দেখো একদিন শিউলি ফুলের মালা নিয়ে ক্যাম্পাসে আসবো। আরে ধুর- এ যুগে কেউ শিউলি নিয়ে প্রেম ভালবাসা করার স্বপ্ন দেখে নাকি। যত্তসব বোকার দল। আরে না। আমি তো একদিন চাকর হবো। খাঁটি এক নম্বর বিসিএস চাকর। এই চাকর হতে গেলে কত খাটুনি। এটা পড়ো, সেটা পড়ো, এটা ঘাঁটো, সেটা জেনে নিও- বাংলাদেশের নদ নদীর সংখ্যাটা উলোট পালোট বলোনা কিন্তু। ধুর। লাইব্রেরী আর ভালো লাগেনা। চল একটা চা খাই। বেলালের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাবো। তারপর সোজা হল। আবার মাঝখানে ডিপার্টমেন্টে যেতে হবে। স্যারের ক্লাস হবে। আজকে সকালে বাস মিস। আরামের ঘুম সব ভ্যাজাল পাকিয়েছে। আর কোন চান্স নেই। নির্ঘাত আজ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ক্লাস মিস! ধ্যাত । রেনেসান্স আসলেই ঠিকমত মাথায় ঢোকেনা ।!
এরপর লাল বাসে লেখা -ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পেছনে ছুট। পরেরটা যেন মিস না হয়। । আল্লাহ আমার কথা শোনো। দোহাই তোমার।
আজ মায়ের সাথে কথা হল। মা'রা কেমন যানি বোকা বোকা হয়। সব কিছু কম বোঝে। আমার কি এখনও বিয়ের বয়স হইছে। লজ্জা লাগেনা! এখনও অনার্স ফাইনালটাই দিতে পারলাম না। অন্তত ফাইনাল টা দিই। ধুর! আমার ঘরে নাকি চাঁদের মত লক্ষী বৌ আসবে। আসলে ভালো। অনেক ভালোবাসবো।
আবার বিরাট নগরীর থেমে থাকা যানবাহন। রোদের সাথে ঘামের মিতালি। বাবা হয়তো এবার কিছুটা ওভারটাইম পাবেন। আমার টিউশনি থেকে আসছে রোজায় আব্বাকে একটা আর মাকে একটা কিছু দিতেই হবে। আর কতদিন............
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র সোহেল। শেষ সেমিস্টার চলছে। আর ক'টা দিন পর ফাইনাল । তারপর জীবনের আরেক অধ্যায় শুরু। হয়তো একদিন কোন জায়গার বড় কর্তা হবে। স্বপ্ন দেখতে তো আর বাঁধা নেই।
কিস্তু কোথায় এসে যেন জীবনের সব আয়োজন থেমে যায়।
এখানে সব নিস্তব্ধ। চারপাশের চেনা শব্দ যেন এক অদ্ভুত গোঙানি দিয়ে উঠে পালাতে চাই। চেনা জীবনের সংগ্রাম যেন তাচ্ছিল্য করে ওঠে- 'স্বপ্ন তোমার জন্য নয় সোহেল'।
হাসপাতালের সাদা ধবধবে বিছানা যেন আর এক মুহুর্ত সোহেলের ভার বইতে চায় না। পৃথিবীটা অনেক নিষ্ঠুর সত্যি। তবে এতটা কি? সোহেলের নিজের ও জানা নেই।
আস্তে আস্তে আসে সেই সময়। হাতের তালুতে পানি জমে এসেছে। ডাক্তার সাহেব আজ আর আসবেন না জানিয়েছেন। নার্স আসছে মাঝে মাঝে। কিন্তু তার চেহারায় কেমন জানি একটা অপরিচিত চিহ্ন। তবে কি সেই সময় খুব কাছে। সাদা বিছানার পাশে বসে বোকা মা একা একা কেঁদে চলেছেন। সামান্য আয়ের বাবা ওভারটাইমের শ'দুয়েক টাকা নিয়ে ঢাকা নগরীর জ্যাম ভেঙে ক'টা ফল কিনে নিয়ে আসবেন সন্তানের পাশে- যে অনাগত দিনের সব স্বপ্নের কিনারা।
কিন্তু নিয়তি তো আর সব কথা মানেনা। চোখের জলের দাম কতটুকুই বা আর! ক'ফোঁটা রক্তে এক ফোঁটা চোখের জল হয় তার হিসেব করে লাভ কি? টাকা যোগাড় হয়নি। এটাই এখন নির্মম সত্যি। দুরারোগ্য ব্যাধি -Chronic Glomerulonephritis with Hypertension with End Stage Renal Failure on Haemo-dialysis -এ আক্রান্ত। সোহেলের দুটো কিডনিই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
এখন হয়তো সাদা বিছানার ওপর আরেকটা সাদা চাদর উঠে আসবে। ভেতরে চাপা পড়ে যাবে সোহেল। মায়ের চোখ থেকে সব আলো নিভে যাবে। ৩০ লাখ টাকা যোগাড় না হবার একটা তীব্র আর্ত চিতকার। কেউ শুনতে পাবেনা ।বাবা এসে দেখবে সোহেল এখন সব স্নেহ আর মায়ার বাইরে।
বেডের পাশে দাঁড়ানে বন্ধুর পকেটে দুমড়ানো এক মাসের টিউশনির তিন হাজার টাকা। ' সোহেল- আমার কাছে আর নেই। তুই রাগ করিস না । কেমন? বিশ্বাস কর- বন্ধু! তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি'।
সোহেলের জন্য ভালোবাসা-
একাউন্ট নং-৩৪১১৫২৭৫
জনতা ব্যাংক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ।
যোগাযোগ বন্ধু-
জুনায়েদ :০১৬৭১১৮১৮৪৫
মিজানুর রহমান : ০১৯১৪৩৭২৪৭৩
জগদীশ: ০১৭১০০২৯১৪৮
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১১ ভোর ৪:২৪