন?
এবার আবার একটু পিছনে ফিরে যাই।
পিকেটিং করার সময় ধরলাম ফারুক হারুনের উপর হামলে পড়েছিল। তাহলে ওখানে যারা সাংবাদিক ছিলেন তারা কেন সেই ছবি পেলেন না? ফারুক হারুনের মারামারি হবে আর সামনে দাঁড়িয়ে একজন সাংবাদিক সেই ছবি তুলবে না- এটা কি বিশ্বাস করতে বলেন?
দেখুন হরতাল এই উপমহাদেশের কালচার। হরতালে পিকেটিং স্বাভাবিক একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যা সাধারণ মানুষ সবাই বিরোধিতা করে। পুলিশ এসময় পিকেটারদের ধরে পিটুনি দেয়। সব বিরোধী দল এটা করে আসছে। নিকট অতীত অন্তত তাই বলছে। কোন ঘটনারই বিচার হয় না।
হরতালে পুলিশ পিকেটারদের আটক করে। মারে। ধরে। অ্যাকশনের ভয় দেখায়। কিন্তু এসি বিপ্লব সরকার যে অ্যাকশনের কথা বললেন তা আসলে কি? সেটা অবশ্য তার পরে যে অ্যাকশন চালানো হয়েছে তা দেখেই স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে তিনি মিঃ ফারুক কে কোন অ্যাকশনের ভয় দেখিয়েছেন।
আমার প্রশ্ন- মিঃ বিপ্লব সরকার যে মিঃ ফারুক কে থাপড়ানোর হুমকি দিলো, শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে যে ব্যবহার করলো, সেটা কেন সাংবাদিকবন্ধু উল্লেখ করলেন না? কিন্তু তিনি যা করলেন তাতে সাংবাদিকতা করেছেনা না পুলিশের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন সেটা বুঝলাম না। কারন তিনি লিখেছেন-
“সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ফার্মগেট এলাকায় গিয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক রাস্তার মাঝখানে বসে পড়ে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে তাঁরা পুলিশকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন”।
সাংবাদিকতায় যদি তথ্য যাচাই করে লেখা না হয় তাহলে গুজব আর সংবাদের মধ্যে কি পার্থক্য থাকবে? জানতে চাই আপনি কি প্রথম আলোর সংবাদের মানের ক্ষতি করার জন্য এই কাজ করেছেন?
এরপর আরো বিব্রত হলাম মিঃ। হারুনের আহত হবার খবর পড়ে। “বিরোধীদলীয় সাংসদদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুনুর রশিদও আহত হয়েছেন”।
জানতে পারিকি এই পুলিশ কর্মকর্তা যে দৌড়ে গিয়ে ঘুশি মারল সে কতটুকু আহত হয়েছে আর তার কি কি চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এটা ছিল স্রেফ পুলিশের মনগড়া ক্রস ফায়ারের কাহিনির মত। এবং বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে।
আবার দেখুন সাংবাদিক বন্ধু আহতদের তালিকায় মিঃ হারুনের নাম এবং ফারুকের নাম এক সাথে রেখেছেন। বেশ কায়দা করেই কি আপনি মিঃ হারুনকে মিঃ ফারুকের সমপর্যায়ের আহত দেখালেন না! বলিহারি আপনার কৌশলের! কথাটা বলতাম না যদি আপনি ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, চিফ হুইপের মাথায় ১১টি সেলাই দেওয়া হয়েছে’- এই লাইনটা না লিখতেন। দেখুন আপনার দাবি শব্দটার নিচে আমি দাগ দিয়েছি। সবাই জানে যার কথার বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে সেখানে গণমাধ্যম দাবি শব্দ ব্যবহার করে। আপনি মির্জা ফখরুলের কথাটাকে দাবি বলে চালিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের কথাকে সুস্পষ্ট তথ্য (প্রথম আলোকে বলেন) হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। অথচ আপনি সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সাথে কথাও বলেন নি মিঃ ফখরুল সত্যি বলেছেন কিনা যাচাই করার জন্য। উলটো তার কথার বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। এটা করে কি পাঠককে ঠকান নি?
আপনি আবারো পাঠককে ঠকিয়েছেন। তার জন্য আপনি চমৎকার একটি কৌশল নিএছেন। প্রথমে পুলিশের কথাটা খেয়াল করুন- “তবে পুলিশ দাবি করেছে, ফারুক পুলিশ সদস্যদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং পুলিশ সদস্যদের মারধর করেন”।
‘সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ফার্মগেট এলাকায় গিয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক রাস্তার মাঝখানে বসে পড়ে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে তাঁরা পুলিশকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন’।
একবার দাবি বলে সন্দেহ সৃষ্টি করে পরে বিষয়টা খোলাসা করেছেন যে পুলিশ যা বলেছে সত্য বলেছে। অথচ সুস্পষ্ট শুনেছি সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তিনি শুয়োরের বাচ্চা বলে আগে গালি দিয়েছেন। ( ফুটেজ দেখুন)।
কে কাকে মারছে তাও সবাই দেখেছে। কিন্তু পুলিশের অবান্তর, প্রকাশ্য মিথ্যাকে আপনি একবারও নির্দেশ করেন নি। কেন?
সাংবাদিক বন্ধু, এবার ভালো করে বিপ্লব সরকার এবং মিঃ ফারুক এর মধ্যে বাক বিতণ্ডা লক্ষ করুন। মিঃ ফারুক যে ভাষায় মিঃ বিপ্লবকে ‘ ধুরো থো তর অ্যাকশন’ বলেছেন তাতে সবাই বলছেন যে তিনি প্রথম পুলিশকে উস্কে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সবাই তাই বলেছেন। পুলিশও তাই বলেছে। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে মিঃ ফারুক যখন গাড়ির দিকে তেড়ে যাচ্ছেন তখন মিঃ বিপ্লব তাকে বলছেন- ‘গাড়িতে হাত দিলে কিন্তু অ্যাকশনে যাবো’।
মিঃ ফারুক যেভাবে তেড়ে যাচ্ছেন তাতে স্পষ্ট বোঝা যাছে এভাবেই পিকেটাররা আমাদের জানমালের ক্ষতি করে, গাড়ি পোড়ায়, সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এই ঘৃণ্য কাজ কে সবাই ঘৃণা করে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর এখানে কান থাকে বন্ধ আর চোখ থাকে অন্ধ। তারা জীবনেও মানুষের সেই আক্ষেপ আর কষ্টের কথা না পারেন শুনতে না পারেন দেখতে।
এই অবস্থায় পুলিশের দায়িত্ব জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। পুলিশের কাজ ছিল মিঃ ফারুক যখনই তেড়ে যাচ্ছেন হয় তাকে বিরত রাখা নয়ত তাকে আটক করা। পুলিশের ভাষ্য -এ সময় পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে তাঁরা পুলিশকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন- পুলিশ সরিয়ে দেয়ার জন্য কি বলছে- “গাড়িতে হাত দিলে কিন্তু অ্যাকশনে যাবো’
অ্যাকশন কি? – মিঃ ফারুকের চেহারা দেখুন- ম্যানহোলের পাশের ছবিটাতে। পিটুনি খাওয়ার পর।
এই অ্যাকশনের হুমকি একজন পুলিশ অফিসার কি দিতে পারেন কোন পিকেটারকে? পুলিশের নিয়ম নীতি কি তাই বলে? যাকে হুমকি দিচ্ছেন তিনি একজন নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য। তাকে কেন পুলিশ আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে হুমকি দিলো? তাকে সাথে সাথে গ্রেপ্তার করতো। কোর্টে চালান দিত। কিন্তু পুলিশ তো একজন সাধারণ নাগরিক কেও হুমকি দেবার অথরিটি রাখেনা। সেটা অবশ্যই বেআইনি। বে আইনি কাজটা করার কারনে পুলিশ কি নিজেই আরেক জনকে আইন ভাঙতে উস্কে দিলো না? চাকুরি বিধি লঙ্ঘন করে পুলিশ এই কাজ কেন করলো?
সংসদ সদস্যদেরকে পুলিশ ‘স্যার’ বলে নিয়ম অনুযায়ী। এখানে পুলিশ কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে সে রীতির তোয়াক্কা না করে সোজা হুমকি দিলেন। ‘অ্যাকশন’ নেবেন। প্রশ্ন কে কাকে উস্কে দিলেন?
ফুটেজ আবার খেয়াল করুন। হুমকি পাল্টা হুমকি কোন দিকে মোড় নিলো। পুলিশের গালিগুলো খেয়াল করুন। একজন সংসদ সদস্যকে নয় একজন সাধারন মানুষকেও পুলিশ এইভাবে গালি দেবার অধিকার রাখেনা। এই অবস্থায় মিঃ ফারুক থাপ্পড় খেতে চেয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী যদি এভাবে একজন জন প্রতিনিধিকে গালি দিয়ে দাঁত ফেলে দেবার হুমকি দেয় তাতে ঐ জনপ্রতিনিধির ( সে যে দলের হোক না কেন) কি করা উচিত? যদি আইন প্রয়োগকারী , যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই কাজের জন্য, সে যদি এতটা ঔদ্ধত্য দেখায় তাহলে কি করা উচিত সেটা মিঃ ফারুক যা বুঝেছেন করেছেন। কিন্তু বারবার যে হুমকি দিয়েছে ‘অ্যাকশনে যাব’-এবং শেষ পর্যন্ত তারা অ্যাকশনে গিয়েছেন।
অ্যাকশনে এসেছেন মিঃ হারুন প্রথমে। যখন সংসদ সদস্যরা সামনের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনও দেখা যাচ্ছে মিঃ হারুন মিঃ ফারুক কে পাগল বলে চলেছেন। এরপর দৌড়ে গিয়ে ঘুসি মেরেছেন। ফারুক কে জাপটে ধরতে গিয়ে নিজেই চিত হয়ে পড়ে গেছেন। এরপর সব পুলিশ এক সাথে শুরু করেছে অ্যাকশন। ফারুকের মাথায় লাঠির বাড়ি, বুটের লাথি, গালি সবি জুটেছে। মাথা, কপাল ফেটেছে, রক্ত ঝরেছে। পালাতে চেয়েছেন এবং আবারো বেধড়ক মার খেয়েছেন। পুলিশ তার পরা গেঞ্জি খুলে নিয়েছে। চ্যাংদলা করে গাড়িতে উঠানোর আগেই গাড়ি টান দিয়েছে। ফলে কনক্রিটের উপর পড়ে গেছেন ফারুক। ( ফুটেজ) অ্যাকশন সাকসেসফুল!
কিন্তু সাংবাদিক বন্ধু- আপনি যা দেখেছেন আর যা লিখেছেন-
‘এ সময় পুলিশ জয়নুল আবদিনের দিকে তেড়ে যায় এবং ‘পাগল পাগল’ বলে চিৎকার করতে থাকে। আরও কয়েকজন পুলিশ তাঁর দিকে এগিয়ে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং তিনি পড়ে যান। কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে লাথি মারেন এবং তাঁকে ধরে টানাটানি করতে থাকেন। এ সময় ফারু কের গেঞ্জি খুলে যায়’।
‘এ সময় পুলিশ আবার এগিয়ে এলে ফারুক আত্মরক্ষায় ন্যাম ভবনের দিকে দৌড় দেন। এরপর পুলিশ তাঁর পিছু নিয়ে আবার সেখানে গিয়ে ফারুকসহ সাংসদদের ওপর হামলা চালায়।
পুলিশ ফারুককে চ্যাংদোলা করে পুলিশের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন’
তথ্য বিকৃত করার উদ্দেশ্য কি?
আমার মতামতে অসঙ্গতি থাকলে শুধরে নেবার প্রত্যশা করি।